বিজ্ঞাপন

‘পেছাচ্ছে না সিটি নির্বাচন, ভোটগ্রহণ ৩০ জানুয়ারিই’

January 12, 2020 | 4:45 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ পরিবর্তন নিয়ে গুঞ্জন উঠলেও নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, আগামী ৩০ জানুয়ারিই এই দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১২ জানুয়ারি) বিকেল পৌনে ৫টার কিছু আগে কবিতা খানম সারাবাংলাকে এ তথ্য জানান।

কবিতা খানম বলেন, ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি আদালতেও গিয়েছে। কিন্তু আদালত নির্বাচন পেছানোর কথা বলেননি। আমরাও আমাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছি না। নির্বাচন ৩০ জানুয়ারিই থাকছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেমও সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ৩০ জানুয়ারিই তার অঞ্চলে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। এরই মধ্যে কমিশনও আমাকে জানিয়েছে, ৩০ তারিখেই (৩০ জানুয়ারি) নির্বাচন হবে। সেভাবেই সব কাজ চলছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ উপলক্ষে ঢাকার দুই সিটিতে সাধারণ ছুটি থাকবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট দফতরকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চিঠিতে বলা হয়েছে, ৩০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন উপলক্ষে ভোটগ্রহণের দিন ৩০ জানুয়ারি দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা প্রয়োজন। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এর আগে, আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাসহ চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব মো. আলমগীরের উপস্থিতিতে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ইসি সূত্রে জানা যায়, পূজা সামনে রেখে ঢাকার দুই সিটিতে ভোটগ্রহণের তারিখ পরিবর্তন হবে কি না, সেটিই ছিল অনির্ধারিত এই বৈঠকের আলোচ্যসূচি।

বৈঠকের আগে রোববার বিকেলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামও সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে কোনো ধরনের প্রস্তাবনা কমিশনে উত্থাপন করা হয়নি। ফলে নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।

বিজ্ঞাপন

রফিকুল ইসলাম আরও বলেছিলেন, এরই মধ্যে উচ্চ আদালতে বিষয়টি নিয়ে রিট হয়েছে। আদালত কোনো সিদ্ধান্ত দিলে সে অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর আদালতের কোনো নির্দেশনা না এলে নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই।

এর পরপরই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে তার কক্ষে অনির্ধারিত বৈঠকে বসেন চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব। নির্বাচনের তারিখ না পেছানোয় বৈঠক শেষে ইসি’র পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্রিফিং হয়নি। তবে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম ও ইসি সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, সিটি নির্বাচন পেছাচ্ছে না।

ইসি সূত্রে জানা যায়, সরস্বতী পূজার সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ মিলে যাওয়ায় বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিয়ে ভোটগ্রহণের তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়। সর্বশেষ ডিএসসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেনও পূজা উপলক্ষে ভোট পেছানোর সুপারিশ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন ইসিতে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব মুখলেছুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ভোট পেছানোর সুপারিশ করে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠির বিষয়টি আমরা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। তবে কমিশন ভোট পেছানোর কোনো চিন্তা করছে না। তাছাড়া সরকারি ক্যালেন্ডারে ২৯ জানুয়ারি সরস্বতী পূজার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। সে অনুযায়ীই সবকিছু হওয়ার কথা।’

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত ৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা এক চিঠিতে পূজার জন্য ভোট পেছাতে ডিএসসিসি’র রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। তার চিঠি বিবেচনায় নিয়েই রিটার্নিং কর্মকর্তা ১০ জানুয়ারি চিঠি দেন ইসিতে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু ওই দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ওই পূজা লগ্ন বা তিথির মধ্যে সম্পন্ন করতে হয় বলে এর তারিখ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কিন্তু ডিএসসিসি এলাকায় বিপুলসংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বী বাস করেন। এখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় পূজা মণ্ডপ রামকৃষ্ণ মিশন অবস্থিত। ঢাবি জগন্নাথ হলও একই এলাকায় অবস্থিত। এই দুই মণ্ডপ ঘিরে সরস্বতী পূজায় ব্যাপক জনসমাগম ঘটে। এছাড়া ডিএসসিসি নির্বাচনের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠানকে ভোটকেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে, তার অনেকগুলোতেই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পুরান ঢাকা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরস্বতী পূজা উদযাপন অনেকাংশেই সম্ভব হবে না। এসব বিবেচনায় নিয়েই রিটার্নিং কর্মকর্তা ডিএসসিসি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ পেছানোর আবেদন জানান ইসিকে।

এছাড়া, ২২ ডিসেম্বর দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন সিটি নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়ে চিঠি দেয় ইসিকে।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন