বিজ্ঞাপন

ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে সিলেট, প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

June 1, 2021 | 12:25 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ভূ-তাত্ত্বিক তথ্য বলছে ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা এই তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। এর মধ্যে ইন্ডিয়ান ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত সিলেট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লেটগুলো সক্রিয় এবং পরস্পরের দিকে ধাবমান। যে কারণে এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী। তাই বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার আগেই প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এদিকে সিলেটে বারবার ভূমিকম্প হওয়ার কারণ খুঁজতে ও করনীয় ঠিক করতে মঙ্গলবার (১ জুন) জরুরি বৈঠক ডেকেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞাপন

আবহাওয়া অধিদফতরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার (২৯ মে) সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটার মধ্যে সিলেটে অন্তত পাঁচটি ভূকম্পন অনুভূত হয়। যার সবগুলোর কেন্দ্রস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৯৬ থেকে ২৩২ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ধরনের ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন ছোট ছোট ভূকম্পন অনুভূত হয়। দফায় দফায় ভূমিকম্পে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যে কারণে ভবিষ্যতের বড় বিপদ বিবেচনায় এখনই প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভূমিকম্প সহনীয় নিরাপদ অবকাঠামো তৈরি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগ। ওই বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী সারাবাংলাকে বলেন, ভূমিকম্পের জন্য বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল আগে থেকেই ঝুঁকিতে রয়েছে। অতীতে এ অঞ্চলে তিনবার বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম হয় ১৮৬৯ সালে সিলেটের কাছার এলাকায়। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬। তারপর হয় ১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গলে। সবশেষ বড় ভূমিকম্প হয় ১৯২৩ সালে দুর্গাপুরে। এ কারণে সেখানে বড় ধরনের ফাটলের সৃষ্টি হয়, যা এখনো রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ফাটলগুলো সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। ছোট ছোট ভূকম্পন বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। গত ১০০ বছরে বড় ধরনের ভূমিকম্প না হওয়ায় আমরা ভেবেছি আর মনে হয় ভূমিকম্প হবে না। আসলে আমরা বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় এতো বেশি দেখি সেভাবে ভূমিকম্প দেখি না। এখন সিলেটে দফায় দফায় ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়েছে। সম্প্রতি বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়নি মানে এই নয় যে এই অঞ্চল ঝুঁকিমুক্ত।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি গত দুই তিন বছর এই অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়নি। তবে গত দেড়/দুই মাসে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়েছে। যেটা আসামে হয়েছে সেটাই এর থেকে তুলনামূলক বড়। এটা আমাদের ইঙ্গিত দিচ্ছে। পরের দুই তিন বছরে যে বড় কিছু হবে না তা বলা যাবে না। এগুলো শক্তি সঞ্চয় করে একসময় বড় শক্তির বিস্ফোরণ ঘটাবে।

তিনি বলেন, ঢাকাতে ১২ লাখ বাসা রয়েছে। সিলেটে এ লাখ, চট্টগ্রামে ৩ লাখ বাসা রয়েছে। দুর্যোগটা কেবল ভূমিকম্পের হ্যাজার্ডের দিক থেকে নয়। ঢাকার অবকাঠোমো যেমন দুর্বল তেমনি জনসচেতনতা কম। সেজন্য যদি একটা বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয় আমাদের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেক বেশি হবে। সেজন্য সরকারকে স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সকল ভবন দ্রুত পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করতে। আর এ কাজ প্রতিটি বাড়ি মালিকদের দিয়েই করতে হবে। তারা নিজ নিজ ভবন নিজের উদ্যোগে পরীক্ষা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ – রাজউক এবং সিটি করপোরেশনগুলোতে জমা দিতে বলা হোক। পরে সরকার এ বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, নতুন ভবন ভূমিকম্প সহনীয় করা। আর পুরনো গুলো ভূমিকম্প সহনীয় করা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সকল বিষয় বিশ্লেষণ করে কীভাবে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়, সে বিষয়ে মতামত নেওয়া হবে ওই বৈঠকে। এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, আমরা এজন্যই বৈঠক আহ্বান করেছি। আমরা সংশ্লিষ্টদের মতামত নেব। তারপর সে অনুযায়ী কী কী প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন সেসব কাজ শুরু করবো।

বিজ্ঞাপন

যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘আর্থ অবজারভেটরি’। আর্থ অবজারভেটরি সূত্রে জানা যায়, দেশে বিপদজনক ভূকম্পনের প্রধান দুইটি উৎস রয়েছে। এর একটি ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাউকি ফল্ট আরেকটি টেকনাফ পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চল সাবডাকশন জোন। বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে এসকল তথ্য নিয়ে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকে কীভাবে কমিয়ে আনা যাবে সে পদক্ষেপ নিতে চায় সরকার।

সারাবাংলা/জেআর/এএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন