বিজ্ঞাপন

ক্যালিফোর্নিয়ায় বুনো আগুন ছড়িয়ে পড়লো যেভাবে

November 19, 2018 | 9:29 am

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

৮ নভেম্বরের সকাল। সিয়েরা নেভাদায় সূর্য তখন পাহাড়গুলোর ওপর মায়ার পরশ বুলাচ্ছিল। একইসঙ্গে গিরিখাতের আশপাশে বইছিল মৃদুমন্দ বাতাস। সকালের স্নিগ্ধতা তখন ছড়িয়ে প্রকৃতিতে। কিছুক্ষণ পরই এই স্নিগ্ধ পরিবেশ এক নারকীয় পরিবেশে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে, তার বিন্দুমাত্র আভাসও ছিল না কারও মনে।

গত মে মাস থেকে বলার মতো বৃষ্টি হচ্ছিল না সিয়েরা নেভাদায়। প্রখর সূর্যের তাপ আর অধিক ঘনত্বের কারণে বনের তাপমাত্রাও বাড়ছিল ক্রমশ। অনেক সময়ই এ ধরনের আবহাওয়ায় যে দুর্ঘটনাটি হওয়ার কথা, তাই হলো। ফিদার নদীর আশপাশে হঠাৎ ছোট একটি স্ফুলিঙ্গের সূত্রপাত, তা থেকে মুহূর্তের মধ্যে দাবানল গ্রাস করে নেয় গোটা এলাকা।

ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল

বিজ্ঞাপন

সে সময় ঘুম ভেঙ্গেছে ম্যাক ম্যাকেঞ্জির। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার বন ও আগুন নিয়ন্ত্রণ বিভাগের জার্বো গেপ-এর প্রধান।

সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ছয় মাইল দূরবর্তী পো ড্যামের কাছেই প্যাসিফিক গ্যাস অ্যান্ড ইলেকট্রিক কো.-এর একটি হাই ভোল্টেজ লাইন অকার্যকর হয় বলে জানা যায়। আগুনের সংবাদ ম্যাকেঞ্জির কাছে এলো ৬টা ২৯ মিনিটে। ঠিক পনের মিনিটের মধ্যে পো ড্যাম বা বাঁধ এলাকার ১০ একর দাবানল গ্রাস করে নেয়। পরবর্তী এক ঘণ্টা ধ্বংসযজ্ঞ দেখা ছাড়া উপায় ছিল না ম্যাকেঞ্জির।

ঘাসে ছড়িয়ে পড়া ছোট ছোট আগুন নিয়ন্ত্রণে ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল কর্মীরা দক্ষ। কিন্তু এই আগুন তাদের সাধ্যাতীত। ম্যাকেঞ্জি বুনো আগুনের ভয়াবহতা অনুমান করলেন। তাই দ্রুত বেতার বার্তায় সাহায্য চেয়ে বললেন, এটা বেশ বড় ধরনের দাবানল। সব পুড়িয়ে দিচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল

তিনি বুট্টে কাউন্টির পালগায় সাহায্য চাইলেন। জরুরি সহায়তা হিসেবে বললেন, ওয়াটার ট্যাংক, বুলডোজার ও অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের কথা।

বাতাসের তীব্রতা তখন বাড়ছিলই। আগুন এরই মধ্যে গ্রাস করেছে আশপাশের ছোট শহর। ম্যাকেঞ্জি জানালেন, হেলিকপ্টার ও এয়ার ট্যাংকারের সহায়তা এখন জরুরি। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও বাতাসের কারণে তাৎক্ষণিক সেসব সাহায্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। সেখানে পাহারও ও কনকাউ অঞ্চলে যারা আটকা পড়েছিলেন, তখনই তাদের অনেকের মৃত্যু হয়। হেলিকপ্টারের সাহায্য আসার আগেই পুড়তে থাকে প্যারাডাইস শহর।

ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল

বিজ্ঞাপন

সূর্য ডুবতে ডুবতে আগুন প্রায় ১৯ মাইল এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পাহাড়গুলো তখন জ্বলছে দাউ দাউ করে। কনকাউ ও প্যারাডাইসের বাসিন্দারা সাক্ষী হয়ে রইলেন ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর দাবানলের।

এই অগ্নিকাণ্ডের পর গত দশ দিনের অনুসন্ধানে ৭৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই সংখ্যা এখনও বাড়ছে। আগুনঝড়ে নিখোঁজের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১৩শ। বাড়িঘর হারিয়েছেন ৫০ হাজার মানুষ!

ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল

এই যে হতাহতের এত বড় সংখ্যা, এর কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে দ্রুততম সময়ে আক্রান্ত এলাকার মানুষদের সতর্ক সংকেত না জানানোকে। এছাড়া, নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার পথ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না দেওয়া এবং আগুনের মধ্যেই অনেকেরই খালি পায়ে আগুন থেকে পালাতে চেষ্টা করাকেও হতাহতের অন্যতম কারণ মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া, রাস্তাঘাটে অসংখ্য গাছপালা পড়ে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়ে। সে কারণে জরুরি সহায়তা দিয়েও সবাইকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত তৎপরতার অভাবকেও দায়ী করা হচ্ছে।

ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল

দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তাই সহজ একটি প্রশ্ন— ক্যালিফোর্নিয়ার আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়েছে, সত্যি। কিন্তু তা কি স্থানীয় কর্মকর্তাদের নিঃশ্বাসের চেয়েও দ্রুত ছিল!

সারাবাংলা/এনএইচ/টিআর

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন