January 13, 2019 | 9:04 am
।। রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় বিশ্বখ্যাত ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল উৎপাদন বেড়েছে। এ জাতের ছাগলের উৎপাদন বাড়ায় আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন স্থানীয় কৃষক পরিবারের সদস্যরা। তবে ছাগল পালনকারীরা বলছেন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ছাগলের রোগ-বালাই প্রতিরোধে সহযোগিতা করছেন না। তাদের অসহযোগিতার কারণে অনেকে ছাগল পালন কমিয়ে দিয়েছেন। এতে এ জাতের ছাগল উৎপাদন বৃদ্ধিতে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কয়া গ্রামের জলিলের স্ত্রী সকিনা (৭০) সাত বছর আগে ভিক্ষা করে বেড়াতেন। তাকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে স্বাবলম্বী করতে হাত বাড়িয়ে দেয় বেসরকারি সংগঠন ওয়েভ ফাউন্ডেশন। সকিনাকে ভিক্ষুক পুনর্বাসনের আওতায় এনে তার বসতবাড়িতে ছাগলের ঘর তৈরি করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। সেই সঙ্গে দেওয়া হয় চারটি ছাগল। ওই ছাগল থেকে তার ঘরে এখন ৩২টি ছাগল রয়েছে। এরই মধ্যে সে বিভিন্ন ওজনের এবং আকৃতির ছাগল বিক্রি করে স্বচ্ছল জীবনে ফিরে এসেছেন। একসময় তিনি আশপাশের প্রতিবেশীদের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে জীবন-জীবিকা চালালেও এখন তিনি তাদের উল্টো সহযোগিতা করছেন। ঠিক একইরকমভাবে বিশ্বখ্যাত ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের উৎপাদনের ধীরে ধীরে বিস্তার ঘটেছে চুয়াডাঙ্গা জেলায়।
একই উপজেলার হরিহরনগর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার মরহুম সিরাজুল মণ্ডলের ছেলে ভ্যান চালক আবু সিদ্দিক মণ্ডল (৪৮) ও তার স্ত্রী মালেকা খাতুন (৪০) আট বছর আগে থেকে তাদের বসত বাড়ির এক অংশে বাঁশের তৈরি ঘর করে সেখানে দুইটি মা ছাগল পোষা শুরু করেন। তাদের ৪০টি পর্যন্ত ছাগল ছিল। প্রকারভেদে তারা দেড় হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮-৯ হাজার টাকা দরে ছাগল বিক্রি করেছেন। বর্তমানে তাদের ১৫টি ছাগল রয়েছে।
ভ্যানচালক আবু সিদ্দিক মণ্ডল আক্ষেপ করে জানান, চিকিৎসার অভাবে তাদের ১৪টি ছাগলের বাচ্চা মারা গেছে। চিকিৎসার জন্য তারা সরকারি ও বেসরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পায়নি। ছাগলের খাবার সম্পর্কে তাদের ধারণা না থাকায় ক্ষেতে ডোবা বিষাক্ত ঘাস খাওয়ানোর পর ছাগলের বাচ্চাগুলো মারা যায়। ছাগল অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা নিতে হয়রানি হতে হয় বলে আবু সিদ্দিক মণ্ডল ছাগল পোষা কমিয়ে দিয়েছেন।
ওই গ্রামের মাঠপাড়ার মরহুম দুখু মণ্ডলের ছেলে চাষি আনসার আলী মণ্ডল (৭০) জানান, পরিবারের স্বচ্ছলতার জন্য ৩৫ বছর থেকে তিনি ছাগল পোষেন। ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে তিনি ছাগল বিক্রি করে আসছেন। বর্তমানে তার ১৭টি ছাগল রয়েছে। ওই গ্রামের মরহুম দুখু মণ্ডলের ছেলে দোকানদার রফছেদ আলী (৫৮) জানান, তিনি দেশ স্বাধীনের পর থেকে ছাগল পোষেন। বর্তমানে তার ১১টি ছাগল রয়েছে। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে ছাগলের চিকিৎসা সেবা তিনি পাননি।
একই উপজেলার বেনীপুর গ্রামের পশু চিকিৎসক এনামুলই তার ভরসা। হরিহরনগর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার সিরাজুল বিশ্বাসের ছেলে চাষি আবু সাঈদ (২৭) জানান, ১৯৯৭ সাল থেকে তারা ছাগল পোাষেন। রোগ বালাইয়ের কারণে ছাগল পোষা কমিয়ে দিয়েছেন তারা।
তিনি আরো জানান, ছাগল পুষতে তেমন ব্যয় হয় না। সকালে ও বিকেলে মাঠে পাল ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই খাদ্য-খাবার খেয়ে ছাগল বেড়ে ওঠে।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছী ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী রেহেনা খাতুন (৩৭)। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাদের সুখের সংসার। বিয়ের এক বছর এর মাথায় তার ছেলের জন্ম হয় এবং তার ৩ বছর পরই এক মেয়ের জন্ম হয়। স্বামীর জমি জায়গা বলতে শুধুমাত্র দেড় বিঘা ফসলি জমি ও পাঁচ কাঠা বাড়ির ভিটা জমি রয়েছে।
পাশাপাশি বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন করেন রেহেনা বেগম। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে ওয়েভ ফাউন্ডেন থেকে ১০ হাজার টাকা ছাগল পালন ঋণ নিয়ে দুটি মা ছাগল কেনেন তিনি। বাকি টাকা ছাগল রাখার জন্য তিনি বাঁশের মাচা তৈরির কাজে ব্যয় করেন। দুটি মা ছাগল হতে প্রথম বছরই আরও চারটি মা ছাগল ও দুটি খাসি ছাগল জন্ম নেয়। বর্তমানে তার মা ও খাসি ছাগলসহ ১০টি ছাগল রয়েছে। ছাগল পালন করে সেগুলো বিক্রি করেই রেহানা খাতুন এখন স্বচ্ছল। সরকারিভাবে নয়, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের ছাগল পালন কর্মসূচীর আওতায় পি.ও. টেকনিক্যাল হতে ছাগলের বিভিন্ন রোগের লক্ষণ ও প্রতিষেধক টিকা সুবিধা পেয়ে থাকেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘লোকজন ছাগল পুষতে গিয়ে চিকিৎসা সেবা পেতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে এমন অভিযোগ ঠিক নয়।’
ঠিকমত ভ্যাকসিন মিলছে না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলায় শতভাগ পিপিআর ভ্যাকসিন দেওয়া নিশ্চিত করেছি, চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলায় এটা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া চলছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ রক্ষার্থে চুয়াডাঙ্গা জেলায় চাহিদার ১০ ভাগ ওষুধ পাওয়া যায়। বাকি ৯০ ভাগ পাওয়া যায় না। এছাড়া প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে জেলার সব জায়গায় চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। তবে আমরা যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
সারাবাংলা/আরআর/একে