বিজ্ঞাপন

জেলা সম্মেলনে নামছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, শিগগিরই শূন্যপদ পূরণ

November 1, 2020 | 8:50 am

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দৃষ্টান্তে প্রশংসার ভাগীদার হয়ে এবার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করার লক্ষ্যে মাঠে নামছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সাংগঠনিক অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের পরামর্শে দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা শাখার কমিটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে জেলা সম্মেলন করতে চাই ছাত্রলীগ। এ জন্য শিগগিরই সাংগঠনিকভাবে সমন্বয় টিমকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। পাশাপাশি পূরণ করা হবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্য পদগুলোও।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দেখভালে দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের তিন শীর্ষ নেতার সঙ্গে সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যের রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই শীর্ষ নেতাকে এমন গাইডলাইন দেন দায়িত্বশীল নেতারা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক বি. এম মোজাম্মেল হক।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, এই পর্যন্ত বর্তমান কমিটির আওতায় তিনটি জেলা শাখা ইউনিটের সম্মেলন করা হয়েছে। এগুলো হলো চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ এবং নড়াইল জেলা। এ ছাড়া সম্প্রতি ৫টি মেডিকেল কলেজ শাখার কমিটি গঠন করা হয়। পাশাপাশি ১৫টি জেলা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

বৈঠকে সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্বশীল নেতারা বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটিগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে সম্মেলন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। যেসব জেলায় দীর্ঘদিন থেকে সম্মেলন হয়নি সেসব জেলাগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সামাজিক সুরক্ষা বিধি প্রতিপালন করে সংশ্লিষ্ট জেলার নেতাদের সঙ্গে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সম্মেলনগুলো সম্পন্ন করার গাইডলাইন দিয়েছেন দায়িত্বশীল নেতারা। গঠনতন্ত্রে না থাকলে সংগঠনের অতীত ঐত্যেহের ধারাবাহিকতায় জেলাভিত্তিক সাংগঠনিক সমন্বয় টিম গঠন করে দায়িত্ব বণ্টন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া হল কমিটি গুলো গঠন করার নির্দেশনা দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগের নেতারা অবিহত করেন, বর্তমানে তো করোনা ভাইরাস মহামারি সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে । এমতাবস্থায় হল কমিটিগুলো করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অবহিত করেন। এতে পরিস্থিতি বিবেচনায় হল কমিটিগুলো দেওয়ার কথা জানান ওবায়দুল কাদের। ছাত্রলীগ নেতারা ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সালাম বিনিময় করতে গেলে তিনি এমন কথা বলেন।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাাংলাদেশ ছাত্রলীগের ১১১টি সাংগঠনিক জেলা শাখা রয়েছে। এসব জেলা শাখার প্রতিটি ইউনিটে একটি করে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সমন্বয় টিম গঠন শিগগিরই গঠন করার উদ্যোগ করা হবে। এসব টিমে কেন্দ্রীয় নেতাদের দুই তিন জন করে নেতারা দায়িত্বে থাকবেন। আমরা বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মানবিক কল্যাণমুখী কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি। এরইমধ্যে করোনা পরিস্থিতির সংক্রমণ হার কম হওয়ার কারণে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তৎপরতা জোরদার করার লক্ষ্যে সারাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটিগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে সম্মেলন করার নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। পাশাপাশি বিভিন্ন অভিযোগে কেন্দ্রীয় কমিটির ৩২ জন নেতাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। সেই সব শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যেও যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এসব পদে নতুনদের অন্তর্ভুক্তি করে শীঘ্রই পূরণ করা হবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাসে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের ৩২জন সদস্যকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা অতীতে না থাকলেও সাংগঠনিক শুদ্ধতা হিসেবে এটি করা হয়েছে। এরইমধ্যে যাচাই-বাছাই শেষ পর্যায়ে আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সব পদ পূরণ করে ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হবে।’

এ সব শূন্য পদে কারা অগ্রাধিকার পাবে জানতে চাইলে আল নাহিয়ান জয় বলেন, ‘যারা দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে, পদবঞ্চিত হয়েও সংগঠনের কাজে সময় দিচ্ছে, যাদের সাংগঠনিকভাবে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, গ্রহণযোগ্যতা ও ত্যাগ রয়েছে তাদেরকেই মূল্যায়ন করা হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন দেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে করোনাকালে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সম্মেলন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটিগুলোর সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোতে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করা হয়েছে বলেও সারাবাংলাকে অবহিত করেন জয়।

চাঁদাবাজির অভিযোগে বছরখানেক আগে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতির পর সাংগঠনিক ভাবমূর্তি ফেরাতে কমিটির সহ-সভাপতিকে সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে থমকে ছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পূর্ণমিলনীর অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কমিটি গঠনসহ সংগঠনকে গতিশীল করার প্রক্রিয়া থমকে দাঁড়ায়। তাই এখন দীর্ঘদিন থেকে সম্মেলন না হওয়া সাংগঠনিক জেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ শাখা কমিটিগুলোর সম্মেলন করার দিকে নজর দিচ্ছে সংগঠনটি।

এ লক্ষ্যে বিভিন্ন জেলা, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক কাজ তত্ত্বাবধানের জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে একটি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হবে। সংগঠনের সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সহসম্পাদক, সম্পাদক, উপসম্পাদক ও সদস্যদের নিয়ে এই টিম গঠন করা হবে। ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনের পর গঠিত কমিটির সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টন এখনও হয়নি।

জানা গেছে, ছাত্রলীগের ১১১টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির প্রায় সবই মেয়াদ পেরিয়ে গেছে। একবছর মেয়াদী কমিটিগুলো বেশ কয়েক বছর ধরেই মেয়াদোত্তীর্ণ। নড়াইল, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়- এই পাঁচটি সাংগঠনিক জেলার কমিটি হয় শোভন ও রাব্বানী দায়িত্বে থাকার সময়। শোভন ও রাব্বানীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমান নেতৃত্ব সম্মেলন হওয়া জেলাগুলোতেও কমিটি করতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন