ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ ও সম্পত্তি ক্রোকে দুদককে অনুমতি নিতে হবে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আদালতের অনুমতি ছাড়া দেশের কোনো নাগরিকের সম্পত্তি অবরুদ্ধ বা ক্রোক করতে পারবে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এমনকি অবৈধ উপায়ে সম্পত্তি অর্জিত হয়ে থাকলেও আদালতের অনুমতি ছাড়া সম্পত্তির ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধও আরোপ করতে পারবে না দুদক।

‘বেলায়েত হোসেন বনাম দুর্নীতি দমন কমিশন ও অন্যান্য’ শিরোনামে এক মামলার রায়ে এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৫ আগস্ট) এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বিধান অনুযায়ী এটা সুস্পষ্ট যে, সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমতি ছাড়া যে কেউ, এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনও দেশের যেকোনো নাগরিকের অপরাধলব্ধ অর্জিত সম্পত্তি অবরুদ্ধ বা ক্রোক বা সম্পত্তির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করলে তা অবৈধ হবে।

রায়ে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তির দ্বারা অবৈধভাবে অর্জন করা সম্পত্তি অবরুদ্ধ বা ক্রোক করার জন্য স্পষ্টভাবে একটি পদ্ধতি নির্ধারণ করা আছে। কোনো সম্পত্তি অবরুদ্ধ করার আগে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হতে যে, ওই সম্পদ অবৈধ উপায়ে অর্জন করা হয়েছে। তারপর কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে তাদের নিজস্ব কর্মকর্তা সিনিয়র স্পেশাল জজ বা ট্রায়াল জজ আদালতে সম্পদ অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) বা ক্রোক করার জন্য মামলা করতে পারবেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুমোদিত কর্মকর্তাকে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তসহ কারণ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট আদালতে সম্পত্তি অবরুদ্ধ বা ক্রোক করার জন্য আবেদন করতে হবে। সবশেষে আদালত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অপরাধলব্ধ অর্জিত সম্পত্তির ব্যাপারে আপাতদৃষ্টে সন্তুষ্ঠ হয়ে সম্পত্তি অবরুদ্ধ বা ক্রোক করার আদেশ দিতে পারেন।

দুদকের আইন ও বিধিতে কোনো অনুসন্ধান বা তদন্ত কর্মকর্তা, এমনকি অন্য কোনো কর্মকর্তাকে এ ধরনের অপরাধলব্ধ সম্পত্তি ক্রোকের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। ফলে এ মামলায় দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ব্যাংক হিসাব জব্দে যে চিঠি দিয়েছেন তা শুধু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এখতিয়ারবহির্ভূত ও বেআইনিই নয়, বরং ক্ষমতার অপব্যবহারও বটে।

কক্সবাজারের বেলায়েত হোসেন নামে এক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কর্মকর্তার নির্দেশ অবৈধ ঘোষণা করে এই রায় দেন হাইকোর্ট। গত ২৭ জুন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রাকিবুল হাসান। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহীন আহমেদ।

চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি দুদকের চট্টগ্রাম-২ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন কক্সবাজারের বাসিন্দা ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেনের ব্যাংক হিসাব জব্দে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের কক্সবাজার শাখার ম্যানেজারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ওই নির্দেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বেলায়েত হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারি করেন। পরে এ বিষয়ে রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি আজ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম