বিজ্ঞাপন

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় কাল

October 9, 2018 | 10:49 am

 ।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুই মামলার রায় ঘোষণা হবে আগামীকাল বুধবার (১০ অক্টোবর)। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক শেষ করে ট্রাইব্যুনাল।

বুধবার পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ রায় ঘোষণা করা হবে।

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাগুলোর যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক রায় ঘোষণার জন্য এ তারিখ ঠিক করেন। রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি এবং আসামির পক্ষ থেকে বেকসুর খালাস দাবি করেছেন।

বিজ্ঞাপন

মামলাটি প্রমানে রাষ্ট্রপক্ষে ৫১১ জন সাক্ষীর মধ্যে মোট ২২৫ জন সাক্ষি আদালতে উত্থাপন করা হয়।

২১ আগস্টে মোট আসামি ছিল ৫২ জন। বিচারকালীন সময়ে আসামি জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় এবং হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও শরিফ শাহেদুল ইসলাম বিপুলের ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বর্তমানে মামলা দুটিতে মোট আসামির সংখ্যা ৪৯ জন।

এই মামলায় মোট ৩১ জন আসামি কারাগারে থাকলেও বাকী ১৮ জন পলাতক রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

২১ আগস্ট মামলায় রায়ের দিন নিধার্রণ করা আগে মামলাটিতে জামিনে থাকা ৮ আসামিদের জামিন বাতিল করে কারাগারে আটক রাখার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

জামিন বাতিল হওয়া আট আসামি হলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।

আসামিদের মধ্যে ২৩ জন কারাগারে রয়েছে তারা হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডাক্তার জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলুবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদত উল্যাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহমেদ তামিম, মইনুদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হাসান সুমন, মো রফিকুল ইসলাম সবুজ, মো. উজ্জল ওরফে রতন, হরকাতুল জিহাদ নেতা আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মাদ ওরফে জিএম, শেখ আব্দুস সালাম, কাশ্মিরী নাগরিক আব্দুল মাজেদ ভাট, আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা শাওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এর সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম ও রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী।

পলাতক ১৮ আসামিরা হলেন, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বর্তমান বিএনপির এমপি কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, সবেক ডিসি পূর্ব মো. ওবায়দুর রহমান, সবেক ডিসি দক্ষিণ খান সাইদ হাসান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, মেজর (অব.) এটিএম আমিন, হানিফ এন্টার প্রাইজের মালিক মো. হানিফ, শফিকুর রহমান, আব্দুল হাই ও বাবু ওরফে বাতুল বাবু।

বিজ্ঞাপন

মামলা দুইটিতে তারেক রহমানসহ ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২০-এর বি, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ১০৯ ও ৩৪ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩, ৪ ও ৬ ধারায় চার্জগঠন হয়।

দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারায় মানুষ হত্যার অভিযোগে এবং ১২০-এর বি ধারায় হত্যার অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগের উভয় ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং সর্বনিম্ম যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

অন্যদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ ধারায় বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রাণহানির অভিযোগে এবং ৬ ধারায় অর্থ, পরামর্শ ও বিস্ফোরক দিয়ে সহায়তার অভিযোগে একই দণ্ডের বিধান রয়েছে।

দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ও ১২০-এর বি ধারায় এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ ও ৬ ধারায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৮ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ শান্তি মৃত্যুদণ্ড ও সর্বনিম্ম যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হতে পারে।

মামলায় আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরীসহ ৬ সরকারি কর্মকর্তার সর্বোচ্চ ৭ বছর এবং সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদাসহ ৫ জনের সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ডের ধারায় বিচার হচ্ছে।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৫ কার্যদিবস পদ্ধতিগত বিষয়ের ওপর যুক্তি উপস্থাপন করেন। যা চলতি বছর ১ জানুয়ারি তা শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ১১ সরকারি কর্মকর্তার ৭ বছর কারাদণ্ড দাবি করেন।

প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে জানা গেছে এপর্যন্ত মোট ১১৯ কার্যদিবস যুক্তি উপস্থান হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ নিয়েছে ২৯ কার্যদিবস আর আসামিপক্ষ নিয়েছে ৯০ কার্যদিবস।

রায়ের দিন ঘোষণার আগ মুহুর্তে বিচারক বলেন, ‘দীর্ঘদিন বিচার কায শেষে আজ এ পর্যায়ে এসেছি। যা অপনাদের সকালে সহযোগীতার জন্য সম্ভব হয়েছে। এতদিন এক সঙ্গে থাকায় আপনারা আইনজীবী, আসামিসহ বিচার সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে অন্যরকম একটি সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। আমলা পরিচালনায় সহায়তা করার জন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি চেষ্টা করেছি আইনের মধ্যে থেকে বিচার পরিচলনা করতে। আগামী ১০ অক্টোর আমি মামলার রায় ঘোষণার দিন ঠিক করলাম। চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বিচার করার মালিক আল্লাহ। আমার সেই ক্ষমতা নেই। আমি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবো। আর জামিনে যারা রয়েছেন তাদের এই পর্যায়ে জামিনে রাখায় আইনগত অসুবিধা থাকায় তাদের জামিন বাতিল করা হইল।

মামলাটিতে শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন, রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান, মোশাররফ হোসেন কাজল, একরামুল হক শ্যামলসহ আরও অনেকেই। অপরদিক আসামিপক্ষের শুনানির সময় অংশ নেন, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, রেজ্জাক খান, এস এম শাহজাহান, নজরুল ইসলাম, তারা মিয়া ও মাঈনুদ্দিনসহ প্রমুখ।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নির্মমভাবে নিহত হন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। আহত হন শতাধিক নেতা-কর্মী।

এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি এজাহার দায়ের করেন।

মামলাটিতে ২০০৮ সালের ১১ জুন ২২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রথম চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। ২০০৯ সালের ৯ জুন পর্যন্ত ৬১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।

২০০৯ সালের ০৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। ২০১১ সালের ০৩ জুলাই অধিকতর তদন্ত শেষে তারেক রহমাসসহ আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। ফলে মোট আসামি দাঁড়ায় ৫২ জনে।

২০১২ সালের ১৮ মার্চ সম্পূরক চার্জশিটের ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের করার পর ফের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সব মিলিয়ে মামলার রাষ্ট্রপক্ষের মোট ৫১১ জনের মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ২২৫ জন সাক্ষী। গত ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দকে আসামিপক্ষের জেরার মধ্য দিয়ে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

গত ১২ জুন থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত কারাগারে ও জামিনে থাকা ৩১ অসামির পরীক্ষা শেষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থন করেন তারা। গত ১২ জুলাই থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত ওই ৩১ আসামির আসামির পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন ৩১ জন সাক্ষী।

সারাবাংলা/এআই/এমএস/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন