বিজ্ঞাপন

বিএনপি ছাড়া নির্বাচন নয়, ২০১৮ গণতন্ত্রের বছর: খালেদা

January 2, 2018 | 8:24 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: 

বিজ্ঞাপন

বিএনপিকে বাদ দিয়ে আগামীতে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না সাফ জানিয়ে দিয়ে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘২০১৮ সাল হবে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের বছর।’

ছাত্রদলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘সারাদেশে বহু ধরপাকড় হয়েছে। আপনারা (সরকার) যদি মনে করেন, আমাদের লোকজনদের ধরে নিয়ে যাবেন, তারপরে নির্বাচন ঘোষণা করবেন আর নির্বাচন হবে— সেটা আর হবে না। ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন এ দেশে আর হবে না। বিএনপি সব চেয়ে বড় পার্টি। তাদেরকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। ২০১৮ সাল গণতন্ত্র ও উন্নয়নের বছর হবে।’

বিজ্ঞাপন

দেশের মানুষ পরিবর্তন চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। ক্ষমতায় থাকার জন্য পার্লামেন্ট রেখে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এই পার্লামেন্ট ভেঙে নির্বাচন দিতে হবে। পার্লামেন্ট রেখে নির্বাচন হবে না, শেখ হাসিনার অধীনেও নির্বাচন হবে না।’

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএানপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করবই। কোনো অবস্থাতেই আমাদেরকে নির্বাচনের বাইরে রাখা যাবে না। কিন্তু সেই নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, শেখ হাসিনার অধীনে নয়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন নেই, মানুষের কথা বলার অধিকার নেই। এক ব্যক্তির কথায় চলছে দেশের সব কিছু।  আসলে কোনো কিছুই চলছে না। দেশ এখন অচল। দেশ সামনের দিকে না গিয়ে পেছনের দিকে যাচ্ছে। এর জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ। তারা যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ততোবার মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, গুম-খুন-অত্যচার করেছে।’

আওয়ামী লীগের আমলে পদ্মাসেতু হবে না মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন,  ‘বিএনপি তো দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতার বাইরে। সুইস ব্যাংকে রাখার মতো টাকা বিএনপির নেই। তাহলে সুইস ব্যাংকে এত টাকা কাদের? ক্ষমতাসীনরাই সুইস ব্যাংকে টাকা পাঠাচ্ছে। ওই টাকা জনগণের। ওই টাকা আর দেশে ফেরত আসবে না। যারা চুরি করেছে তারাও পাবে না।’

পাকিস্তানিদের চেয়ে বহুগুণ অত্যাচার আওয়ামী লীগ করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানিরা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার দিচ্ছিল না। সেই অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্যই দেশের মানুষ যুদ্ধ করেছিল। কিন্তু আজকে সেই অধিকার তারা (আওয়ামী লীগ) কেড়ে নিয়েছে। যে অত্যাচার তারা (পাকিস্তান) করেছিল, তার চেয়ে বহুগুণ অত্যাচার করছে আওয়ামী লীগ।’

আওয়ামী লীগই জঙ্গি সৃষ্টি করছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম, তখন এই আওয়ামী লীগ জঙ্গি সৃষ্টি করেছিল। জঙ্গিদের নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলাভাই— সব তাদের আত্মীয়। কথায় কথায় তারা জঙ্গি ধরে। বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গি নয়। কিন্তু তাদেরকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জঙ্গি বানানো হচ্ছে। একটা লোককে ধরে নিয়ে যদি এক মাস রাখা যায়, তাহলে তার চেহারা অন্য রকম হয়ে যায়। এভাবে জঙ্গি বানানো অতি সহজ। এই কাজগুলো তারা করছে প্রতি নিয়ত।’

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদান স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানিরা যখন মানুষ মারা শুরু করল তখন আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা গেল কোথায়? তারা তখন কেউ ছিল না, পালিয়ে গিয়েছিল। তখন এই দেশের সৈনিকরা এগিয়ে এসেছিল। প্রতিবেশি দেশ ভারতকে ধন্যবাদ দেব; তারাও আমাদের সাহায্য করেছে, অনেক লোককে আশ্রয় দিয়েছে। তাদেরকে আমরা মনে রাখব। তাদেরকে আমরা বন্ধুর মতো দেখতে চাই। আমরা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই।’

সন্ধ্যা ৬ টা ২৭ মিনিট থেকে ৭ টা ৬ মিনিট পর্যন্ত টানা প্রায় ৪০ মিনিট বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। এর আগে ছাত্রদলের সমাবেশ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। পূর্ব নির্ধারিত এ সমাবেশ দুপুর ২ টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকাল ১০ টায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সেখানে গেলে আইইবি কর্তৃপক্ষ তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা।

দুপুর ১ টায় নয়াপল্টন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ‘রাষ্ট্রপতির প্রোগ্রাম থাকায় ছাত্রদলের প্রোগ্রামের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে এস এস এফ । আইইবি কর্তৃপক্ষ ছাত্রদলকে মিলনায়তনে ঢুকতে দিচ্ছে না।’

পরে বিকেল ৪ টার দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে তালাবদ্ধ মিলনায়তনের সামনেই সমাবেশ শুরু করে ছাত্রদল। বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে সেখানে উপস্থিত হন খালেদা জিয়া।

সেখানে উপস্থিত হয়ে তালাবদ্ধ মিলনায়তনের সামনে অবস্থান গ্রহণ করেন তিনি। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদেরও নির্দেশ দেন সেখানে অবস্থা গ্রহণের জন্য। এক পর্যায়ে বিকেল ৫ টা ১৫ মিনিটে মিলনায়তনের তালা খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। তখন সবাইকে নিয়ে মিলনায়তনে ঢোকেন বিএনপির চেয়ারপারসন। টানা এক ঘণ্টা অন্যদের বক্তব্য শোনার পর সন্ধ্যা ৬ টা ২৭ মিনিটি বক্তব্য শুরু  করেন তিনি।

ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবীব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/এটি/একে

 

আরো পড়ুন:

তালাবদ্ধ গেটের সামনেই সমাবেশ, যোগ দিয়েছেন খালেদা

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন