বিজ্ঞাপন

ভ্যাকসিনের পরবর্তী চালান নিয়ে শঙ্কা

March 29, 2021 | 10:28 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে চলছে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম। যারা এরই মধ্যে ভ্যাকসিন পেয়ে গেছেন, তাদের জন্য দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন প্রয়োগের কথা রয়েছে ৮ এপ্রিল থেকে। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’ ভ্যাকসিন দিয়ে চলছে এই কার্যক্রম। তবে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি থেকে ছয় মাসের মধ্যে তিন কোটি ডোজ কোভিশিল্ড পাওয়ার কথা থাকলেও তৃতীয় মাসে এসেই ভ্যাকসিনপ্রাপ্তি নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়, যা স্বীকার করে নিচ্ছেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীই। এ পরিস্থিতিতে ৮ এপ্রিল থেকে দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়টি কিভাবে সমন্বয় করা হবে, তা নিয়েই স্থির কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদফতর।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে গত নভেম্বরেই বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসকে নিয়ে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। চুক্তি অনুযায়ী দেশে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। অর্থাৎ সিরামের কাছ থেকে মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ এনে দেওয়ার কথা বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের।

ওই চুক্তির পর জানুয়ারিতে প্রথম ২০ লাখ ডোজ ‘কোভিশিল্ড’ উপহার হিসেবে পাঠায় ভারত। ওই মাসেই বাংলাদেশের কেনা তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের মধ্যে প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে আসে। চুক্তি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে আরও ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসার কথা থাকলেও এসেছে ২০ লাখ ডোজ। এর মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আরও ১২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন উপহার দিয়েছে ভারত। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে ভ্যাকসিন এসেছে মোট এক কোটি ২ লাখ ডোজ।

এদিকে, আজ সোমবার (২৯ মার্চ) পর্যন্ত সারাদেশে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে ৫৩ লাখ ১৯ হাজার ৬৭৯ ডোজ। সে হিসাবে দেশে এখন মজুত রয়েছে ৪৮ লাখ ৮০ হাজার ৩২১ ডোজ। ৮ এপ্রিল থেকে দেশে দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ শুরু হলে এই মজুত দিয়ে ২০ দিনের বেশি ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি চালানো সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

এর মধ্যে ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নিজস্ব চাহিদার কথা বিবেচনা করে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের রফতানি সাময়িকভাবে স্থগিত কছে দেশটি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চের পর ভ্যাকসিনের বাণিজ্যিক কোনো চালান দেশটির বাইরে যায়নি। এ পরিস্থিতিতে মার্চে ভারত থেকে কোভিশিল্ডের তৃতীয় চালান আসার কথা থাকলেও মার্চের বাকি দুই দিনে যে আর কোনো ভ্যাকসিন আসছে না, তা অনেকটাই নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে এপ্রিলে কবে নাগাদ ভ্যাকসিনের পরবর্তী চালান আসবে, তা নিয়ে সংশয় জানিয়েছেন খোদ স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সময়মতো ভ্যাকসিন পাওয়া না গেলে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

জানতে চাইলে সোমবার (২৯ মার্চ) সারাবাংলাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ভ্যাকসিনের পরবর্তী চালান কবে আসছে, তা নিয়ে আমরা নতুন করে এখনো শিডিউল পাইনি।  চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহের দায়িত্বে আছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। তারা বাংলাদেশে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’। আমরা তাদের মাধ্যমেও জিজ্ঞাসা করেছি। তারা জানিয়েছে, পরের চালানের বিষয়ে তারাও এখনো কোনো খবর পায়নি। তারাও সিরামের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে এখন পর্যন্ত তারা শিডিউল পায়নি।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের চুক্তি অনুযায়ী আরও ২ কোটি ৩০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা আছে। মার্চে ভ্যাকসিনের একটি চালান আসার কথা ছিল। কিন্তু মার্চ তো শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ যেহেতু ভ্যাকসিন কিনে রেখেছে, সেক্ষেত্রে ভারত ভ্যাকসিন রফতানি বন্ধ রাখলেও চুক্তি অনুযায়ী আমাদের কিনে রাখা ভ্যাকসিন পাঠানো বন্ধ করা উচিত হবে না। আমরা এখনো আশা করছি, আমাদের মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই ভ্যাকসিন পাব। সময়মতো ভ্যাকসিন না পেলে চলমান ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচিতে তো প্রভাব পড়বেই।

জাহিদ মালেক আরও বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ভ্যাকসিনের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, আমাদের কেনা যে ভ্যাকসিন আছে, তা যেন তাড়াতাড়ি দেওয়া হয়। উনারাও (ভারত) জানিয়েছেন, এটার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত কোনো তারিখ পাইনি।

এদিকে, সোমবার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সম্প্রসারিত ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন কর্মসূচি আমরা এখনো চালিয়ে যাচ্ছি। এই মাসে ভ্যাকসিনের যে চালান আসার কথা ছিল, সেটি আমরা পাইনি। সেটা সঠিক সময়ে পাওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি জানিয়েছেন। যে সংখ্যায় টিকা পাওয়ার কথা, তা আমরা পেয়ে গেলে আমাদের কার্যক্রম ব্যাহত হবে না। আর যদি ভ্যাকসিন না পাই, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই নতুন করে চিন্তা করতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু ওখান থেকেও কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না। উনারা বলেছেন, মে-জুনের আগে কোভ্যাক্সের কোনো ভ্যাকসিন আসছে না। তারপরও সরকার অন্যান্য উৎস থেকে ভ্যাকসিন পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যদি সেসব স্থান থেকে কোনো আশ্বাস পাই, তবে আমরা ইতিবাচকভাবে এগিয়ে যাব। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন, যেন আমরা ভ্যাকসিন পাই এবং কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।

বিজ্ঞাপন

সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের পরবর্তী চালান কবে আসবে— এ বিষয়ে জানতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) রাব্বুর রেজার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তার মোবাইলে এসএমএস দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

ভ্যাকসিনের পরবর্তী চালান সঠিক সময়ে পাওয়া না গেলে কী করা হবে— জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এনসিডিসি শাখার লাইন ডিরেক্টর ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন সারাবাংলাকে বলেন, দেশে এখন করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। দ্বিতীয় ডোজের পরিকল্পনা আমাদের আগেই করা আছে। চুক্তি অনুযায়ী এই মুহূর্তে ভ্যাকসিন না এলেও পরে তো আসবে। ফলে এখন যে পরিমাণ ভ্যাকসিন আছে, তা দিয়েই দ্বিতীয় ডোজও শুরু করা হবে। এর মধ্যে ভ্যাকসিন পেয়ে গেলে আর কোনো সমস্যা হবে না। আমরা আশা করছি, এর মধ্যে ভারত থেকে ভ্যাকসিন রফতানি বিষয়ক নিষেধাজ্ঞাও উঠে যাবে।

কোভ্যাক্সসহ অন্যান্য উৎস থেকে ভ্যাকসিন আমদানির চেষ্টা সরকার চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন ডা. রোবেদ আমিনও। তিনি আশা করছেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকলে মজুত শেষ হওয়ার আগেই কোনো না কোনো উৎস থেকে নতুন চালানের ভ্যাকসিন দেশে চলে আসবে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন আছে, তাতে আমার ধারণা দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগে খুব একটা বেশি সমস্যা হবে না। তাছাড়া কোভ্যাক্সের ভ্যাকসিনও বাংলাদেশ পাবে। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী চাহিদা বাড়ার কারণে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও যেহেতু বাংলাদেশের সঙ্গে এরই মধ্যে চুক্তি করাই আছে, আশা করছি ভ্যাকসিন চলে আসবে।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন