বিজ্ঞাপন

কয়লা শক্তির উত্থানে চীন কতটুকু দায়ী?

November 28, 2018 | 8:51 am

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সংস্থার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিশ্বে গ্রিন হাউজ গ্যাস কেন্দ্রীভূত হওয়ার মাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক ধারায় পরিবর্তন না এলে যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, গোটা বিশ্বের অর্থনীতিই ব্যাপক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখছে জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার। এ পরিস্থিতিতে কয়লার ব্যবহার, তথা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে চীনের অবদান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

বহু বছর ধরেই চীনের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনার শিকার হয়ে আসছে। সম্প্রতি এ সমালোচনা নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, চীন তাদের সীমান্তের বাইরেই কয়লায় চালিত প্রকল্পগুলোকে সমর্থন জানিয়ে আসছে।

এদিকে, বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর জ্বালানিগুলোর অন্যতম কয়লা। কেননা, এই কয়লা পোড়ানোর ফলেই প্রচুর পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উৎপাদন হয়। আর তা গ্রিন হাউজ প্রভাব তৈরি, ওজন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করাসহ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা রেখে আসছে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, ২০১৭ সালে বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউজ গ্যাস কেন্দ্রীভূত হওয়ার মাত্রা বিগত ৩০ থেকে ৫০ লাখ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। আর গত মাসেই জাতিসংঘের বিজ্ঞান বিষয়ক প্যানেল জানিয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে হলে ২০৫০ সালের মধ্যে কয়লা ব্যবহার বাদ দিতে হবে।

অথচ চীন-সমর্থিত কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলো তাদের সীমান্ত ছেড়ে দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও বালকান অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এসব প্রকল্পের অর্থায়ন ও চুক্তির বিষয়গুলো সম্পূর্ণ স্বচ্ছ নয়। তবু এসবের খোঁজ রাখার চেষ্টা করছে পরিবেশ বিষয়ক সংগঠনগুলো। এমন একটি সংগঠন হচ্ছে ব্যাংকওয়াচ।

সংগঠনটির জ্বালানি বিষয়ক সমন্বয়কারী ইয়োয়ানা সিউতা বলেন, কেউ একইসঙ্গে বায়ু দূষণ লড়াইয়ে পুরো বিশ্বের পথ প্রদর্শক ও বিশ্বজুড়ে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের সবচেয়ে বড় অর্থায়নকারী হতে পারে না। চীনা তাদের শহরগুলোকে দূষিত বাতাস থেকে মুক্ত রাখতে বহু প্রতিষ্ঠানের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রস্তাবনা বাতিল করে দিয়েছে। কিন্তু নিজেরা সুরক্ষিত থাকলেও তারা বাইরের দেশগুলোর প্রযুক্তি ও শ্রম টার্গেট করেছে।

বিজ্ঞাপন

সিউতা জানান, বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের আওতায় বিনিয়োগ করছে চীন। তারা দূষণের একটি স্থায়ী উৎসের ব্যবহার করছে, যেটি কেবল পরিবেশের জন্যই নয়, অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত।

কার্বন নির্গমন বৃদ্ধি

সার্বিয়ায় চীনের সহায়তায় দেশটির সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সেখানে কাজও করছে চীনের সবচেয়ে বড় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি।

বিদ্যুৎ স্টেশনটি পরিচালনা করে সার্বিয়ার জাতীয় বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠান ইপিএস। এই স্টেশন থেকেই সরবরাহ হয় দেশটির ৭০ ভাগ বিদ্যুৎ। বর্তমানে সার্বিয়া সরকার ও চীনের মধ্যে সই হওয়া একটি চুক্তির আওতায় স্টেশনটিতে আরও একটি অতিরিক্ত ইউনিট যোগ করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটির পরিবেশগত দিক দিয়ে এর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইপিএস কর্মকর্তা জেলকো লাজোভিক বলেন, প্রকল্পটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ধূলা, নাইট্রোজেন অক্সাইড ও সালফার সকল মানদণ্ড মেনেই নির্মিত হচ্ছে।

তবে জানা গেছে, নতুন ইউনিটটিতে কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে না। ফলে এই ইউনিট থেকে নির্গত হওয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় নেই।

উচ্চ কার্বন নির্গমনে আবদ্ধ

কয়লাভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে কাজ করছে কোয়ালসোয়ার্ম। সংস্থাটির একজন বিশ্লেষক ক্রিস্টিন শিয়ারার চীন সমর্থিত প্রকল্পগুলো নিয়ে বলেন, এই প্রকল্পগুলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি বা ২ ডিগ্রিতে কমিয়ে আনার উপযুক্ত নয়।

তিনি বলেন, এই প্রকল্পগুলোর নির্মাণ শেষ হলে, দেশগুলো উচ্চ কার্বন নির্গমনকারী অবকাঠামোতে আবদ্ধ হয়ে পড়বে। এতে করে কয়লা রফতানি বেড়ে যাবে। যদিও বর্তমানে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির মূল্য কয়লার চেয়ে কমতে শুরু করেছে।

সারাবাংলা/আরএ/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন