বিজ্ঞাপন

বিএনপির-২০২০: খালেদার মুক্তিতে স্বস্তি, প্রক্রিয়ায় অস্বস্তি

December 30, 2020 | 10:41 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ২০২০ সালটা ছিল বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের। ক্ষুদ্র এই অণুজীবটি এক হাতে নাচিয়েছে গোটা বিশ্বকে। মানব জাতিকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। করোনাভাইরাস বিশ্বসভ্যতাকে ছুঁড়ে দিয়েছে বড় এক চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনো হিমশিম খাচ্ছে গোটাবিশ্ব। অসহায় আত্মসমপর্ণের পথে রয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো।

বিজ্ঞাপন

সঙ্গত কারণেই বৈশ্বিক অর্থনীতি, যোগাযোগ, ক্রীড়া, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি বিশ্ব রাজনীতিও আটকে পড়েছে ‘লকডাউন’-এর ফাঁদে। তবুও ‘অন্ধ হলেই তো প্রলয় বন্ধ থাকে না’। এই বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্ষমতাধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট’ নির্বাচন। সূচিত হয়েছে ক্ষমতার হাতবদল।

না— বাংলাদেশে তেমন কিছু ঘটেনি। ঘটার কথাও ছিল না। তবে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির জন্য করোনা কিছুটা আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে বৈকি! বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার ১৭ দিনের মাথায় সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য সাময়িক মুক্তি পান দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। টানা ২৫ মাস, ১৭ দিন কারাগারে থাকার পর বিদায়ী বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়ার এই কারামুক্তি বিএনপিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে।

বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ সাময়িক মুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় ধাপে সাময়িক মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়। ফলে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার স্বজনদের মধ্যে স্বস্তির মাত্রাটাও বেড়ে যায়। তবে সাময়িক মুক্তি নিয়ে স্বস্তির বিপরীতে অস্বস্তিও কম ছিল না। খালেদা জিয়ার এই মুক্তি সরকারের সঙ্গে বিএনপির আপসকামীনতার ফসল— এমন মন্তব্য খোদ বিএনপি নেতাদের। এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কথা বলে দলের একাধিক নেতা হাইকমান্ডের বিরাগভাজন হয়েছেন। দুই জনকে দেওয়া হয়েছে কারণ দর্শাও নোটিশ। কারও কারও ভাগ্য ঝুলছে পেণ্ডুলামের মতো!

বিজ্ঞাপন

বছরের শুরুতে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে রাজনীতির মাঠ কিছুটা হলেও গরম রাখতে সক্ষম হয় বিএনপি। পরবর্তী সময় করোনার কারণে যশোর-৬ ও বগুড়া-১ উপনির্বচানে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকে দলটি। পরে অবশ্য পাবনা-৪, ঢাকা-৫ ও ১৮, সিরাজগঞ্জ-১ ও নওগাঁ-৬ উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে সব ক’টিতেই পরাজিত হয় এবং যথারীতি ভোট ‘কারচুপি’র অভিযোগ আনে। বছর শেষে অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে দলটি। ২০২০ সালে বিএনপির উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডগুলো ধারাবিহকভাবে তুলে ধরা হলো।

২ তরুণ তুর্কীর মিশন ঢাকা

নানা সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাওয়া বিএনপির বছর শুরু হয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। ঢাকার উত্তর সিটিতে পুরোনো প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে বহাল রেখে দক্ষিণে নতুন প্রার্থী দেয় বিএনপি। প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার বড় ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে দেওয়া হয় ধানের শীষ প্রতীক। শুরু হয় দুই তরুণের মিশন ঢাকা।

বিজ্ঞাপন

প্রচারণার শুরুর দিন ১০ জানুয়ারি বায়তুল মোকারকম থেকে ইশরাক হোসেন এবং উত্তরা থেকে তাবিথ আউয়াল প্রচারণা শুরু করেন। টানা ২০ দিনের নির্বাচনি প্রচারে বিএনপির দুই তরুণ তুর্কী পুরো ঢাকা শহর চষে বেড়ান। তাদের প্রচারে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি ঝিমিয়ে পড়া বিএনপির মধ্যে চাঙ্গাভাব ফিরে আসে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তাবিথ-ইশরাকের নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেন। তবে ১ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন যথারীতি বিএনপির ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাননি। দিন শেষে ভোট প্রত্যাখ্যান ও হরতাল আহ্বানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুই তরুণের মিশন ঢাকা।

৫ বছর পর হঠাৎ হরতাল

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ব্যাপক ‘কারচুপির’ অভিযোগে ২ ফেব্রুায়রি ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে বিএনপি। রাজধানীতে ডাকা সকাল-সন্ধ্যা এ হরতালের আওতামুক্ত থাকে অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, ওষুধ ও খাবারের দোকান, সংবাদপত্রের অফিস, সংবাদপত্রে গাড়ি এবং সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়ি। বিএনপির ডাকা এ হরতালে সমর্থন দেয় ২০ দলীয় জোট, ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (৫ জানুয়ারির নির্বাচন) বর্ষপূর্তির দিন পূর্বঘোষিত সমাবেশ করতে না দেওয়ায় ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেই অনির্দিষ্টকালের অবরোধের মধ্যেই দফায় দফায় চলতে থাকে হরতাল। টানা ৯২ দিনের হরতাল অবরোধ শেষে ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল স্বেচ্ছাবন্দিত্বের অবসান ঘটিয়ে গুলশান কার্যলয় থেকে বেরিয়ে আসেন খালেদা জিয়া। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই হরতাল অবরোধ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে।

বিজ্ঞাপন

এর পর টানা প্রায় পাঁচ বছর আর কোনো হরতাল-অবরোধ দেয়নি বিএনপি। খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পরও হরতাল ডাকেনি তারা। কিন্ত দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে ফল বর্জন ও হরতাল ডাকে বিএনপি। হঠাৎ ডাকা এই হরতালে নিয়ে মানুষের মধ্যে কোনো শঙ্কা বা আতঙ্ক না থাকলেও কৌতূহল ছিল। কিন্তু যথারীতি হরতাল ডেকে ঘর থেকে বের হয়নি বিএনপি। হরতালের দিন রাজধানীর যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক।

করোনার ধাক্কায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত ঘোষণা

চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সব ধরনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করে বিএনপি। বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার একদিন পর বিদায়ী বছরের ১০ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সব ধরনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত ঘোষণা করেন। টানা ছয় মাস ১০ দিন বন্ধ থাকার পর ২০ সেপ্টেম্বর ফের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করে বিএনপি।

খালেদা জিয়ার মুক্তি

বিদায়ী বছরে বিএনপির জন্য সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি। টানা ২৫ মাস কারাভোগের ২৫ মার্চ মুক্তি পান খালেদা জিয়া। সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তির পর গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় ওঠেন তিনি। বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে ছয় মাসের জন্য ‘সাময়িক’ মুক্তির পুরো বিষয়টি ‘ডিল’ করে খালেদা জিয়ার পরিবারের। পরিবারের স্বজনদের বিশেষ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। মুক্তির প্রথম ছয় মাস পার হলে সেপ্টম্বর মাসের ২৫ তারিখ থেকে দ্বিতীয় ধাপে আরও ছয় মাস মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ এবং বিদেশে না যাওয়ার শর্তে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার এই সাময়িক মুক্তি কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে বিএনপিতে।

করোনা মোকাবিলায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ প্রস্তবনা

করোনাভাইরাসজনিত বৈশ্বিক মহামারির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্যাকেজের প্রস্তাবনা দেয় বিএনপি। এই প্রণোদনা প্যাকেজের ৬১ হাজার কোটি টাকা স্বল্প মেয়াদি খাতে, ১৮ হাজার কোটি টাকা মধ্য মেয়াদি খাতে এবং ৮ হাজার কোটি টাকা অদৃশ্য ও অন্যান্য খাতে ব্যয় করার প্রস্তাব দেয় তারা। ৪ এপ্রিল গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

ফখরুলের বাসায় বিএনপি কর্মীদের হামলা

১০ অক্টোবর বিকেলে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কের ২৩ নম্বর বাসায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফ্ল্যাটে ইট-পাটকেল ও ডিম নিক্ষেপ করে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা। এ ঘটনার জন্য সরকারি লোকজনদের দায়ী করা হলেও ১২ অক্টোবর দক্ষিণখান থানা বিএনপির সহসভাপতি ফুল ইসলাম, সদস্য নাজিম উদ্দিন দেওয়ান, আহমজাদ হোসেন, দক্ষিণখান থানা বিএনপির (৫০ নম্বর ওয়ার্ড) সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোখলেছ, উত্তরা পূর্ব থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তাইজুল ইসলাম, মতিউর রহমান মতি, যুগ্ম সম্পাদক এম এ হান্নান মিলন, দফতর সম্পাদক হাবিবুর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদের স্বপন, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ ও সদস্য নূর মোহাম্মদকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে বিস্তৃত কর্মসূচি গ্রহণ

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য ১১৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামকে। এই কমিটি ২০২১ সালব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে।

কমিটিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা স্থান পান। পরে ২২ ডিসেম্বর দলের ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রমকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ২৫টি উপকমিটি গঠন করে বিএনপি।

মেজর হাফিজ ও শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

১৪ ডিসেম্বর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে হাফিজ উদ্দিন আহমদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয় বিএনপি। বেঁধে দেওয়া পাঁচ দিন সময়ের মধ্যেই তিনি কারণ দর্শাও নোটিশের জবাব দেন। একই দিনে দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকেও একই অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তিনিও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দলের নয়াপল্টনের কার্যালয়ে লিখিত জবাব জমা দেন। তারপরও এ দু’জনকে বাদ দিয়েই ১৫টি কমিটি এবং ১০টি বিভাগীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করে বিএনপি।

মাঠে বিএনপি, বাসে আগুন

সিরাজগঞ্জ-১ ও ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনের ভোট ‘ডাকাতি’র অভিযোগে এনে ১২ নভেম্বর হঠাৎ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপি। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া আয়োজিত ওই বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে রাজধানীর আটটি স্থানে গণপরিবহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনীতির মাঠ। অনিবার্যভাবেই এই ঘটনার দায় বিএনপির ওপর বর্তায়। দলটির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেওয়া হয়। গ্রেফতার হন বেশ কিছু নেতাকর্মী। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়— ‘ভোট ডাকাতি’ আড়াল করতেই পরিকল্পিতভাবে গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

সিনিয়রদের বক্তব্যে বিব্রত বিএনপি

খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বিএনপিতে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এলেও মুক্তির প্রক্রিয়ার মধ্যে ‘আপসকামিতা’র গন্ধ পান দলটির কোনো কোনো নেতা। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যেই কথা বলেন কয়েকজন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়া কিসের আপসহীন। আপস না করলে উনি জেল থেকে বের হলেন ক্যামনে। সরকারের কথা শুনেই তো বেরিয়ে এসেছেন। বেগম জিয়া তিন বার প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন তার একটিই কারণ, তিনি জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী। তার নিজের কোনো যোগ্যতা নেই। আর যোগ্যতা আসবে কোথা থেকে? যোগ্যতার জন্য তো লেখাপড়া করতে হয়!’

গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সরকারের সঙ্গে আপস করে ফেলেছি। এ কারণে বেগম জিয়া জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু জনমনে তার যে স্থায়ী আসন, তার কোনো রিপ্লেসমেন্ট নেই। খালেদা জিয়াই বিএনপির বর্তমান ও ভবিষ্যতের একমাত্র নেতা। তারপরে কে জানি না।’

ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, ‘তারেক রহমান কতটুকু দল চালাতে পারবেন আপনারাও দেখেন, আমিও দেখি। লন্ডনে বসে কথাবার্তা-ভাব আদান-প্রদান করা কঠিন। তিনি খোমিনি নন।’

কয়েকজন বর্ষীয়ান নেতার এ ধরনের বক্তব্যে বিব্রত হয় বিএনপি। বছরের একেবারে শেষ দিকে এসে ১৪ ডিসেম্বর দলের দুই ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিএনপি। নোটিশে ‘অপমান’ হয় দল থেকে পদত্যাগের ইঙ্গিত দেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম।

করোনায় প্রাণ গেছে অসংখ্য নেতাকর্মীর

বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা এবং মাঠ পর্যায়ের অসংখ্য কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। করোনায় মৃত্যুবরণ করা উল্লেখযোগ্য নেতার হলেন— বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, চেয়ারপারসনের উদেষ্টা এম এ হক, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, বিএনপির সহসাংগঠনিক সসম্পাদক আব্দুল আউয়াল। এরা ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন।

বছুরজুড়ে ভার্চুয়াল কর্মসূচি

প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সক্রিয় থাকলেও বিএনপির মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কোনো ফেসবুক আইডি নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সজিব ওয়াজেদ জয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থাকলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফেসবুক ব্যবহার করেন না। এমনকি দলটির সব চেয়ে সক্রিয় নেতা রুহুল কবির রিজভীরও নেই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট।

‘সামাজিক নিরাপত্তা’র স্বার্থেই ‘সামাজিক যোগাযোগ’ মাধ্যম এড়িয়ে চলেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপি সব পর্যায়ের নেতারা এখন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। করোনাকালে দলটির রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের ৯০ ভাগই কর্মকাণ্ড ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হচ্ছে।

বিদায়ী বছরে অন্তত দেড় শতাধিক ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম করেছে বিএনপি। প্রতি সপ্তাহে একটি করে প্রাসঙ্গিক সংলাপ, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিষয়ভিত্তিক ভার্চুয়াল সেমিনার, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নিয়মিত প্রেস কনফারেন্স ইত্যাদি ছিল তাদের এই আয়োজনে।

দলের ভার্চুয়াল এই কর্মকাণ্ডের লজিস্টিক ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনের (বিএনআরসি) একটি উইং, যেটি মূলত ‘বিএনপি কমিউনিকেশন’ নামে পরিচিতি। এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা জহিরুদ্দীন স্বপন।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন