বিজ্ঞাপন

হলি আর্টিজান ট্র্যাজেডি: নারকীয় জঙ্গি হামলায় নিহত যারা

November 27, 2019 | 6:13 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোঁরায় নারকীয় জঙ্গি হামলায় দেশি-বিদেশিসহ মোট ২২ জনের মৃত্যু হয়। সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে মারা যায় হামলাকারী ৫ জঙ্গিও। জঙ্গি হামলায় নিহত ২২ জনের মধ্যে পুলিশের দুই কর্মকর্তা, তিন বাংলাদেশি, সাত ইতালীয়, নয় জাপানিজ এবং একজন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। এছাড়া হোটেলের দুই শেফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মর্মান্তিক এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায়ের দিন ধার্য রয়েছে বুধবার (২৭ নভেম্বর)। এ পরিপ্রেক্ষিতে নিহতদের স্মরণে সারাবাংলায় আজকের এ আয়োজন।

বিজ্ঞাপন

২০১৬ সালের ১ জুলাই। রমজান মাস চলছে। ইফতারির পর সোয়া আটটার দিকে হলি আর্টিজান রেস্তোঁরায় শুরু হয় জঙ্গিদের বন্দুকের গুলি। খবর পেয়ে এগিয়ে যায় পুলিশ। তারাও বাধার মুখে পড়ে পিছু হটে। ওই সময় জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেডে প্রাণ হারান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম এবং বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন খান। এরপর রাত যতই বাড়তে থাকে জঙ্গিদের নৃশংসতাও বাড়তে থাকে। তাদের বুলেটের আঘাত ছিদ্র হতে থাকে অসহায় ও নিরীহ নারী-পুরুষের শরীর। ঝাঝরা হয়ে যায় তাদের বুক। কারও কারও প্রাণহীন দেহ লুটিয়ে পড়ে মেঝেতে, কারও বা টেবিলের ওপর, কেউ আবার সিঁড়িতে। রাতটি নানান শঙ্কায় কাটলেও সকাল হওয়ার আগেই সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো অভিযান শেষ করে। এরপর পুলিশ একে একে মরদেহ বের করতে থাকে।

এসব মরদেহের মধ্যে পুলিশ হামলাকারী ৫ জঙ্গিকে শনাক্ত করে। এরা হলো- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।

শনাক্ত করা হয় বাংলাদেশি তিনজনের মরদেহ। এরা হলেন- অবন্তি কবির (১৮) নামে প্রবাসী এক বাংলাদেশি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার ইমোরি অক্সফোর্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৯ সালে স্নাতক সম্পন্ন করার কথা ছিল তার। পরিবার ও বন্ধুদের সাথে ঢাকায় বেড়াতে এসেছিলেন তিনি। সেদিন সন্ধ্যায় ইফতারের পর বন্ধুদের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নিতে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পর সেখানে জঙ্গি হামলায় নিহত হন অবন্তি কবির।

বিজ্ঞাপন

ওই হামলায় নিহত ফারাজ হোসেইন (২০)। তিনি ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি। ফারাজ অক্সফোর্ড কলেজ অব ইমোরি ইউনিভার্সিটি থেকে ওই বছর স্নাতক অর্জন করেন। ২০১৬ সালের মে মাসের ১৮ তারিখে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ঢাকায় এসে দুই বন্ধুকে নিয়ে ১ ‍জুলাই হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে নৈশভোজে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই জঙ্গি হামলায় তার মৃত্যু হয়।

বাংলাদেশের শিল্প ব্যক্তিত্ব ইশরাত আকন্দও নিহত হয়েছেন গুলশানের ওই হামলায়। পরিবারে তাকে লায়লা নামে ঢাকা হতো। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে শিল্পকলা চর্চা করে আসছিলেন। ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান ক্রিয়েটিভসের (আইএসি) তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের শিল্পকলা এবং চারুশিল্পীদের তিনি আন্তর্জাতিক মাত্রায় নিতে চেয়েছিলেন। তিনি প্রায় দুইশ শিল্পীকে নিজেদের প্রতিভা প্রকাশে সহায়তা করেছেন। তিনি একটি কোম্পানির মানব সম্পদ পরিচালকও ছিলেন। ইশরাত ইতালীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শুক্রবার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে নৈশভোজে অংশ নিতে এসে জঙ্গি হামলায় মারা যান।

জঙ্গি হামলায় নিহত এক ভারতীয় হলেন- তারুশি জেইন (১৮)। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ছাত্রী ছিলেন। জঙ্গি হামলার শিকার হওয়ার এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। নিহত হওয়ার আগে তিনি ইস্টার্ন ব্যাংকে ইন্টার্নশিপ করছিলেন। তার বাবা সঞ্জীব জইন ঢাকায় ২০ বছর ধরে গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

বিজ্ঞাপন

হামলায় নিহত ৯ ইতালীয়ান নাগরিক হলেন, ক্লাউদিয়া মারিয়া ডি এন্তোনা (৫৬)। তিনি ছিলেন ফেডো ট্রেডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ওই ইতালীয় টেক্সটাইল কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করছিলেন।

সিমোনা মন্টি (৩৩) ছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। রোম থেকে কিছু দূরের মাগলিয়ানো সাবিনো শহরে বাস করতেন তিনি। জঙ্গি হামলার ঘটনার ওই সপ্তাহে ইতালিতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তার। তাই বন্ধুদের বিদায় জানানোর জন্য তিনি হলি আর্টিজানে গিয়েছিলেন।

মারকো তোন্দাত (৩৯)। এক বছর আগে তিনি কাজের সন্ধানে ঢাকায় এসেছিলেন। স্টুডিও টেক্স লিমিটেডে সুপারভাইজার পদে কর্মরত ছিলেন। ৪ জুলাই তার ইতালিতে ফিরে যাওয়ার কথার ছিল।

নাদিয়া বেনেদেত্তি (৫২) বাংলাদেশে কর্মরত ছিলেন। তিনি স্টুডিওটেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ২০ বছর ধরে তিনি বাংলাদেশে বসবাস করছিলেন। ঢাকায় আসার আগে তিনি নেপাল থাকতেন। ওই প্রতিষ্ঠানটির সদর দফতর লন্ডনে অবস্থিত। এর ঢাকার শাখা অফিসেই ছিলেন নাদিয়া।

বিজ্ঞাপন

আদেলে পুগলিসি (৫০) ইতালির ক্যাটেনিয়ার নাগরিক। আদেলে আর্টসানায় একটি টেক্সটাইল গ্রুপের মাননিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। ওই সপ্তাহেই তার নিজে দেশে যাওয়ার কথা ছিল।

‪ক্রিসটিয়ান রোজি (৪৭) ফেলেত্তো আমবারতো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ছিলেন। তিন বছরের জমজ কন্যা সন্তানের বাবা ছিলেন ক্রিসটিয়ান। তিনি বাংলাদেশে থেকে পণ্য নিয়ে ইতালিতে বিক্রি করতেন।‬

‪ক্লাউডিও কাপেল্লি (৪৫) ভেদেনো ইতালির মোনজা প্রদেশের আল লামব্রো এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে নিজের একটি টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছিলেন।‬

ভিনসেনজো দাল্লেসত্রো (৪৬) ইতালির পিয়েদিমোনতে মাতেসের কাসেত্রার নাগরিক। টেক্সটাইলের কাজে তিনি ঢাকা এসেছিলেন বলে জানা যায়।‪‬

‪মারিয়া রিবোলি (৩৪) স্বামী এবং তিন বছর বয়সী মেয়ে নিয়ে ইতালির সোলজায় বাস করতেন। তিনি ব্যবসায়িক কাজে হামলার শিকার হওয়ার কয়েকমাস আগে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি একটি টেক্সটাইল কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন।‬

নিহত সাত জাপানী নাগরিকের মধ্যে পাঁচ পুরুষ এবং দুই নারী। এরা হলেন, তানাকা হিরোশি, ওগাসাওয়ারা, শাকাই ইউকু, কুরুসাকি নুবুহিরি, ওকামুরা মাকাতো, শিমুধুইরা রুই ও হাশিমাতো হিদেইকো। এদের ছয়জনই মেট্রোরেল প্রকল্পের সমীক্ষা কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

বহুল আলোচিত এই জঙ্গি হামলার রায় হওয়ার কথা রয়েছে বুধবার (২৭ নভেম্বর)। হলি আর্টিজানে হামলা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ ২২ জনকে জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পায়। এরপর অধিকতর তদন্ত করে চার্জশিট দেওয়ার সময় হাসনাত করিমকে বাদ দেওয়া হয়। হাসনাত করিম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। সেনাবাহিনীর থান্ডারবোল্ড অভিযানের পর অনেকের সাথে হাসনাত করিমকেও বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।

২২ জনের মধ্যে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত আসামিদের আটজন কারাগারে রয়েছে। আসামিরা হলো- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, মামুনুর রশিদ রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ।

বাকি ১৩ জনের মধ্যে হলি আর্টিজানে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ নিহত পাঁচজন হলো- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।

বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অভিযানে নিহত ৮ জন হলো- তামীম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট বাশার ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
যৌথবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহততাহলে ব্যাংকে কি মাস্তান-মাফিয়ারা ঢুকবে?— কাদেরকে রিজভীর প্রশ্নরাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহনযোগ্যতা ও আরাকান আর্মিব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধের ঘোষণায় সিপিবি’র ক্ষোভভিয়েতনাম মুক্তিসংগ্রামের অবিসংবাদিত কিংবদন্তি হো চি মিনমেট্রোরেলে ভ্যাট যাত্রীর ওপর চাপবে, পুনর্বিবেচনার অনুরোধ‘বৈষম্যমূলক’ পেনশন ব্যবস্থা প্রত্যাহারের দাবি বুয়েট শিক্ষকদের‘সামান্য কেমিক্যালের পয়সা বাঁচাতে দেশের সর্বনাশ করবেন না’মিরপুরে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধবিজয়ীদের ‘এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার’ দিলেন প্রধানমন্ত্রী সব খবর...
বিজ্ঞাপন