Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আদালতে রিট করবেন সাক্কু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৬ জুন ২০২২ ০১:১০

কুমিল্লা থেকে: কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের (কুসিক) ফলাফল প্রত্যাখান করেছেন এই সিটির টানা দুই মেয়াদের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। নিজের হ্যাটট্রিক জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী সাক্কু বলছেন, পরিকল্পনা করে তাকে ৩৪৩ ভোটে হারানো হয়েছে। আর এই অভিযোগে তিনি আদালতে রিট করে আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

বুধবার (১৫ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও ফলাফল পরিবেশন কেন্দ্র থেকে এই সিটি নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন কুসিক নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলে জানানো হয়েছে, ১০৫টি কেন্দ্রে রিফাত নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল হক টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। আর তৃতীয় স্থানে থাকা নিজাম উদ্দিন কায়সার পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।

নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, গুটিকয়েক কেন্দ্রের ফল আটকে রাখা হয় পরিকল্পিতভাবে। আমি হারিনি। কিন্তু আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার হিসাবে ৯৮০ ভোটে এগিয়ে ছিলাম। শেষ মুহূর্তে ফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে। ষড়যন্ত্র করে আমাকে হারানো হয়েছে। ভোট পুনরায় গণনার জন্য আমি আদালতে রিট করব, আইনি ব্যবস্থা নেব।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

সাক্কু আরও বলেন, ইভিএমে ভোটগ্রহণ হলো। কিন্তু ফল ঘোষণা করতে এত দেরি হলো কেন? ১০১ কেন্দ্রের ফল ঘোষণার পর বিশৃঙ্খলা ও হট্টগোল তৈরি করা হলো কেন? তখন পর্যন্ত আমি ভোটে এগিয়ে ছিলাম। পরে চার কেন্দ্রের ভোট নিয়ে ষড়যন্ত্র করে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

কুমিল্লা সিটির সাবেক এই মেয়র বলেন, নির্বাচন কমিশন তার প্রথম পরীক্ষায় বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলাফল ঘোষণা দেরি করে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে পরিকল্পিতভাবে আমাকে হারানো হয়েছে। আমি এই ফলাফলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেব।

সাক্কুর ছোট ভাই কাইমুল হক রিংকুও আদালতে রিট করার কথা বলেন। তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা যখন চারটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা বাকি রেখে টয়লেটে যাওয়ার কথা বলেন, আমরা এর বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু তিনি টয়লেটে যাওয়ার অজুহাতে পেছনে গিয়ে ফোনে কথা বলে এসছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিট করব।

এর আগে, বুধবার রাত ৮টার দিকে মনিরুল হক সাক্কুর সমর্থকরা শিল্পকলা একাডেমির দিকে আসতে থাকেন। এসময় মনিরুল হক সাক্কুর নামে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

এর কিছু সময় পর কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী জানান, এখনো কিছু কেন্দ্রের ফলাফল বাকি আছে। কেন্দ্র থেকে ফলাফল আসতে দেরি হওয়ায় চূড়ান্ত ফলাফল জানানো সম্ভব হচ্ছ না। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ফলাফল জানানো হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার এমন বক্তব্যের পর এসময় ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাক্কুর সমর্থকেরা। তারা দ্রুত ফলাফল ঘোষণার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় পুলিশের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এরপরই শিল্পকলা একাডেমিতে উপস্থিত হন মনিরুল হক সাক্কু।

আরও পড়ুন-

রাত ৮টা ৩০ মিনিটের দিকে মনিরুল হক সাক্কু তার নেতাকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করার মঞ্চের সামনে বসে পড়েন। আধা ঘণ্টা পর রাত ৯টার দিকে শিল্পকলা একাডেমিতে প্রবেশ করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের সমর্থকরা। এসময় তারা ফলাফল ঘোষণা করার মঞ্চের সামনে প্রবেশ করার চেষ্টা করলেও পুলিশের বাধার মুখে সেখানে যেতে পারেননি।

পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী নির্বাচনের চূড়ান্ত বেসরকারি ফল ঘোষণা করেন। তিনি বেসরকারিভাবে আরফানুল হক রিফাতকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

এর আগে, বুধবার (১৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট হয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে। ১০৫টি কেন্দ্রের সবগুলোতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) দিয়ে ভোট নেওয়া হয়েছে। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিক থেকে ফলঘোষণা শুরু হয়।

ফল ঘোষণার শুরু থেকেই মনিরুল হক সাক্কু ও আরফানুল হক রিফাতের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল। নতুন নতুন কেন্দ্রের ফল যোগ হতেই কখনো এগিয়ে যাচ্ছিলেন রিফাত, কখনো এগিয়ে যাচ্ছিলেন সাক্কু। সবশেষ ১০১ কেন্দ্রের ফলে সাক্কুই এগিয়ে ছিলেন ৬২৯ ভোটে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সবশেষ ঘোষিত ফল বলছে, শেষ চারটি কেন্দ্রে সাক্কুর তুলনায় ৯৭২ ভোট বেশি পেয়েছেন রিফাত।

কুমিল্লা সিটির এবারের নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয়ের পরিকল্পনায় প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলেন মনিরুল হক সাক্কু। এই সিটির আগের দুই নির্বাচনেই তিনি মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছিলেন— একবার স্বতন্ত্র এবং একবার বিএনপি প্রার্থী হিসেবে। এবারে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিলেও সাক্কু প্রার্থিতা বহাল রেখেছিলেন। সে কারণে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি নিজে অবশ্য দাবি করেন, দল থেকে বহিষ্কারের আগেই তিনি পদত্যাগ করেছিলেন।

সাক্কু বারবারই বলে আসছেন, সিটি করপোরেশন হওয়ার আগেও কুমিল্লা পৌরসভায় তিনি মেয়র ছিলেন। এরপর টানা দুই মেয়াদে কুমিল্লা সিটির মেয়র হয়েছেন তিনি। তাকেই ফের কুমিল্লাবাসী মেয়র হিসেবে বেছে নেবেন বলে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি।

এদিকে, আরফানুল হক রিফাতের এটিই প্রথম কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এই নির্বাচনে দলের আরও ১৩ জন আগ্রহী মনোনয়প্রার্থীর সঙ্গে তিনিও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। দল থেকে শেষ পর্যন্ত তাকেই কুমিল্লায় নৌকা প্রতীকের টিকিট দেওয়া হয়। সে হিসাবে প্রথম নির্বাচনেই বাজিমাত করলেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের এই নেতা।

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

কুমিল্লা সিটি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন কুমিল্লা সিটি নির্বাচন মনিরুল হক সাক্কু

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর