বিজ্ঞাপন

পরীক্ষায় ‘বহিষ্কৃত’, তবু ভিজিটিং কার্ডে ডিগ্রি, সরকারি লোগো

December 25, 2019 | 9:58 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ডিপ্লোমা ইন অফথালমোলজি (ডিও, অফথালমোলজি) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অসদুপায় অবলম্বন করে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিকেল অফিসার ডা. চৌধুরী মো. আনোয়ার। পরবর্তী সময়েও সে ডিগ্রি আর অর্জন করতে পারেননি তিনি। অথচ বিভিন্ন অনিয়মে অভিযুক্ত এই চিকিৎসক তার ভিজিটিং কার্ডে দিব্যি এই ডিগ্রি উল্লেখ করে ব্যবহার করে প্র্যাকটিস করছেন বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। শুধু তাই নয়, সরকারি কর্মকর্তা না হয়েও ভিজিটিং কার্ডে ব্যবহার করছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের লোগোও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিগ্রি অর্জন না করেও ভিজিটিং কার্ডে তার ব্যবহার এবং সরকারি কর্মকর্তা না হলেও কার্ডে সরকারের লোগো ব্যবহার— দু’টিই অনৈতিক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বিজ্ঞাপন

ভিজিটিং কার্ডে উল্লেখ করা ডিগ্রি ও বাংলাদেশ সরকারের লোগো ব্যবহার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ডা. চৌধুরী মোহাম্মদ আনোয়ারের কাছে। এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য, আমি কোনো সরকারি কর্মকর্তা না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি অটোনমাস (স্বায়ত্তশাসিত) প্রতিষ্ঠান। এখানে আমি ডিপ্লোমা করছি, আমার পরীক্ষা চলছে।

আরও পড়ুন- ৬ দিনই বাইরে প্র্যাকটিস তার, বিএসএমএমইউতে হাজিরা নামকাওয়াস্তে!

এর আগে, গত ১৪ ডিসেম্বর সারাবাংলা ডটনেটে বিএসএমএমইউ’র কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. চৌধুরী মোহাম্মদ আনোয়ারের অনিয়মের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন করা হয়। প্রতিবেদনে মাসের অধিকাংশ দিনই তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন বলে উল্লেখ করা হয়। সেইসঙ্গে অফিস চলাকালীন তিনি বাইরে চেম্বার করেন বলেও প্রমাণ তুলে ধরা হয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এই চিকিৎসকের আরও অনিয়মের তথ্য। জানা গেছে, অফথালমোলজি বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন না করেও তিনি সেই ডিগ্রি ব্যবহার করছেন তার ভিজিটিং কার্ডে। সেখানে রয়েছে সরকারি লোগোও। যদিও বিএসএমএমইউয়ের মেডিকেল অফিসার হিসেবে তিনি সরকারি কর্মকর্তা নন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিনি (ডা. আনোয়ার) ডিও না। ডিও ডিগ্রির জন্য কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু পাস করতে পারেন নি। তবে পরীক্ষায় বহিষ্কারের বিষয়টি নিয়ে অফিশিয়ালি আমার কাছে কোনো কাগজ আসেনি।’

তিনি বলেন, প্যালিয়াটিভ কেয়ারে নিয়োগ নিয়েছিলেন ডা. চৌধুরী মোহাম্মদ আনোয়ার। সেখান থেকে আমাদের বিভাগে আসেন। তাই তার বিষয়ে আলাদা করে বিভাগীয় কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারি না। তার কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে আগেই অবহিত করেছি। বিভাগের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- নানা অনিয়ম করে তদন্তের মুখে বিএসএমএমইউ’র ডা. আনোয়ার

ভিজিটিং কার্ডে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের লোগো ব্যবহার নিয়ে ডা. শরফুদ্দিন বলেন, এটি অনৈতিক। বিএসএমএমইউ একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা না হলে কেউ এই লোগো ব্যবহার করতে পারেন না। বিএসএমএমইউ’র নিজস্ব একটি লোগো আছে। এখানে সেটিই ব্যবহার করা হয়। যদি সরকারি কর্মকর্তা না হয়েও কেউ এভাবে লোগো ব্যবহার করেন, তবে তা আইনবিরুদ্ধ কাজ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসএমএমইউ’র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের সূত্র জানায়, ডা. চৌধুরী মোহাম্মদ আনোয়ার ২০১৪ সালের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়টির ডিপ্লোমা ইন অফথালমোলজি কোর্সে ভর্তি হন। কিন্তু পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়। ফলে তার পক্ষে আর ডিও পরীক্ষা অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়নি।

বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএসএমএওমিউ’র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। তারা জানান, এ সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। তবে নিয়ম অনুযায়ী ডা. চৌধুরী মোহাম্মদ আনোয়ার কোনোভাবেই এই ডিগ্রি ব্যবহার করতে পারেন না।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ডা. আনোয়ারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠায় সেগুলো তদন্ত করতে কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন উপাচার্য। তদন্তে এসব বিষয় উঠে আসবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সরকারি লোগো ব্যবহার করা বিষয়ে তিনি বলেন, এটি যদি কেউ করে থাকে, তবে তা দুর্ভাগ্যজনক এবং এটি অনৈতিক।

ডিগ্রি অর্জন না করেও ব্যক্তিগত ভিজিটিং কার্ডে তার ব্যবহারের বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) ডেপুটি রেজিস্ট্রার ডা. লিয়াকত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, আইনত এভাবে লেখার নিয়ম নেই। যদি আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া হয়, তবে এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সরকারি কর্মকর্তা না হয়েও লোগো ব্যবহার বিষয়ে বিএমডিসি’র এই ডেপুটি রেজিস্ট্রার বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ছাড়া এই লোগো ব্যবহারও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

গত ১৪ ডিসেম্বর সারাবাংলা ডটনেটে ডা. আনোয়ারের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। ২৩ ডিসেম্বর তার অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা.কনক কান্তি বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘বিএসএমএমইউ’তে কোনো ধরনের অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটির তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া পর আমরা অবশ্যই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন