বিজ্ঞাপন

৯ পর্যবেক্ষক সংস্থার বিষয়ে আপত্তি আ. লীগের

December 25, 2018 | 7:52 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: আরপিও’র ৯১ সি অনুচ্ছেদের বিধানের আলোকে ৯টি নির্বাচনি পর্যবেক্ষণ সংস্থার অনুমতিপত্র বাতিল চেয়েছেন আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম। পাশাপাশি সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল স্টিকারসহ চলাফেরা করার ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে দলের মিডিয়া উপকমিটি মিডিয়া সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

এইচ টি ইমাম বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৪দিন বাকি। এই নির্বাচনকে ভণ্ডুল বা প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নামামুখী ষড়যন্ত্র ছিল এবং এখনও অব্যহত রয়েছে। নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত ঐক্যফ্রন্টের সন্ত্রাস বাহিনীর হাতে আওয়ামী লীগের ৫ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন এবং ৩৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী সমর্থক গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। প্রতি মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত ক্যাডার কর্তৃক আমাদের প্রার্থীদের আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ আমরা পাচ্ছি। শত শত নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর হয়েছে। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং তাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক ইস্যু নিয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিয়ে যা হচ্ছে সেটি শুধু নির্বাচন সম্পর্কিত বাংলাদেশের মূল আইন আরপিও’র নগ্ন লঙ্ঘনই নয়, এটি আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি-নীতিরও লঙ্ঘন।’

নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষককে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি প্রদান সম্পর্কিত বিধান আরপিও’র অনুচ্ছেদ ৯১(সি)’তে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অনুচ্ছেদ ৯১সি’তে বলা আছে, নির্বাচন কমিশন সেই সকল ব্যক্তিকে দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে লিখিতভাবে অনুমতি প্রদান করবে যারা কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর কোনো কর্মসূচি ইশতেহার, আদর্শ ও লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এর প্রতি যাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো ধরনের সহানুভূতি নেই।

আরপিও’র উক্ত অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সকল আইনি শর্ত রয়েছে, তার প্রতিপালন আইনি ভাষায় বাধ্যতামূলক প্রকৃতির অর্থাৎ সুপারিশমূলক প্রকৃতির নয়। নির্বাচন কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ বিধান প্রতিপালন না করে কোনো ধরনের সাবজেক্টিভ ডিসক্রিয়েশন প্রয়োগ করার কোনো সুযোগ নেই।

বিজ্ঞাপন

অথচ আমরা লক্ষ্য করছি, আইনের এই বিধান সরাসরি লঙ্ঘন করে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত অথবা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি সমর্থনকারী ও সহানুভূতিশীল ৯টি সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এগুলো হলো, ডেমোক্রেসি ওয়াচ, খান ফাউন্ডেশন, লাইট হাউজ, নবলোক, কোস্ট ট্রাস্ট, শরীয়তপুর ডেভলপমেন্ট সোসাইটি, নোয়াখালী রুরাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটি। এই ৯টি সংস্থা মোট ১৮০টি সংসদীয় আসনে মোট ৬৫৮৫ জন পর্যবেক্ষককে পাঠাচ্ছে।

এই ৬৫৮৫ জনের প্রায় সকলেই বিএনপি-জামায়াতের সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। এ নির্বাচনকে নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এটি করা হয়েছে। আমরা আরপিও’র ৯১ সি অনুচ্ছেদের বিধানের আলোকে এই ৯টি সংস্থার অনুমতিপত্র বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।

বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়েও নানারকম কথা শোনা যাচ্ছে। সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের আইন মেনেই বিদেশি পর্যবেক্ষকগণ এদেশে আসবেন। আর আরপিও’র ৯১সি’তে যে বিধান রয়েছে, সেটি আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি-নীতি অনুযায়ীই প্রণয়ন করা হয়েছে। বিদেশী সংস্থা এ্যানফ্রেল নিয়ে যা বলা হচ্ছে, সেটি অসত্য ও আইন সম্মত নয়। আরপিও’র ৯১সি অনুযায়ী এই সংস্থাটি অনুমতি পাওয়ার যোগ্য নয়। কারণ বাংলাদেশের আইনজীবী বিএনপি ডিএজি আদিলুর রহমান শুভ্র, যিনি বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত।

বিজ্ঞাপন

তাছাড়া আদিলুর রহমান শুভ্র এ্যানফ্রেলের পরিচালনা পর্যদের একজন সদস্য। তা সত্ত্বেও যাচাই-বাছাই করে এ্যানফ্রেলের ৬জন পর্যবেক্ষককে বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমিত দেওয়া হয়। আবেদনকারী বাকি ১৫জন অনুচ্ছেদে ৯১সি প্রতিপালন করছে না বিধায় তাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।

কোনো বিদেশি রাষ্ট্র কি তার দেশের আইন লঙ্ঘন করে বিদেশি কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেবে? পশ্চিমা বিশ্বর কোনো দেশ কি এটি করবে? এটি উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ৯১সি বিধানটি নতুন কোনো বিধান নয়। ২০০১ সালের নির্বাচনের পূর্বে এই বিধানটি আরপিও’তে সংযোজিত হয়। এছাড়াও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের নির্বাচনি পর্যবেক্ষকদের জন্য যে কোড অব কন্ডাক্ট আছে, এনফ্লেল’র কর্মকাণ্ড সেই আচরণ বিধির পরিপন্থী।

ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির পক্ষ থেকে ড. কামাল হোসেন আমাদের জাতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেটি যথেষ্ট আপত্তিজনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। নির্বাচনের পূর্বে ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষাসহ যে কোনো বড় ধরনের নাশকতামূলক ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধের জন্য আমাদের জাতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী মোতায়েন করা হয়েছে

সশস্ত্র বাহিনী সকল দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে ড. কামাল হোসেন যে লিখিত অনুশাসনমূলক বিবৃতি দিয়েছেন, সেটি সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী। আমরা আশা করব, আমরা সকলেই দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে এমন কোন বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান থেকে বিরত থাকব।

আমরা জানতে পেরেছি এবং সার্বিক কর্মকাণ্ড দেখে আমাদের মনে হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনের পূর্বে দেশে বড় ধরনের একটি নাশকতামূলক হামলার পরিকল্পনা করেছে। এই নাশকতামূলক পদক্ষেপ প্রতিহত ও নসাৎ করার জন্য আমি দেশের সকল শান্তিপ্রিয় জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ অনেক কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানান তিনি।

ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো বিধি নিষেধকে সমর্থন করি না। নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণের দিন যানবাহন নিয়ন্ত্রণের যে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে আমরা সেটি শিথিল করার দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের ১০০ গজ দুরত্বে যানবাহন চলাফেরা ও অবস্থান করতে পারবে এমন নির্দেশনা জারি করা প্রয়োজন।

সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল যাতে স্টিকারসহ চলাফেরা করতে পারে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে দাবি করেন এইচ টি ইমাম।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর সকলের সহযোগিতায় উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হবে এবং বাংলাদশের জনগণ সব জায়গায় দেশের অব্যহত গণতন্ত্র ও উন্নয়নের রাজনীতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে মহাজোটের প্রার্থীদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারো দেশের জনগণের সেবা করার সুযোগ প্রদান করবে বলেও উল্লেখ করেন ।

মিডিয়া উপ-কমিটির সদস্য সচিব কাসেম হুমায়ুনের পরিচালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য ও আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য আখতারুজ্জামান, রামেন্দু মজুমদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, সুভাষ সিংহ রায়, দেবাশীষ রায় প্রমুখ। তবে মিডিয়া উপ-কমিটির আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান নূর উপস্থিত ছিলেন না।

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন