বিজ্ঞাপন

‘ভোটের জন্য বঙ্গবন্ধু কখনো সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপস করেননি’

March 15, 2021 | 9:42 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো পরিস্থিতিতেই সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে মাথানত করেননি বলে মন্তব্য করেছেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আজ আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলতে অনেকে লজ্জা পাই। আমরা অনেকে নানা কারণে এমন শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করি, যারা সিলেবাস বদলে দিতে চায়। আমরা তাদের সঙ্গে আপস করি, আমরা প্রতিবাদ করি না। অথচ বঙ্গবন্ধু কখনো সাম্প্রদায়িকতার কাছে মাথানত করেননি। অনেক নেতাই করেছেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু করেননি। ভোটের জন্য বঙ্গবন্ধু কখনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সঙ্গে সমঝোতা করেননি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় সোমবার (১৫ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিভিন্ন সংগঠনের সংবর্ধনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে মুনতাসীর মামুন এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর কমান্ড, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি, প্রজন্ম ‘৭১ চট্টগ্রাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রাম মহানগর ও ইতিহাস সম্মিলনীর যৌথভাবে এর আয়োজন করে।

বঙ্গবন্ধু ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছেন— ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। এটাই মূল কথা, এটাই পরবর্তীকালে আমাদের স্লোগান হয়েছে। এটাই ধর্মনিরপেক্ষতা। যদি আপনি বাঙালি হন, আপনাকে এই ধর্মনিরপেক্ষতা অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে। আপনি যদি বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হন, সমাজতন্ত্র অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলতে আপনারা লজ্জা পান কেন? পৃথিবীতে বঙ্গবন্ধুই একমাত্র রাজনীতিবিদ, যিনি রাজনীতিতে ধর্ম নিষিদ্ধ করেছিলেন। আজ আমাদের অনেকের সাহস নেই এ কথা বলার। যদি এটা সাহস করে বলতে পারেন, তাহলে নিজেকে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক বলবেন, না হলে বলবেন না। এত ভয় পাবেন কেন? আপনি তো মুক্তিযুদ্ধে গেছেন শহিদ হওয়ার জন্য। গাজী হয়েছেন আল্লাহর ইচ্ছায়। তাহলে কেন অপশক্তির কাছে মাথানত করবেন? কেন তাদের বিরুদ্ধে নামবেন না? আওয়ামী লীগের কথা ভুলে যান। আপানারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, আপনারা কেন অপশক্তির সঙ্গে সমঝোতা করবেন?’

‘খালি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, সেটাই একমাত্র দেশপ্রেমের ব্যাপার কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা আছেন কি না— সেটাই বড় ব্যাপার। জিয়া মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা থাকেননি। সেজন্য আজ আমরা জিয়ার নিন্দা করছি। মনে রাখবেন— যত ধনীই হন, একজন রাজাকারের পুত্র কিন্তু রাজাকার পরিচয়ে তার পিতাকে কবর দিতে পারবে না। আর একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যত গরীবই হোন, তিনি কিন্তু বুক উঁচিয়ে বলতে পারবেন আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান,’— বলেন মুনতাসীর মামুন।

বিজ্ঞাপন

 ধার্মিক আর সাম্প্রদায়িক হওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কি মুসলমান ছিলেন না? আমি সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে কথা বলি, তাই বলে কি আমি মুরতাদ? আমিও কিন্তু আলহাজ, প্রধানমন্ত্রী আমাকে হজ করিয়ে এনেছেন। আমাকে যখন তারা মুরতাদ ঘোষণা করল, তখন আমি বললাম— আপনারাই মুরতাদ। কারণ আপনারা একজন হাজিকে মুরতাদ ঘোষণা করছেন। নাম ধরে বলেছি, আপনিও মুরতাদ। কী হয়েছে তাতে?’

দেশে অবাধ দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘আমরা শুধু ইসলামের কথা বলি, আসলে আমরা তো কেউ ধার্মিকও না। ইসলামের মূল কথা হচ্ছে, মানুষের জন্য কল্যাণ। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা কয়জন মানুষের কল্যাণে কাজ করি? মানুষের কল্যাণের জন্যই যদি কাজ করি, তাহলে বাংলাদেশে কেন এত দুর্নীতি হয়, এত ব্যাংক লুটেরা কিভাবে হয়, প্রত্যেক পদে পদে এত লুট কিভাবে হয়? এমনিই ইসলাম ইসলাম করি, কিন্তু আমরা ধর্ম মানি না। আমরা দেশপ্রেমিকও না। দেশপ্রেম থাকলে এত অপকর্ম কি আমরা করতে পারি?’

‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় সম্মানিত বোধ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার— এটা একটা অসামান্য পদ। বাংলাদেশে যেখানে কেউ কোনো পদ পেলেই নানা সমালোচনা-বিতর্ক শুরু হয়। সেখানে আমার পদ পাওয়া নিয়ে হয়নি। এটা আমার কাছে পরম সৌভাগ্যের। আমি রাজনীতি সচেতন বটে, কিন্তু রাজনীতিতে সক্রিয় নয়। আমি একজন শিক্ষক। আমার প্রথম কাজ মাথানত না করা। আমি সরকারের সমর্থক, ঠিক আছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, সরকারের সব কাজকে সমর্থন করে যাব। আমি শিক্ষক, আমি কারও কাছে মাথানত করতে পারি না।’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাম্প্রতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদ আছে। বিশেষ করে উপাচার্য পদে শিক্ষকরা সবাই যেতে চান। এই প্রতিযোগিতা আগে ছিল না। সবাই তো উপাচার্য হবেন না। সবাই প্রধানমন্ত্রী, মেয়র হবেন না। কিন্তু দুই দশক ধরে এমন একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, যিনিই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হচ্ছেন, পরদিন থেকে সবাই তার বিরুদ্ধে লেগে যাচ্ছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমি শিক্ষক হয়েছি, আমি মনে করি আমি ছাড়া কেউ কিছু হবে না। যিনি উপাচার্য হন, তিনি সামন্ত রাজার মতো আচরণ করেন। এই ধারা তো চলতে পারে না।’

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের কমান্ডার মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীন আখতার, সাবেক ডিন গাজী সালেহ উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগরের ডেপুটি কমান্ডার শহীদুল হক চৌধুরী ছৈয়দ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চবি শিক্ষক সেকান্দর চৌধুরী, প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া, ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি মোহাম্মদ সামসুল হক ও সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন