বিজ্ঞাপন

ত্রাণের রাজনীতি, রাজনীতির ত্রাণ

May 17, 2020 | 12:46 am

বাংলাদেশের রাজনীতির অবকাঠামোর সর্বনিম্ন ইউনিট হল ‘ওয়ার্ড’। এরপর ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও দেশ। স্থানীয় সরকার কাঠামো এরকমই সাজানো। কাজেই দেশে যে কোন কার্যক্রম চালাতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার ক্ষুদ্রতম ইউনিট ‘ওয়ার্ড’ পর্যায়ের কার্যক্রম সঠিকভাবে ঢেলে সাজানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাসের এই কঠিনতম সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম চলছে ওয়ার্ডকে কেন্দ্র করেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ‘ওয়ার্ড’ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে ত্রাণ গ্রহিতার তালিকা প্রণয়ন ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। ওয়ার্ড পর্যায়ের এই ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা কমিটি যেভাবে করার কথা বলা হয়েছে তা হলো-

ক. সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর/মেম্বার- আহবায়ক
খ. উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (১ জন)- সদস্য
গ. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (১জন)- সদস্য
ঘ. গণ্যমান্য ব্যক্তি (২জন)- সদস্য (জেলা প্রশাসক/উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে পরামর্শক্রমে)
ঙ. স্থানীয় মসজিদের ইমাম (১ জন)- সদস্য
চ. আনসার ভিডিপি সদস্য (১ জন)- সদস্য

প্রটোকল অনুযায়ী, এই ওয়ার্ড কমিটি গঠন করবে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান অথবা পৌরসভা চেয়ারম্যান। তারপর অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দিবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে। সেখান থেকে তা জেলা পর্যায়ে সংরক্ষণ ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পাঠানো হবে।

বিজ্ঞাপন

আমি ব্যক্তিগতভাবে সবসময়ই ওয়ার্ড পর্যায়ের রাজনৈতিক ও স্থানীয় সরকার নেতৃত্ব নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকার চেষ্টা করি। ওয়ার্ডের কমিশনার/মেম্বারকে এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে তাদের কার্যক্রম ও গতিবিধি নজর রাখার চেষ্টা করি। বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম সুষ্টভাবে কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে তার নির্ভর করে কতো নির্ভুলভাবে এই ত্রাণ সম্পর্কিত ওয়ার্ড কমিটিগুলো হয়েছে। এই ওয়ার্ড কমিটিই কিন্তু সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ত্রাণ/ভাতা ইত্যাদির সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে পাঠায়, সেখান থেকে তা জেলা কার্যালয়ে পাঠানো হয় বাস্তবায়নের জন্য। আমি যেগুলো উল্লেখ করলাম তা হল সরকারী ব্যবস্থাপনার কথা। এর বাইরে বিভিন্ন রকম দলীয় বা ব্যক্তিগত ত্রাণ কার্যক্রম আছে তা এখানে আলোচনার বিষয় নয়।

আমার কাছে বেশ কিছু অভিযোগ আছে, যেখানে স্পষ্টতই দেখা যায় যে, সরকারী ত্রাণ/ভাতা কমিটিগুলো যথাযথ নির্দেশনা মেনে করা হয়নি এবং সেগুলো যথাযথ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসককে জানানোর পরও তেমন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আমি যেহেতু হবিগঞ্জ জেলার অধিবাসী তাই আমার নিজ জেলার দুই ধরনের দুটি উদাহরণ দিব। সেখান থেকে পরিলক্ষিত হবে যে, এই ওয়ার্ড কমিটিগুলো যথাযথভাবে হয়নি। যার কারণে এই অনিয়মতান্ত্রিক কমিটিগুলো সঠিকভাবে ত্রাণ/ভাতা প্রাপ্তদের নামের সঠিক তালিকা প্রণয়নে ব্যর্থ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার ১নং স্নানঘাট ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড এবং ৪নং ওয়ার্ডের ত্রাণ কমিটির একটি চিঠি আমরা পেয়েছি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ওয়ার্ডের মেম্বার যথাক্রমে মো. আব্দুর রহিম এবং মো. আব্দুল মতলিবকে কমিটিতে রাখা হয়নি। শুধু তাই নয়, গণ্যমান্য ব্যক্তি কোটায় সাধারণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে রাখা হয়ে থাকে। এই কমিটিতে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কোটায় যে দুজনকে রাখা হয়েছে, সাধারণ জনগণের কাছে তারা কোনভাবেই গণ্যমান্য ব্যক্তি কোটায় পড়তে পারেন না। এই বিষয়ে উল্লেখিত মেম্বার একটি অভিযোগনামা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসককেও দিয়েছেন। কিন্তু অদ্যাবধি এর কোন বিহিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

দৈনিক আমার হবিগঞ্জ এর পক্ষ থেকে স্নানঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. আব্দুর রহিম এবং ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. আব্দুল মতলিব কখনো ইউনিয়ন অফিসে আসেন না এবং আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেন না। তিনি নিষ্ক্রিয় একজন মেম্বার। এজন্য তাকে কমিটিতে রাখা হয় নাই।
তাছাড়া আমরা জেনেছি, বানিয়াচং উপজেলার ১নং ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড সভাপতি-সেক্রেটারিকে না জানিয়ে ত্রাণের তালিকা করায় ঐ ওয়ার্ড মেম্বার দেওয়ান নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরীর বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন উক্ত ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি আইবুর রহমান ও সেক্রেটারি জমির আলী।

দৈনিক আমার হবিগঞ্জের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় ১নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন এর সাথে। তিনি জানান, ৩ নং ওয়ার্ডের কমিটিতে নিয়ম অনুযায়ীই দুজন গণ্যমান্য ব্যক্তি রাখা হয়েছে। তবে আমাকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বা সেক্রেটারিকে রাখা হয়নি। আমি ওয়ার্ড মেম্বার নাছির উদ্দিনের সাথে আলাপ করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।

সামগ্রিক বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক আমার হবিগঞ্জকে জানান, আমার কাছে ওয়ার্ড ত্রাণ বিষয়ক কমিটি বিষয়ে যখনই কোন অভিযোগ আসে আমি তা সাথে সাথেই সমাধান করি। তিনি আরো বলেন, এরকম কোন অভিযোগ থাকলে তাকে এসএমএস করে জানাতে। তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।

বিজ্ঞাপন

কাজেই আমরা দেখতে পাই, দুই ধরণের অভিযোগ প্রায় ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিতেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রথমত, কোথাও কোথাও ওয়ার্ড মেম্বার/কমিশনারকে কমিটিতে রাখা হয় নাই। আবার কোথাও কোথাও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কোটায় যে দুজন নেওয়া হচ্ছে সেখানে ক্ষমতাসীন দলের ওয়ার্ড সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে রাখা হচ্ছে না কমিটিতে। মূলত এই দুই কারণে ওয়ার্ড ত্রাণ কমিটিগুলো সঠিকভাবে ত্রাণ/ভাতা প্রাপ্ত সুবিধাভোগীদের তালিকা করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সরকারও সমালোচিত হচ্ছে। এই বিষয়গুলো আশু সমাধান প্রয়োজন।

লেখক: সমাজকর্মী, প্রতিষ্ঠাতা: আমার ব্লগ ও আমার এমপি, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সেক্রেটারি- লন্ডন আওয়ামীলীগ

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন