বিজ্ঞাপন

আইএমএফ ঋণ শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ: বাংলাদেশের উপায় কি?

May 5, 2024 | 1:50 pm

ড. মিহির কুমার রায়

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট, ঋণ কর্মসূচির আওতায় শর্ত বাস্তবায়ন ও সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গত ২৪ এপ্রিল ঢাকায় আসে আইএমএফের একটি মিশন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের সঙ্গে তাদের টানা ১৬ দিনের সিরিজ বৈঠক চলবে আগামী ৮ মে পর্যন্ত। ওয়াশিংটনে ফিরে যাওয়ার আগে আইএমএফের পক্ষ থেকে ওইদিন ঋণের তৃতীয় কিস্তি প্রদানে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আইএমএফ ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে। উল্লেখ্য, আইএমএফ গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর তিনদিন পর প্রথম কিস্তিতে ছাড় করে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার।এর পর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুন মাসে তৃতীয় কিস্তির প্রায় ৭০ কোটি ডলার ছাড় করা হতে পারে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে পুরো অর্থ দেওয়ার কথা। এদিকে, প্রাথমিকভাবে আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্তসময়ে নীট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল।কিন্তু পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে রিজার্ভে বড় ধরনের উন্নয়নের উন্নতি না হওয়ায় বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তা কমিয়ে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা হয়। তারপরও বাংলাদেশ এ লক্ষ্য থেকে ৫৮ মিলিয়ন ডলার পিছিয়ে ছিল। দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য গত জুন পর্যন্ত রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। তখনো লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হয়নি। জুন শেষে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আইএমএফের ঋণের বড় ১০টি শর্তের মধ্যে ৯টি পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। তাই ঋণের পরবর্তী কিস্তি পেতে কোনো অসুবিধা হবে না। ইতোমধ্যে তৃতীয় কিস্তির জন্য নির্ধারিত ছয়টি পরিমাণগত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রিজার্ভ ছাড়া পাঁচটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে কর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা।সরকার ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কর রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঋণের আরেকটি শর্ত হলো বাজেট ঘাটতি যেন ৯০ হাজার ৫২০ কোটি টাকার বেশি না হয়। ডিসেম্বরে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঋণের দুটি শর্ত হলো, ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের সামাজিক ব্যয় ও মূলধন বিনিয়োগ হতে হবে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকার এ দুই খাতে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এ ছাড়া গত ডিসেম্ব^র পর্যন্তসরকারকে দেওয়া রিজার্ভ মানি লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়েছে। এ ছাড়া তৃতীয় কিস্তির জন্য আইএমএফের কিছু কাঠামোগত শর্তও ছিল। এ শর্ত পূরণে এরই মধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জিডিপির ত্রৈমাসিক তথ্য প্রকাশ করা শুরু করেছে। সংসদে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন এবং ফিন্যান্স কোম্পানি আইন পাস হয়েছে এবং আইএমএফের সুপারিশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আইনগুলো এরই মধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকার মার্চ মাসে পেট্রোলিয়াম পণ্যগুলোর জন্য একটি পর্যায়ক্রমিক সূত্র-ভিত্তিক মূল্য সমন্বয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং এরই মধ্যে দুবার সমন্বয় করেছে।বিদ্যুতের দাম বছরে চারবার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। এ বিষয়টি বাস্তবায়নেও সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে ইতোমধ্যে কয়েক দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে ৩৩টি শিল্প খাতের কর অবকাশ তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এসব শিল্প খাত ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন হারে কর অবকাশ সুবিধা পেয়ে আসছে।

বৈদেশিক মুদ্রা ডলার সংকটের এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এই অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। অবকাঠামো খাত উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় আইএমএফ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যবহার করা হবে। তৃতীয় কিস্তির জন্য যেসব বিষয়ে সংস্কার করতে হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-করছাড় কমিয়ে কর আদায় বৃদ্ধি করা, রিজার্ভ বাড়ানো, আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়, বিদ্যুৎসহ সকল খাতে ভর্তুকি যৌক্তিক করার কৌশল নির্ধারণ এবং খেলাপি ঋণ কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এ ছাড়া রিজার্ভের ঘাটতিও খুব বেশি নয়, তাই ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেতে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করছে সরকার। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক নানা সংকটের কারণে দেশের অর্থনীতি এখন কঠিন সময় পার করেছে। সামষ্টিক অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক বর্তমানে নি¤œমুখী। বিশেষ করে রপ্তানি ও রেমিটেন্স কমে যাওয়ায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অর্থনীতি। প্রতিনিয়ত মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে কমছে রিজার্ভ। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে নিত্যপণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে দেশে। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ভোগ্যপণ্যের দাম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকটের জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে সৃষ্ট সংকট এখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবলভাবে চেপে বসেছে। নতুন করে ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ আরেকটি সংকট তৈরি করেছে বিশ্বজুড়ে। এ অবস্থায় আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে। ওয়াশিংটন সফরের আগে সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আশা প্রকাশ করে জানান, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি বাংলাদেশ পাবে।

বিজ্ঞাপন

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধারাবাহিকভাবে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের কিস্তিগুলো পাওয়া যাওয়ায় একদিকে যেমন ডলার সংকট দূর হচ্ছে, অন্যদিকে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে সারাবিশ্বে। বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবেই সংস্থাটির কাছ থেকে ঋণের কিস্তি পাবে। এদেশের উন্নয়নে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আইএমএফ।এ অবস্থায় বড় চার উন্নয়ন সহযোগী বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, এশীয় ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকসহ অন্য উন্নয়ন সহযোগীরাও বিনিয়োগ ও অবকাঠামো খাতে ঋণ সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আবার আন্তর্জাতিক মানদন্ড মেনে ব্যাংক একীভূত করার পরামর্শ দিয়েছে ঋণ কর্মসূচির আওতায় শর্ত বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে আসা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মিশন। তারা বলেছে, যথাযথ প্রক্রিয়ায় ব্যাংক একীভূতকরণ না হলে আর্থিক খাতের সংকট আরও বাড়বে। একই সঙ্গে মিশন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকা তৈরির পরামর্শ দিয়েছে । সার্বিকভাবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছে। আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট মাইক্রোইকোনমি ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে বৈঠকে সচিব সরকারের পক্ষে নেতৃত্ব দেন। এ সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারাসহ সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের এমডিরাও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেন, সরকার যে ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে মিশন। তবে একীভূতকরণের পর ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা যেন খারাপ না হয়ে যায়, এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এজন্য তাড়াহুড়া না করে আন্তর্জাতিক মানদন্ড মেনে একীভূতকরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করার ওপর তাগিদ দিয়েছেন প্রতিনিধি দলের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ঋণখেলাপিদের বিষয়ে বিশেষ ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চেয়েছে মিশন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সংজ্ঞায়িত করে শাস্তির বিধান করা হয়েছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে উচ্চ খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, মূলধন ঘাটতি, তারল্য সংকটের সমাধান এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওযার্ক গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আগামীতে আরও জোরদার করে খেলাপি ঋণ কমানোসহ আর্থিক খাতের উন্নয়ন করা হবে। বৈঠকে খেলাপি ঋণসহ রাষ্ট্র মালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক চিত্র, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট, ব্যাংকগুলোকে দেওয়া পুনর্মূলধন এবং ব্যাংক তথা আর্থিক খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত আইন প্রণয়নের হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বৈঠকে জানানো হয়, ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আগের প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ। এ সময়ে সার্বিকভাবে কমলেও রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আগের প্রান্তিকের মতোই ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা রয়েছে। মোট ঋণের যা ২০ দশমিক ৯৯ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৮১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আইএমএফের স্টাফ মিশনের কাছে গত অক্টোবরে জুন ভিত্তিক সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের যে চিত্র তুলে ধরেছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, ছয় মাসের ব্যবধানে কয়েকটির ক্ষেত্রে আরও খারাপ হয়েছে। যে ছয় মাস আগে বেসিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৬২ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৬৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অগ্রণীর ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং বিডিবিএলের ৪২ থেকে বেড়ে ৪২ দশমিক ৪৬ শতাংশ হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের এই হার অবশ্য ১৪ দশমিক ৯৩ থেকে সামান্য কমে ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ হয়েছে। একইভাবে রূপালীর ১৯ শতাংশ থেকে কমে ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং জনতার ৩৩ থেকে কমে ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ হয়েছে। আইএমএফ ঋণ কর্মসূচির আওতায় আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকে ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত ডিসেম্ব^র ভিত্তিক সার্বিক খেলাপি ঋণ কিছু কমলেও রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ না কমায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মিশন।

বিজ্ঞাপন

আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে উন্নতি হয়েছে। তবে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় চাপে রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আর্থিক হিসাবে কেন উন্নতি হচ্ছে না– জানতে চেয়েছে আইএমএফ। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি, সুদহারের নতুন ব্যবস্থা, ডলারের দর নির্ধারণে ক্রলিং পেগ, আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফ ।জানা গেছে, গত জুলাই থেকে চালু হওয়া সুদহারের নতুন ব্যবস্থা স্মার্ট মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কতটুকু কার্যকর, তা জানতে চেয়েছে মিশন। সুদহার পুরো বাজারভিত্তিক করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তারা কথা বলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এরই মধ্যে সুদহার অনেক বেড়েছে। এ পর্যায়ে সুদহার আরও বাড়ালে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে। আর ডলারের দর নির্ধারণের নতুন ব্যবস্থা ক্রলিং পেগ নিয়ে ওয়াশিংটনে গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সে আলোকে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগের সঙ্গে ভর্তুকি নিয়ে বৈঠক করে মিশনের একটি অংশ। এতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য একটি পর্যায় ক্রমিক সূত্রভিত্তিক মূল্য সমন্বয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে সার্বিক বাজেট ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে অন্যান্য খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার জন্যও বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আপাতত কৃষিতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিয়ে যাবে সরকার। তবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি কমাতে পর্যায়ক্রমে এসবের দাম বাড়ানো হবে। বাড়তি মূল্যস্ফীতির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে যেসব লক্ষ্যভিত্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে আসা উচিত, তাদের আওতায় এনে এর সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নানা অনিয়মের কারণে বিদ্যমান উপকারভোগীরাও সঠিকভাবে ভাতা পায় না, এ বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছে।

এ বিষয়ে মিশনকে জানানো হয়, আগামী বাজেটে এ কর্মসূচির আওতায় কয়েকটি কর্মসূচিতে আরও অন্তত সাড়ে পাঁচ লাখ নতুন ভাতাভোগী অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আগামী বাজেট অনেকটা সংকোচনমূলক হবে, তাই ভাতার পরিমাণ তেমন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া উপকারভোগী যেন সঠিকভাবে নগদ অর্থ পায়, তা নিশ্চিত করতে গত ১ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উদ্দেশে বলা হয়, সরকারের নগদ আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে নতুন করে চালু করা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির নগদ আর্থিক সুবিধা উপকারভোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিবন্ধিত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দিতে হবে। বিদ্যমান উপকারভোগীর ক্ষেত্রে আগামী ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে তা নিশ্চিত করতে হবে।

লেখক: গবেষক ও অর্থনীতিবিদ

বিজ্ঞাপন
প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন