বিজ্ঞাপন

‘বুকের ভেতরে আছে মস্ত বড় এক কলিজা’

March 29, 2019 | 2:52 am

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: চকবাজারের চুড়িহাট্টার সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের দেড় মাসও পার হয়নি। এরই মধ্যে বনানীর কামাল আতাতুর্ক সড়কের এফআর টাওয়ারে আরেক ভয়াবহ আগুন কেড়ে নিয়েছে ১৯টি প্রাণ। চুড়িহাট্টার সেই আগুনে যেমন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অমানবিক শ্রম আর নিষ্ঠায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মানবিকতার জয়গান, ঠিক একইভাবে তারা ছুটে গিয়েছেন বনানীতেও। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অক্লান্ত পরিশ্রমে নিয়ন্ত্রণে এনেছেন আগুন, উদ্ধার করেছেন ভবনটির বিভিন্ন তলায় আটকা পড়া মানুষদের। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে তাই যখন সবাই শোকহত, তখনও নিরলস কাজ করে যাওয়া এই ‘আগুন যোদ্ধা’দের প্রতি সম্মান দেখাতেও ভোলেননি কেউ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অভিবাদনে ভাসিয়েছেন তাদের।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর পৌনে ১টার দিকে আগুন লাগে এফআর টাওয়ারে। ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিট প্রায় ১০ ঘণ্টার চেষ্টায় সম্পূর্ণ আগুন নেভাতে সমর্থ হয়। ফায়ার সার্ভিস বলছে, এ পর্যন্ত ১৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এই আগুনে। তবে ভবনটিতে আটকা পড়া অর্ধ শতাধিক নারী-পুরুষকে উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পরপরই আগুন ছড়িয়ে যেতে থাকে বিভিন্ন তলায়। এসময় ভবনটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের বড় একটি অংশ নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারলেও আটকা পড়েন অনেকেই। কেউ কেউ আতঙ্কিত হয়ে লাফিয়েও পড়েছেন ভবন থেকে। তবে এর বাইরে এফআর টাওয়ারের কয়েকটি তলা থেকে হাইড্রলিক ল্যাডারের মাধ্যমে অর্ধ শতাধিক নারী-পুরুষকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- এফআর টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় ১৯ লাশ উদ্ধার: ফায়ার সার্ভিস

ফায়ারকর্মীদের এই উদ্ধার তৎপরতার বেশকিছু ছবি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ছবি শেয়ার করে সবাই প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন তাদের।

ক্রন্দনরত এক নারীকে পিঠে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। তার সামনে-পেছনে আরও দু’জন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে এই ছবিটি। ছবিটি শেয়ার করে রেজাউল করিম মৃদুল লিখেছেন, ‘গায়ের শক্তি ছাড়া এই লোকগুলোর কাছে আর কোনো প্রযুক্তি নাই! বুকের ভেতর আছে মস্ত বড় একটা কলিজা!’

বিজ্ঞাপন

তার পোস্টেই নজরুল আমিন জুয়েল নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এই বাহিনীটা নিরবে কাজ করে যায় সাধ্যমতো। চাপাবাজিও করে না।’

গণমাধ্যমকর্মী শেখ সাবিহা আলম লিখেছেন, ‘এ ছ‌বির ক্যাপশন কী? আস্থা? মমতা? ভালবাসা?’। শেখ সাবিহার এ পোস্টে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের উপকমিশনার মুহিবুল ইসলাম খান লিখেছেন, ‘আজ অফিসে বসে দেখছিলাম আর বলছিলাম, ঠিক এই কারণেই বিদেশে ফায়ারম্যানরা সবচেয়ে সম্মানের পাত্র। আমাদের দেশে এত সীমাবদ্ধতা, তবু আমাদের ফায়ার ফাইটাররা পিছুপা হন না।’

আরও পড়ুন- এফআর টাওয়ারের আগুনের তদন্তে ৪ কমিটি

বিজ্ঞাপন

আরেক গণমাধ্যমকর্মী মাহফুজ ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস এ দেশের সবচে জনবান্ধব সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।’ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত কাওসার শাকিল লিখেছেন, ‘সাম সুপারহিরোজ ডু নট ওয়্যার ক্যাপস।’

গণমাধ্যমকর্মী জেসমিন মলি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ ফায়ার সা‌র্ভিস ও সি‌ভিল ডিফেন্স বাহিনী, আমার অভিবাদন জানবেন।’ আরেক গণমাধ্যমকর্মী জেসমিন পাপড়ি ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘চোখে পানি আসে। কৃতজ্ঞতা ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রতি’।

ল্যাডারে করে দুই নারীকে ভবন থেকে নামানোর সময় তাদের জড়িয়ে ধরে রাখা আরেক ছবি শেয়ার দিয়ে বাবু আহমেদ লিখেছেন, ‘দ্যাখেন। কী পরম মমতায় আগলায়ে রাখছে! এমনকি এই পরিস্থিতেও এভাবে দুই কাধে দু’টো মাথা রাখার স্থান দিয়ে মানুষকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন প্রিয়জনদের কাছে। অথচ কোনোদিনই আমরা, আমিও না যদ্দুর মনে পড়ে, তাদের ধন্যবাদ জানাই নাই। ধন্যবাদ।’

আরও পড়ুন- ঢামেক মর্গে ৭ মরদেহ, শনাক্ত ৬টি হস্তান্তর রাতেই

ছবিটি শেয়ার করে রফিকুল্লাহ রোমেল লিখেছেন, ‘বিভিন্ন দেশপ্রেমিক বাহিনীর কথা আলোচনায় আসে, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর মতো ‘দেশপ্রেমিক দমকল বাহিনী’ বলে আদর করে তাদের ডাকে না কেউ…..।’

সারাবাংলা/জেএ/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন