বিজ্ঞাপন

সংলাপের আহ্বানকে ড. কামাল স্বাগত জানালেও বিএনপিতে নানা মত

January 14, 2019 | 3:14 am

।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: চলমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপ আহ্বানের সিদ্ধান্তকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন স্বাগত জানালেও বিষয়টিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে জোটির প্রধান শরিক দল বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বানকে দলটির সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার বিশ্লেষণ করছেন। তাদের মতে, সংলাপের এই আহ্বান ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কৌশল কি না—তা আগে ভেবে দেখতে হবে। সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা ছাড়া কেবল সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গণভবনে যাওয়ার পক্ষেও নন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

রোববার (১৩ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সভার আগে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শেখ হাসিনা দেশের সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এখন নির্বাচন শেষ হয়েছে, আমাদের নেত্রী গতকাল ওয়ার্কিং কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ বৈঠকে বলেছেন, যাদের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে, তাদের আমন্ত্রণ জানাবেন।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্যের পর রোববার সংবাদ মাধ্যমকে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘কার্যকর পথে আরেকটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিলাম। এখন প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংলাপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করি এবং নিশ্চিতভাবেই এটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত।’

বিজ্ঞাপন

ড. কামাল আরও বলেন, ‘সংলাপের আমন্ত্রণ পেলে আমাদের জোটের নেতারা একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। সেখানে আলোচ্য বিষয় কী হতে পারে, তা নির্ধারণ করা হবে।’

আমন্ত্রণ পেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইতিবাচক সাড়া দেবে বলেও ইঙ্গিত দেন ড. কামাল হোসেন। দেশের মানুষের জন্য এই সংলাপের ফল ইতিবাচক হবে বলে মনে করেন তিনি।

কিন্তু বিএনপি নেতারা একটু বুঝে-শুনে পা ফেলতে চান। এই আহ্বান আরেকটি রাজনৈতিক কৌশল কি না—সেটা ভেবে দেখতে চান তারা। দলটির কোনো কোনো নেতা বিষয়টি কালক্ষেপণ হিসেবে দেখছেন। তারা বলার চেষ্টা করছেন, সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা ছাড়া কেবল সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গণভবনে যাবে না বিএনপি। কেউ কেউ বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আর সংলাপ নয়।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো মেসেজ আমার কাছে নেই। সুতরাং এ ব্যাপারে কোনো কিছু বলতে চাচ্ছি না।’

আলোচনায় বসার আগে এর এজেন্ডা সম্পর্কে জানার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগে আমাদের জানতে হবে সংলাপের এজেন্ডা কী? কেবল সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গণভবনে যাওয়ার কোনো কারণ দেখি না। আলোচনা বা সংলাপের টেবিলে বসতে হলে আগে এজেন্ডা ঠিক করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বসার আগে নিজেদের দলীয় ফোরামে আলোচনার ওপর জোর দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। সরকার পক্ষ থেকে যদি সংলাপের জন্য ডাকে, তাহলে দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সেখানে যাওয়া যেতে পারে।’

জানতে চাইলে সংলাপ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না। যা বলার দলের মহাসচিব বলবেন।’

বিজ্ঞাপন

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সংলাপ আহ্বান আরেকটি রাজনৈতিক কৌশল কি না— সেটা আমাদের ভেবে দেখতে হবে। আমি তো মনে করি, এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপির আর কোনো সংলাপে বসা উচিত হবে হবে না।’

উল্লেখ্য, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর ৮ জানুয়ারি ড. কামাল হোসেনের বাসায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে তিনটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া।

এর তিন দিন পর ১২ জানুয়ারি গণফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সংকট নিরসন ও দ্রুত আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে।’

ড. কামাল হোসেনের এই বক্তব্যের পরের দিন রোববার ওবায়দুল কাদের জানান, নির্বাচনের আগে যাদের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে, তাদের আবারও সংলাপের আমন্ত্রণ জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/এজেড/এমএনএইচ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন