বিজ্ঞাপন

দেয়াড়া গণহত্যা, গুলি আর জবাই করে ৬০ জনকে হত্যা

August 27, 2021 | 1:00 pm

আবির হাসান সুজন

খুলনার দিঘলিয়ার দেয়াড়া গণহত্যা দিবস আজ ২৭ আগস্ট । ১৯৭১ সালের এই দিনে দিঘলিয়ার দেয়াড়া গ্রামে রাজাকার বাহিনী ও পাকিস্তানি সেনারা গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে ৬০ জন নিরপরাধ বাঙালিকে হত্যা করে।

বিজ্ঞাপন

এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, ঘটনার দিনে মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবদার রহমান তার দলবল নিয়ে দিঘলিয়ার দেয়াড়া গ্রামে অবস্থান করছেন এই খবরের ভিত্তিতে পাক হানাদার বাহিনীর দোসর কয়েকশ রাজাকার দেয়াড়া গ্রামটি ঘিরে ফেলে। রাজাকার বাহিনী ওই গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মতিয়ার রহমানসহ গ্রাম থেকে ৬১ জনকে ধরে নিয়ে যায়। আটককৃতদের কাছে মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্রনেতা শেখ আবদার রহমানের সন্ধান চায়। আটককৃত কেউই শেখ আবদার রহমানের সন্ধান দিতে অস্বীকার করায় সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে এদেরকে প্রকাশ্য দিবালোকে দেয়াড়া গ্রামের তিনটি স্থানে গুলি ও জবাই করে হত্যা করা হয়।

নির্মম এই ঘটনায় ৬০ জন ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। নিহতদের মধ্যে ৩৮ জনের লাশ পাষণ্ড রাজাকারের দল ভৈরব নদীতে ছুড়ে ফেলে। বাকি ২২ জনকে তিনটি গণকবরে মাটি চাপা দেয়। একজন সারা শরীরে ধারালো অস্ত্রের ১৯টি আঘাত নিয়েও বেঁচে যান।

সেদিন যে মানুষটি সেদিন বেঁচে যান তার নাম আবদুল বাশার। রাজাকারেরা সবাইকে একসাথে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করতে থাকে, ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। তবে তাকেও ছুরিকাঘাতে আহত করা হয়। ১৯ আঘাত সহ্য করেও তিনি জীবিত ছিলেন, শুধু যেন ইতিহাস রক্ষার জন্য!

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযুদ্ধের ৩৯ বছর পর ২০১০ সালে দিঘলিয়ার দেয়াড়ার গণকবরের সন্ধান সবার সামনে আসে। স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের এই নির্মম স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন শিল্পপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী শাহ নেওয়াজ। ঐ বছরের ৬ জানুয়ারি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান বাচ্চু, গাজী আজগর আলী, শহীদ ডাক্তার শেখ মতিয়ার রহমানের ছেলে ও দিঘলিয়া সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবজাল হোসেন ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. মকবুল হোসেনসহ স্থানীয়দের সহযোগীতায় গণকবর থেকে শহীদের দেহাবশেষ সংগ্রহ করে একত্রিত করেন। এরপর দেহাবশেষগুলো ভৈরব নদের পাশে মুক্তিযোদ্ধা শাহানেওয়াজের দান করা জমির উপর গণকবরের স্থান নির্ধারণ করা হয় এবং দেহাবশেষগুলো সমাহিত করা হয়। এই গণকবরে ২২ জন শহীদ সমাহিত আছেন। দেয়াড়া গণহত্যার অনেক স্মৃতি চিহ্ন খুলনার ‘গণহত্যা জাদুঘরে’ সংরক্ষিত রয়েছে।

দেয়াড়া গণহত্যা থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া একমাত্র ব্যক্তি সৈয়দ আবুল বাশার বর্তমানে অনাহারে অর্ধাহারে জীবন কাটাচ্ছেন। ৯২ বছর বয়সী ৮ সন্তানের জনক সৈয়দ আবুল বাশার তার পিঠে রাজাকারদের ১৯টি ধারালো অস্ত্রের কোপ এবং বগলের নীচে একটি গুলির ক্ষত চিহ্ন তিনি আজও বহন করে চলেছেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবদার হোসেন বাদী হয়ে দীঘলিয়ার ঘটনায় জড়িত রাজাকারদের বিরুদ্ধে তৎকালীন দৌলতপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। রাজনৈতিক কারণে মামলাটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এরপর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবদার হোসেনের মৃত্যুর পর ২০১০ সালে পাক হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকারদের হাতে নিহত মো. ইসমাইল হোসেন ছোট খোকার স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালে ২২ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলাও আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।

বিজ্ঞাপন

দেয়াড়া গ্রামের ঐ গণকবরে যে ২২ জনকে সমাহিত করা হয় তাদের মধ্যে ১৬ জনের পরিবার এখনো ওই এলাকায় বসবাস করেন। পরিবারের সদস্যরা পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে নির্মমভাবে নিহতদের শহীদ হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জাানিয়েছেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ভুমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন