বিজ্ঞাপন

‘ব্যবসায়িক মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে’

May 23, 2021 | 7:00 pm

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: উত্তর ইউরোপের রাষ্ট্র সুইডেন বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে আগ্রহী। দেশটির বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। কিন্তু তারা ব্যবসায়িক মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ চায়। একইসঙ্গে তাদের প্রত্যাশা— ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান প্রতিনিয়ত সময়োপযোগী পর্যালোচনা হতে হবে। সুইডেন দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার মনে করে ৫০ বছরের সম্পর্কে নতুন মাত্রাও যোগ করতে চায়।

বিজ্ঞাপন

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ-সুইডেন ‘রাজনৈতিক পরামর্শক (পলিটিক্যাল কনসালটেশন)’ সংক্রান্ত বৈঠক করে। ওই বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে দুই পক্ষ একমত হয়। এরপর চলতি বছরের গত মার্চে সুইডিশ উন্নয়নমন্ত্রী ফার ওরসন ফ্রিধ বাংলাদেশ সফর করে দুই দেশের সম্পর্ক, বিশেষ করে বিনিয়োগ ইস্যুতে আরও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ার ইঙ্গিত দেন।

এসবের ধারাবাহিকতাতেই চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছে দুই দেশ। গত গত ২৮ এপ্রিল দুই দেশের মধ্যে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ফরেন অফিস বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুইডেনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে গত ৫ মে সুইডিশ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন সংক্রান্ত এক বৈঠক হয়। এর আগের দিন সুইডেন-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের একজন প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য ইস্যুতে আরও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ার কথা বলা হয়। রাষ্ট্রদূত সুইডিশ ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশ কী কী ছাড় বা সুবিধা দিতে পারেন, সেগুলোও সেখানে বিস্তারিত জানান। এ ছাড়া গত ৭ মে রাষ্ট্রদূত সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বিভাগের প্রধান সিসিলিয়া রুইসট্রম-রুইনের সঙ্গে তার দফতরে সাক্ষাৎও করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ড্রা বার্গ ভন লিন্ডে’র কাছে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বর্তমান চিত্র এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে সুইডেনের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। গত ৫০ বছরে অর্থনৈতিক খাতে বাংলাদেশ যে উন্নতি করেছে, তা সুইডিশ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী করেছে। বিগত কয়েক দশকে সুইডেনের একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বাজারে বিনিয়োগ করেছে এবং সামনের দিনে আরx অনেক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে পারে।’

রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ড্রা বার্গ ভন লিন্ডে বলেন, ‘চলমান করোনা সংক্রমণ বাংলাদেশ-সুইডেনসহ বিশ্বের সবখানেই ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। এ অবস্থায় অপেক্ষাকৃত ভালো ও পরিবেশবান্ধব ব্যবসায়ী আবহ তৈরি আজ সময়ের দাবি। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পরিবেশবান্ধব (গ্রিন ইকোনমি) অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে সুইডিশ প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই সমাধান এবং প্রযুক্তি সরবরাহ করতে আগ্রহী। তবে বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনার শতভাগ কাজে লাগানোর জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে হবে।’

বাংলাদেশ-সুইডেন ব্যবসায় পরিবেশ উন্নয়নে মূল প্রতিবন্ধকতা কী— এমন প্রশ্নের জবাবে আলেকজান্ড্রা বার্গ ভন লিন্ডে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যেকোনো বাজারে বিনিয়োগের আগে স্বচ্ছতা, দূরদর্শিতা ও স্থিতীশীলতার কথা চিন্তা করে থাকে। ব্যবসায়িক পরিবেশে সুশাসন নিশ্চিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুশাসন শক্তিশালী হলে এই দেশের বাজারে যারা বিনিয়োগ করেছে, তাদের ভালো করার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে। একইসঙ্গে বাংলাদেশে যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে চায়, তারা আরও আগ্রহী হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির সহজলভ্যতা ও জ্বালানি শক্তির নির্ভরযোগ্য  সমাধান বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে অংশ নিতে সহায়তা করবে এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সহায়তা করবে।’

বিজ্ঞাপন

পরিবেশবান্ধব ব্যবসা উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা দূর করার বিষয়ে রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ড্রা বার্গ ভন লিন্ডে বলেন, ‘ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশে স্বচ্ছতা আনতে এবং ভবিষ্যতের ধারণা পেতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। চলমান বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ ডিজিটালাইজেশনে বাংলাদেশ ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়া আমাদের সবাইকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নিয়ন্ত্রকের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবসায়িক মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, প্রতিনিয়ত আইন ও বিধিবিধানের সময়োপযোগী পর্যালোচনা করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি এবং টেকসই সমাধানের প্রশ্নে সহজে এবং কম খরচে পরিবেশবান্ধব পরিস্থিতি নিশ্চিতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

পরিবেশবান্ধব ব্যবসা এবং প্রযুক্তি বিষয়ে সুইডেন সহায়তা করতে পারে বাংলাদেশকে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত ভন লিন্ডে বলেন, ‘পানি, জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে টেকসই বাণিজ্য উন্নয়ন সমাধানে সুইডিশ প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সরবরাহ করতে চায়। সুইডিশ প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘ মেয়াদে সম্পর্কন্নয়নে বিশ্বাস করে এবং সাধারণত তাদের পণ্যের বিক্রয়-পরবর্তী সেবাদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের বাজারে সুইডিশ কোনো প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে চাইলে ঢাকার সুইডিশ দূতাবাস এবং তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি যেসব বাংলাদেশি উদ্যোক্তা সুইডিশ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, ঢাকার সুইডিশ দূতাবাস তাদের আনন্দের সঙ্গে পরামর্শ দিতে প্রস্তুত।’

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ৬৪৭ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে রফতানির পরিমাণ ৫৮৪ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ৬৩ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। করোনা সংক্রমণের আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭৬৮ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন বাংলাদেশ থেকে রফতানি ও বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬৯৬ দশমিক ০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ৭২ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন