বিজ্ঞাপন

অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিনই উৎসব শুরু, ৭ মার্চেও কর্মসূচি

February 17, 2021 | 7:39 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব শুরু করার কথা ছিল। তবে অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন থেকেই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন শুরু করবে বিএনপি। ২ মার্চ ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস এবং ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ— এ দুই দিন ব্যাপক কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বিএনপির বছরব্যাপী উৎসব। এছাড়া ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের দিনটিতেও কর্মসূচি পালনের চিন্তা-ভাবনা করছে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্রমতে, মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনটিকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে ধরে নিয়ে ২৬ মার্চ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব শুরু করার চিন্তা-ভাবনা ছিল বিএনপির। সেই লক্ষ্যেই স্বাধীনতার সুর্ণজয়ন্তী’র লোগোতে ’২৬ মার্চ ১৯৭১: যেখান থেকে শুরু’ স্লোগান জুড়ে দিয়েছিল দলটি।

কিন্তু বিএনপির হাইকমান্ড মনে করে, ‘শুরুরও একটা শুরু আছে’। ২৬ মার্চ থেকে উদযাপন শুরু করলে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত অধিবেশন বাতিলের ঘোষণা এবং এর পরিপ্রেক্ষিত ঢাকা স্টেডিয়ামে চলতে থাকা পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ ফেলে দর্শকের রাস্তায় বেরিয়ে আসা, স্লোগানের স্লোগানে রাজপথ উত্তাল করে তোলা, ২ মার্চ ছাত্রনেতা আ স ম আবদুর রবের স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন, ৩ মার্চ শাহজাহান সিরাজের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ— এসব বড় কর্মসূচি ও ঘটনা বাদ পড়ে যায়। যেহেতু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবকে সার্বজনীন করাটাই লক্ষ্য, তাই এসব ঐতিহাসিক দিনগুলোও কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে স্মরণ করতে চায় বিএনপি। সে কারণেই ১ মার্চ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি উদ্বোধন করবে দলটি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণয়জন্তী উদযাপন উদ্বোধন হবে পহেলা মার্চ। ওই দিন থেকে শুরু হবে আমাদের কর্মসূচি।’

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, উদ্বোধনী দিনেই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী প্রচার কমিটির পক্ষ থেকে সারাদেশে পোস্টার প্রকাশ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক, ছবি, থিম থাকবে ওইসব পোস্টারে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া হবে পোস্টারগুলো। তবে পোস্টারে দলীয় কোনো প্রতীক রাখবে না বিএনপি।

এদিকে, বছরব্যাপী এ আয়োজন সফল করতে এরই মধ্যে সিনিয়র ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে জাতীয় কমিটি, বিষয়ভিত্তিক কমিটি, বিভাগীয় কমিটি, বহির্বিশ্ব কমিটি, পেশাজীবী কমিটি, এশিয়া প্যাসিফিক কমিটিসহ মোট ৩১টি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দলীয়ভাবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই উদ্যোগ নিলেও বিষয়টিকে সার্বজনীন করার লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে বিএনপি। বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে সীমিত পরিসরে যতটুকু আয়োজন সম্ভব, তার সবটুকুই তারা দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে করতে চায় বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্রমতে, বাংলাদেশ বিনির্মাণে আবহমান কাল থেকে চলে আসা স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ অবদান রাখা সব রাজনৈতিক দলের কিংবদন্তীতুল্য নেতাদের স্মরণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা এবং সব ধরনের আয়োজনের একটি সর্বজনীন চেহারা দেওয়ার চেষ্টা থাকবে বিএনপির।

জানা গেছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির প্রথম বৈঠকে বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিল— শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমসহ জাতির মহান নেতাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে।

সূত্রমতে, বিগত দিনগুলোতে মহান বিজয় দিবসসহ অন্যান্য জাতীয় দিবসগুলোতে কেবল বিএনপিতে থাকা মুক্তিযোদ্ধা বা ‘বিএনপিমনা’ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা জানানো হতো। তবে সুবর্ণজয়ন্তীতে দলমত নির্বিশেষ সব মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এ লক্ষ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর বীর উত্তমকে আহ্বায়ক করে ‘মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা’ উপকমিটিও গঠন করা হয়েছে।

শুধু মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা নয়, দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী অন্যান্য আয়োজনও হবে দলনিরপেক্ষ ও সার্বজনীন— এমনটিই বলছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতিবিজড়িত স্থান, আলোকচিত্র, নথিপত্র, প্রামাণ্যচিত্র সংগ্রহ ও প্রদর্শনের ক্ষেত্রে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় বহন করবে না উদযাপন কমিটি। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় কোনো রাজনৈতিক খোলসে বন্দি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

এ কারণেই ২৬ মার্চ থেকে শুরু না করে ১ মার্চ থেকে উৎসব শুরু করছে তারা। কারণ, ২৬ মার্চের আগে অন্তত চারটি ঐতিহাসিক দিন রয়েছে— যেগুলো বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর এ দিবসগুলোকে মাথায় রেখেই কর্মসূচি সাজিয়েছে বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দলীয় দৃষ্টিভঙ্গীর ঊর্ধ্বে উঠে আমরা কর্মসূচি সাজিয়েছি। আমরা কখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করি না।’

৭ মার্চ (বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ) ও ১৭ মার্চ (বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন) উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি থাকবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব কর্মসূচি নিয়েছি, উদ্বোধনীর দিন সেগুলো আপনাদের (সাংবাদিক) জানিয়ে দেওয়া হবে।’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ‍উদযাপন নিয়ে দলীয় লক্ষ্য সম্পর্কে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসউইং সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক শায়রুল কবির খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সার্বজনীন এ আয়োজনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দর্শন, খালেদা জিয়ার সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের প্রচেষ্টাকেও তুলে ধরা হবে।’

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন