বিজ্ঞাপন

সরকারের সিদ্ধান্তগুলো পাবনার হেমায়েতপুর থেকে আসছে : বিএনপি

July 18, 2021 | 1:12 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ‘লকডাউন’, ‘কঠোর লকডাউন’, ‘শিথিল লকডাউন’ এবং ঈদের পর ‘ফের কঠোর লকডাউন’ সংক্রান্ত নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো ‘পাবনার হেমায়েতপুর’ থেকে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃবৃন্দ।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৭ জুলাই) দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির নিয়মিত বৈঠকে এ মত দেন কমিটির সদস্যরা। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরুদ্দিন সরকার, ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান,  আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাব ও সিদ্ধান্তগুলো জানাতে রোববার (১৮ জুলাই) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

সেখানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের লকডাউন লকডাউন খেলা আর এক মর্মান্তিক তামাশা। প্রথমে লকডাউন তারপরে কঠোর লকডাউন পরে শিথিল লকডাউন ঈদের ১ দিন পর থেকে আরও কঠোর লকডাউন, শিল্প কলকারখানা বন্ধ ঘোষণা থেকে মনে হয় সরকারি সিদ্ধান্তগুলো পাবনার হেমায়েতপুর থেকে আসছে। এই সব অপরিকল্পিত পদক্ষেপের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের দিন আনে দিন খায় এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত মানুষ। হকার, ছোট ব্যবসায়ী, রিকশা শ্রমিক, ভ্যান শ্রমিক, মাঝি, বাইকের চালক ও পরিবহন শ্রমিকরা।

বিজ্ঞাপন

‘বিএনপি বারবার এই সব মানুষের জন্য এককালীন ১৫,০০০/= টাকা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়ে আসছে। সরকার কখনই তাতে কর্ণপাত করেনি। উপরন্ত বিদ্রুপ করেছে। বিএনপি আবারও দাবি জানাচ্ছে- এইসব মানুষদের জন্য এক কালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হোক। ছোট ব্যবসায়ীদের পুঁজির ব্যবস্থা করা এবং দিন আনে দিন খায় মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হোক’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘সভা মনে করে বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। বিশেষ করে করোনা টিকা নিয়ে সরকার যে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে গোটা পরিস্থিতি লেজেগোবরে করে ফেলেছে। এখন পর্যন্ত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট, চীনের সিনোফার্ম ও কো-ভ্যক্স থেকে মোট ১ কোটি ১৬ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা সংগ্রহ করেছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘আকুল আহ্বান” বিজ্ঞাপনে দেড় কোটি ডোজ সংগ্রহের কথা বলায় প্রমাণ হয়েছে সরকার শুরু থেকেই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। টিকার মূল্য নিয়েও মিথ্যাচার করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হলে ২৬ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন। গড়ে প্রতি মাসে ১ কোটি টিকা দিলেও ২ বৎসর দুই মাস লাগবে। অথচ এখন পর্যন্ত টিকা প্রাপ্তির কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকার দিতে পারছে না অথবা টিকা প্রাপ্তির উৎস সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘সরকারের নিজস্ব দুর্নীতি পরায়ন মহলকে সহায়তা করার জন্যই টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের ক্ষেত্রে সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্ত মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে একইভাবে প্রতারণা করা হচ্ছে। অযোগ্যতা, দুর্নীতিপরায়নতা এই ব্যর্থতার জন্য দায়ী। এর সকল দায় দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। মিথ্যাচার করে জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার সরকারের নেই। অবিলম্বে টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে।’

গ্যাটকো মামলায় খালেদা জিয়ার অপরাধ প্রমাণ হয়েছে— কোর্টের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরের প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই মামলার এখন পর্যন্ত বিচার কার্য়ক্রম শুরু হয়নি। শুধু চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর দু’জন অভিযুক্ত ব্যক্তির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রাপ্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি আদালত ওই আবেদন খারিজ করে সংশ্লিষ্ট রায় দেন। প্রায় তিন বছর পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে হাইকোর্ট গত ১৩ জুলাই।’

তিনি বলেন, ‘মামলাটি নিম্ন আদালতে বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় তিন বছর পর প্রকাশিত রায়ের উচ্চ আদালতের এই ধরনের মন্তব্যের উদ্দেশ্য বোধগম্য নয় এবং এটি গ্রহণযোগ্যও নয়। এ ধরনের মন্তব্য নিম্ন আদালতকে প্রভাবিত করবে বলে প্রতীয়মান হয়। স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, এ ধরনের মন্তব্য যেকোনো নাগরিকের ন্যায় বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।’

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত কেয়ারটেকারের সময় গ্যাটকো মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, বেগম খালেদা জিয়াসহ তৎকালীন যে মন্ত্রিসভা ছিল তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য। আমি এখানে বলতে চাই, এই মামলার এফআইআর, চার্জশিট— দু’টির কোনো জায়গাতেই বেগম খালেদা জিয়া বা জিয়া পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে ন্যূনতম কোনো ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। এই মামলার অন্যতম দুই জন আসামি সৈয়দ তানভীর ও সৈয়দ গালিব তারা ১৬৪ স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দিতেও বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের কোনো সদস্যের নামে কোনো বিন্দু পরিমাণ কোনো অভিযোগ ছিল না।’

বিজ্ঞাপন

‘বর্তমানে ফ্যাসিস্ট সরকার সেই মামলাকে চলমান রেখেছেন বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য। কারণ এই বর্তমান সরকার জানে যে তাদের অঙ্গুলি হেলনে আজ আদালত চলছে,’— বলেন কায়সার কামাল।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেসউইং সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এজেড/এএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন