বিজ্ঞাপন

রোগীর কাছ থেকেই পিপিই’র দাম নিচ্ছে ইউনাইটেড হাসপাতাল

April 30, 2020 | 10:32 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্টের (পিপিই) খরচ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, যারা সেই রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন তাদের যে পিপিই পরতে হয় সেটির খরচই নেওয়া হচ্ছে রোগীদের কাছ থেকে। ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া একজন রোগীর একটি বিলের কপি আসে সারাবাংলার এ প্রতিবেদকের কাছে।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া সেই বিলে দেখা যায়, এক হাজার ৭৩৯ টাকার একটি বিল দেওয়া হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, নিরাপত্তা সুরক্ষা সামগ্রীর আলাদা আলাদাভাবে দাম নেওয়া হয় রোগীর কাছ থেকেই। চার পিস (দুই জোড়া) এক্সামিনেশন গ্লোভসের দাম নেওয়া হয় ৩৭ টাকা, একটি এন ৯৫ মাস্কের দাম রাখা হয় এক হাজার ১২৫ টাকা, ডিসপোজেবল পলি অ্যাপ্রোনের দাম রাখা হয় ১৪১ টাকা। এ ছাড়াও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুরক্ষা সামগ্রীর দাম রাখা হয়।

এ বিষয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তিনি আলাদাভাবে পিপিই’র দাম রাখার বিষয়টি স্বীকার করে নেন।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোগীদের যারা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন তাদের নিরাপত্তার বিষয় থাকে। সেইক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তা সামগ্রীর দামটি রোগীর থেকে নেওয়া হয়ে থাকে।’

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের যোগাযোগ ও ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ডা. শাগুফা আনোয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুধুমাত্র যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাদের ক্ষেত্রে যারা সেবাদানের সঙ্গে যুক্ত তাদের পিপিই খরচ নেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে আরও একটা বড় অংশ আছে যারা অন্যান্য কাজের সময় পিপিই পরছেন সেগুলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের খরচেই পরা হয়ে থাকে। অর্থাৎ শুধুমাত্র রোগীর সেবাদানের সঙ্গে জড়িত হওয়ায় যে পিপিই পরতে হচ্ছে সেগুলো আমরা সেই রোগী থেকে নিয়ে থাকি। তবে এক্ষেত্রে বহির্বিভাগ বা জরুরি বিভাগে সেবা নিতে আসা কারও কাছ থেকে এমনটা চার্জ করা হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক স্থানেই যখন চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার অভিযোগ আসছে তখন আমরা কিন্তু আমাদের সেবাদান বন্ধ করিনি। এক্ষেত্রে আমাদের কিন্তু এই চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত সবার নিরাপত্তার বিষয়েও ভাবতে হবে। আর সেই নিরাপত্তানিশ্চিতকরণে যে পিপিই ব্যবহার করা হচ্ছে শুধু তার চার্জই করা হচ্ছে। এতে তো রোগীর আপত্তি থাকার কথা না। কারণ এটিতে তাদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে।’

সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো পিপিই ইউনাইটেড হাসপাতালে দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য হাসপাতালের বিষয়ে আমরা বলতে পারছি না। তবে আমাদের হাসপাতালে কোনো পিপিই সরকারিভাবে দেওয়া হয় নি। সেক্ষেত্রে আমরা এই পিপিইগুলো যোগাড় করে নিচ্ছি। আর তাই আলাদাভাবে দাম রাখা এলে ভুল কিছু বলে মনে করছি না।’

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে যাওয়া একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিটি রোগীর কাছ থেকে এভাবে বিল নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে দেখা গেল যে এক্সামিনেশন গ্লোভস পরে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে তা পরে তো অন্য রোগীকেও সেবা দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে এমন আনুষঙ্গিক আরও কিছু পিপিই আছে যা দায়িত্বরত চিকিৎসকরা আলাদা আলাদা ব্যবহার করছেন না ভিন্ন ভিন্ন রোগী দেখার সময়ে। তাই এভাবে আলাদা আলাদাভাবে দাম রাখাটা কতটা যৌক্তিক?’

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. শাগুফা আনোয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমন অভিযোগ আসলে ভিত্তিহীন। কারণ যিনি বলছেন তিনি যদি এই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন তবে তার তো সম্ভব না এক রুম থেকে আরেক রুমে গিয়ে পরীক্ষা করা। আর সে কারণেই হয়তো এই ভুল ধারণা হয়েছে। এখানে চিকিৎসাসেবা দেওয়া প্রতিটা মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করণের পাশাপাশি রোগীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। আলাদা ডোনিং ও ডোফিং ব্যবস্থা করা আছে চিকিৎসাসেবাদানকারীদের জন্য। তাই এক পিপিই পড়ে অন্য রোগী দেখার অভিযোগ আসলে সঠিক না ‘

বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর কাছ থেকে আলাদাভাবে পিপিই দাম নেওয়া হচ্ছে এ বিষয়ে আমার জানা নেই।’

তিনি বলেন, ‘পিপিই বিষয়ে আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছিলাম যেন সব বেসরকারি হাসপাতালে তা সরবরাহ করা হয়। তবে সেটি সম্ভব না বলেই জানানো হয়েছে আমাদের। এক্ষেত্রে আমাদের কোথা থেকে মানসম্পন্ন পিপিই পাব বা কোন স্টান্ডার্ডের পিপিই দিতে হবে এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর তাই আমরা সকল বেসরকারি হাসপাতালে সেই মোতাবেক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়ে জানিয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

রোগীদের থেকে আলাদাভাবে পিপিইর দাম নেওয়া কতটুকু যৌক্তিক এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আমিনুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

সারাবাংলা/এসবি/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন