বিজ্ঞাপন

‘ক্ষুদে ট্রাফিক’দের হাতে আটক পুলিশ-সরকারি কর্মকর্তার গাড়ি

August 2, 2018 | 10:11 pm

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: টানা পঞ্চম দিনের আন্দোলনেও গাড়ির লাইসেন্স চেক করেছে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষায় যেসব গাড়ির কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, তাদের গাড়ি আটকে দেয় শিক্ষার্থী। বিপরীতে যাদের কাছে দু’টি কাগজই পাওয়া গেছে, তাদের গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা বলছে, যাদের গাড়ির কাগজপত্র পাওয়া যায়নি তাদের অধিকাংশই ছিল পুলিশের সার্জেন্ট, অপরাধ বিভাগ (সিআইডি), গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, উপসচিব, যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ব্যক্তি। এ ছাড়া, কিছু গণমাধ্যমের গাড়িরও লাইসেন্স পাওয়া যায়নি।

আগের চার দিনের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবারও (২ আগস্ট) রাজধানীর বেইলী রোড, শান্তিনগর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স এলাকায় সকাল থেকে অবস্থান নেয় আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

দুপুর ১২টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকে বেইলী রোডের দিকে যাওয়ার রাস্তার বাম পাশে একটি গাড়িকে ঘিরে বিশাল জটলা দেখা যায়। সামনে গিয়ে দেখা যায়, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কামরুল ইসলামের গাড়ি আটকে দিয়েছে ছাত্ররা। এ সময় উপসচিব গাড়িতেই বসেছিলেন।

শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, গাড়ির কোনো কাগজপত্র নেই। ড্রাইভারের কোনো লাইসেন্স নেই। তাই গাড়িটি সাইড করে রাখা হয়েছে। এ সময় ছাত্ররা গাড়ির সামনের গ্লাসে ও বডিতে মার্কার পেন দিয়ে লিখে দেয় ‘ভুয়া’। এ ছাড়াও একটি কাগজে ‘সচিবের গাড়ির মেয়াদ উত্তীর্ণ চার বছর আগে’ লিখে তা গাড়ির গ্লাসে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

এ সময় উপসচিব কামরুল ইসলামের কাছে গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভারের লাইসেন্স না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে তিনি প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় গাড়িতে অবস্থান করার পর তিনি পরে গাড়ি রেখেই চলে যান।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, একই সময়ে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান ঢাকা মেট্রো-অ ১১-১৩৫০ নম্বরের গাড়ির কাগজপত্র না থাকায় গাড়িটি আটকে দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেলের দিকে গাড়ির চাকার হাওয়া ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় গাড়িতে অবস্থান করা পাঁচ-ছয় জন পুলিশ সদস্য দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাড়িতেই বসে থাকেন।

গাড়িতে কর্তব্যরত এক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভাই, সারাদিন কিছু খাইনি। গাড়ি রেখে কোথাও যাওয়া নিষেধ। তাই গাড়িতেই অবস্থান করছি।’

একই অভিযোগে বেইলী রোড ও রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ‘জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯’ লেখা পুলিশের একটি বড় বাস, পুলিশের আরও দুইটি গাড়ি ও পুলিশ সার্জেন্ট ও পুলিশের বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল দিনভর আটকে রাখা হয়।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়াও, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় বেইলি রোডে মন্ত্রণালয়ের পরিবহন পুলের কয়েকটি গাড়ি, এনএসআইয়ের একটি মাইক্রোবাস, বিভিন্ন চ্যানেলের তিনটি মাইক্রোবাস এবং প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার দুইটি মোটরসাইকেল সন্ধ্যা পর্যন্ত গাড়িগুলোকে রোডে সাইড করে রাখাতে বাধ্য করা হয়।

এ বিষয়ে আন্দোলনরত নটরডেম কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সজীব সারাবাংলা’কে বলেন, আমরা আজ যেসব গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র না থাকার কারণে অটকে দিয়েছি, তাদের ৬০ শতাংশই পুলিশ, সিআইডি ও ডিবির গাড়ি। বাকি ২০ শতাংশ গাড়ি সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার। এদের মধ্যে রয়েছেন সচিব থেকে সহকারী সচিব পর্যন্ত বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা। এসব গাড়ির কোনোটির গাড়ির কাগজ নেই, আবার কোনোটির কাগজ থাকলেও ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই।

বাকি গাড়িগুলোর মধ্যে বিচারপতি থেকে শুরু করে বিচার বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তা, গণমাধ্যমের গাড়িও রয়েছে।

অন্যদিকে, পুলিশের গাড়ির কাগজপত্র না থাকা প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, সব পুলিশেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। যেহেতু পুলিশ নিজে লাইসেন্স চেক করেন, তাই হয়তো তারা অনেক সময় লাইসেন্স সঙ্গে রাখেন না। আবার অনেক পুলিশের লাইসেন্স ডিএমপিতে রাখা আছে।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন