বিজ্ঞাপন

ট্রাইব্যুনালের ১১ বছরে ৪২ রায়ে ১০৩ জনের দণ্ড

April 2, 2021 | 7:17 pm

কামরুল ইসলাম ফকির, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর পেরিয়ে গেছে ১১ বছর। এক দশকেরও বেশি এই সময়ের মধ্যে ৪২টি মামলায় রায় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছয় জন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর ট্রাইব্যুনালের বড় সাফল্য।

বিজ্ঞাপন

এই সাফল্যের বিপরীতে রয়েছে অপ্রাপ্তিও। ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা ও জনবল কমে যাওয়া এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে বর্তমানে অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বিচার কাজ। রায়ের ক্ষেত্রেও পড়েছে প্রভাব। ২০১৩ সালের পর প্রতিবছর ট্রাইব্যুনাল থেকে একাধিক রায় হলেও করোনার বছরে মাত্র একটি রায় হয়েছে।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠিত হয় এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রথমে একটি ট্রাইব্যুনাল থাকলেও বিচারকাজে গতি আনতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এরপর দু’জন বিচারপতির নেতৃত্বে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১’ ও ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২’ নাম নিয়ে চলতে থাকে বিচারকাজ।

ট্রাইব্যুনালে মামলার সংখ্যা কমে এলে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দু’টি ট্রাইব্যুনালকে একীভূত করে ফের একটি ট্রাইব্যুনালে রূপ দেওয়া হয়। বর্তমানে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম, বিচারপতি আমির হোসেন ও বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদারের সমন্বয়ে গঠিত একটি ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ চলমান আছে।

বিজ্ঞাপন

প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এখন পর্যন্ত ৪২টি মামলায় ১০৩ জনের বিরুদ্ধে রায় হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয়েছে ৭১ জনের। ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন আছে ৩৮টি মামলা, যার আসামি সংখ্যা ২৩২ জন। এছাড়া আপিলে নিষ্পত্তি হয়েছে ১০টি মামলা। এর মধ্যে ছয় জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরও হয়েছে।

অন্যদিকে, ট্রাইব্যুনালের ৪২ মামলায় এখন পর্যন্ত খালাস পেয়েছেন মাত্র একজন আসামি। তিনি হলেন ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের তোলালী গ্রামের মৃত হোসেন আলী মীর ওরফে হোসেন মুন্সীর ছেলে মো. আব্দুল লতিফ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছিল, তার বিচার এতদিন পরে হলেও এখন হচ্ছে। এখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কমিটমেন্টের যে জায়গা, যে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে তার বিচার হতে হবে— সেই কমিটমেন্টের জায়গা থেকে বিচার হচ্ছে। এই রায়গুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের লাখো শহিদ ও বীরাঙ্গনাদের প্রতি সম্মান জানানো যাচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

প্রসিকিউটর তাপস আরও বলেন, ‘আরেকটি বিষয়— একটি দেশীয় ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনকে ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত ১১ বছরে ৪২টি মামলায় রায় দিয়েছেন। তুলনামূলক বিচারে গেলে দেখা যাবে— বিশ্বের অন্য কোনো ট্রাইব্যুনাল এত কম সময়ে এবং এত কম অর্থ খরচ করে এতগুলো রায় দিতে পারেনি। আমরা ৪২টি মামলার সবগুলোতেই জয়ী হয়েছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য শতভাগ। যদি আমাদের দু’টো ট্রাইব্যুনাল চলমান থাকত, তাহলে হয়তো রায়ের সংখ্যা আরও বেশি হতো। আমরা চাই অন্য ট্রাইব্যুনালটিও সচল হোক। দু’টো ট্রাইব্যুনাল সমান গতিতে চললে আরও ৩৫ থেকে ৪০টি মামলার রায় পাওয়া যেত। মামলাগুলোতে গতি আনতেই তাই আমাদের দাবি— আরেকটি ট্রাইব্যুনাল চালু করা হোক।’

ট্রাইব্যুনালের সাফল্য ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক এম সানাউল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। একই সময়ে ট্রাইব্যুনালের জন্য প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা কাজ শুরু করে। এখন পর্যন্ত ৪২টি মামলার শতাধিক অপরাধীর বিচার হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ছয় মানবতাবিরোধী অপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। আমি মনে করি ট্রাইব্যুনালের রায়ে আমাদের সাফল্য শতভাগ।’

এক প্রশ্নের জবাবে সানাউল হক বলেন, ‘আগে দু’টি ট্রাইব্যুনাল ছিল। বর্তমানে একটি ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ চলমান আছে। এর ফলে ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজে কিছুটা হলেও গতি কমে গেছে। একটি ট্রাইব্যুনালের পক্ষে বছরে পাঁচ-ছয়টির বেশি রায় দেওয়া সম্ভব হয় না। আবার জনবল সংকটও রয়েছে। অনেকে অবসরে গেছেন, অনেকে চলে গেছেন। এসব কারণে ট্রাইব্যুনালের মামলায় কিছুটা ধীর গতি দেখা হচ্ছে।’

তারপরও ট্রাইব্যুনাল যে উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল, তার অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে বলে মনে করেন তদন্ত সংস্থার প্রধান এম সানাউল হক। যেসব মামলা বিচারাধীন ও তদন্তাধীন আছে, সেগুলো দ্রুত সময়ে শেষ হবে বলে আশাবাদ তার।

বিজ্ঞাপন

আলোচিত ২ আসামির রিভিউ শুনানির অপেক্ষা

এদিকে, আপিল বিভাগে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর ওই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কারাগারে মৃত্যু পরোয়ানাও পাঠিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তবে গত বছরের ১৯ জুলাই মৃত্যুদণ্ডের রায় পুর্নবিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করেছেন এ টি এম আজহার। একই বছরের ২২ অক্টোবর রিভিউ চেয়েছেন সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার। এ দুইটি রিভিউ এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

একজনের খালাস

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সর্বশেষ রায় ঘোষণা করা হয় ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। এর আগে ২৬ জানুয়ারি খলিলুর রহমানসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণার জন্য (সিএভি) যেকোনো দিন নির্ধারণ করে রাখা হয়।

রায়ে ময়মনসিংহের খফরগাঁও ও ভালুকার ৯ রাজাকারের মধ্যে তিন রাজাকারকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল, পাঁচ আসামিকে দেওয়া হয় ২০ বছর করে কারাদণ্ড। বাকি এক আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। এটি ট্রাইব্যুনালের ৪২তম তথা সর্বশেষ রায়।

সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন