বিজ্ঞাপন

করোনার ধাক্কায় ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে এমজিএসপি প্রকল্পে

December 1, 2020 | 8:14 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনার ধাক্কায় বাংলাদেশে চলমান প্রায় সব প্রকল্পই সাময়িক বাধার মুখে পড়ে। আবার কিছু প্রকল্পের কাজে আসে ধীর গতি। করোনার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় এবার ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে মিউনিসিপ্যাল গভরন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস (এমজিএসপি) প্রকল্পে। দ্বিতীয়বারের মতো প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) উঠছে মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ২ হাজার ৪৭০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৫৫৪ কোটি ৮ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা থেকে ১ হাজার ৯৫৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। পরবর্তীতে নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়ানো হয়নি। এবার দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ২৭৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৪৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা, যা মূল প্রকল্প ব্যয়ের ১১ দশমিক ২২ শতাংশ। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৫৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা থেকে ২ হাজার ৩২৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এক্ষেত্রে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ কমেছে ২১ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বাড়ছে ১৯ দশমিক ১২ শতাংশ।

মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই বাস্তবায়নের কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ৬ মাস মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কোভিড-১৯ এর কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন স্থগিত থাকায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে এবার ব্যয়সহ মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ নগরায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। নগরের জনসংখ্যা ১৯৭৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দ্রুত নগরায়নের ফলে বাংলাদেশের শহর ও নগরগুলো অবকাঠামো এবং সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। জীর্ণ অবকাঠামো, অপর্যাপ্ত সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, যানজট, পরিবেশ দূষণ বাংলাদেশের নগরগুলোর স্বাভাবিক চিত্র। যা শহরের উন্নত জীবন যাপনের একটি বড় বাধা।

বিজ্ঞাপন

এজন্য বিশ্বব্যাংক শহর এলাকার মৌলিক নাগরিক সেবা দেওয়া এবং পৌর প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য মিউনিসিপ্যাল সার্ভিসেস প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করে। যেটি ২০১২ সালের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। এমএসপিতে দুটি সিটি করপোরেশন (রাজশাহী এবং খুলনা) এবং ১৭টি পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এমএসপির মাধ্যমে বিএমডিএফ নামে একটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়, যা স্থানীয় পর্যায়ে পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনগুলোকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অর্থ ঋণ দিয়ে সাহায্য করছে।

এমএসপির মাধ্যমে স্থানীয় পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোকে দক্ষতা বাড়ানো এবং ফলপ্রসু ব্যবস্থাপনার জন্য সহায়তা দেওয়া হয়, যাতে তারা তাদের মূল পরিষেবা দেওয়ার দক্ষতা, রাজস্ব আদায়, সঠিক পরিকল্পনা, ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়াদি এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারে। এমএসপির মূল লক্ষ্য ছিল শহরের পরিবেশ, অবকাঠামো এবং সেবার মান উন্নয়ন করা।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা প্রবেশের কারণে অতিরিক্ত বৈদেশিক ঋণ প্রাপ্তি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পে দুটি নতুন পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পরামর্শ পরিষেবা, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য ব্যয়ের পরিবর্তন এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশিদ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের নির্বাচিত সিটি করপোরেশনগুলো এবং বিভিন্ন পৌরসভার অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ নগর পরিষেবা, পৌর গভর্নেন্স, আর্থিক পরিচালনা এবং নিজস্ব-উৎসের আয় বাড়াতে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া কার্যকর টেকসই পদ্ধতিতে পরিকল্পনা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ইউএলবিগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার জেলার কক্সবাজার ও টেকনাফ পৌরসভা দুটির জরাজীর্ণ নগর অবকাঠামোর পুনর্বাসন সম্ভব হবে।’

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- ৯৯০টি আসবাবপত্র ক্রয়, ৭৮টি যানবাহন সংগ্রহ, পরামর্শক ও সরবরাহ সেবা, মেরামত ও সংরক্ষণ এবং ৭৩ জনের বেতন-ভাতা প্রদান।

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন