বিজ্ঞাপন

ফের স্কুল খুললে মানতে হবে যেসব বিধি

September 9, 2021 | 11:04 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরামর্শ দিয়েছে করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে ও পরে যা যা অনুসরণীয় তা জানিয়েছে কমিটি।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এর আগে, ২ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক সহিদুল্লার সভাপতিত্বে একটি অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কমিটির বিশেষ আমন্ত্রণে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি, উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা সভায় উপস্থিত হয়ে আলোচনায় অংশ নেন। সভায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও ভ্যাকসিনসহ জনস্বাস্থ্য কার্যক্রমের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ গতিবিধি/করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

সারাদেশে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এর পরিপ্রেক্ষিতে সংক্রমণ কমে আসায় মানুষের জীবিকা এবং দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার উদ্দেশ্যে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা সাপেক্ষে প্রায় সবকিছুই খুলে দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ১৭ মাস যাবৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে সরকার অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ইতোমধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের এবং হলে অবস্থানকারী ১৮ ও তদুর্ধ্ব বয়সী শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য ১৮ ও তদুর্ধ্ব বয়সী শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় পরামর্শক কমিটির রোগতত্ত্ব বিষয়ক কমিটি আমন্ত্রিত অতিথি ও কমিটির সামনে তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

স্কুল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কখন এবং কিভাবে পুনরায় চালু করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় যে সকল বিষয় বিবেচনা করতে হবে তা হলো:

বিজ্ঞাপন

১. সকল শিক্ষার্থীর শিক্ষা, শিক্ষক-কর্মচারী এবং সমাজের মঙ্গল ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে তাদের সকল প্রকারের ঝুঁকি কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা করা।

২. স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং তাদের যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।

৩. এলাকায় কোভিড-১৯ রোগের পরবর্তী সংক্রমণ রোধের ব্যবস্থা রাখা।

অন্যদিকে, সরকার যদি স্কুল এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় সেক্ষেত্রে আরও কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে কারিগরি কমিটি। সেগুলো হলো:

বিজ্ঞাপন

ক. নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলে, প্রি-স্কুল ব্যতীত সকল স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া যেতে পারে।

খ. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সকলের মাস্ক পরা নিশ্চিত করা এবং ব্যাত্যয় হলে সে ব্যাপার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা (৫ বছরের কমবয়সী শিশু ছাড়া এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী)।

গ. কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত মানসম্পন্ন এবং সঠিক মাপের মাস্কের ব্যবস্থা ও বিতরণ করা। একইসঙ্গে অন্যান্য জনস্বাস্থ্য পদক্ষেপসমূহ যেমন: হাত পরিষ্কার রাখা (হাত ধোয়া/ হাত জীবাণুমুক্তকরণ স্টেশন স্থাপন করা) এবং সাধারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা।

ঘ. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ শিক্ষক এবং কর্মচারীদেরকে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন নেওয়া থাকতে হবে এবং তারা দ্বিতীয় ডোজের ১৪ দিন পার হবার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। তবে, ক্ষেত্রবিশেষে ১ম ডোজের ১৪ দিন পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

ঙ. উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ১৮ বছরের অধিক বয়সী শিক্ষার্থীদের দ্রুত ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

চ. শ্রেনিকক্ষ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নির্দিষ্ট ক্লাস কোনটি সপ্তাহের কোনদিন হবে তা বিভক্ত করে দেওয়া যেতে পারে।

ছ. প্রাতঃ সমাবেশ বন্ধ রাখতে হবে। এই ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রস্তুত করা দরকার। এ ছাড়া প্রথমদিকে স্বল্প সময়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখা যাতে করে খাবার গ্রহণের জন্য মাস্ক খোলার প্রয়োজন না হয়।

এছাড়াও, আবাসিক সুবিধা সম্বলিত স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নিম্নোক্ত পরামর্শগুলো প্রযোজ্য বলে জানিয়েছে কারিগরি কমিটি (মাদরাসাসহ):

১. সমাবেশ স্থানসমূহ (ক্যাফেটেরিয়া, ডাইনিং, টিভি/স্পোর্টস রুম ইত্যাদি) বন্ধ রাখা। রান্নাঘর থেকে রুমসমূহে সরাসরি খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা।

২. একাধিক শিক্ষার্থীকে একই বিছানা ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখা।

৩. মাদরাসায় একসঙ্গে নামাজ-সমাবেশ ইত্যাদির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নির্দেশনা মেনে চলা।

ছ. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেওয়ার আগে করনীয় এবং বর্জনীয় সম্পর্কে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিবাবকসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মচারীদেরকে একটি  অরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। এই অরিয়েন্টেশন সীমিত উপস্থিতি ও নির্দিষ্ট দুরত্ব মেনে সশরীরে আয়োজন করা যেতে পারে। তবে প্রয়োজনে অনলাইন সেশন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সংক্রান্ত তথ্য সম্বলিত লিফলেট তৈরি এবং বিতরণ করা এবং করনীয় এবং বর্জনীয় বিষয়গুলো মিডিয়া এবং স্থানীয় কেবল লাইনের মাধ্যমে প্রচার করা যেতে পারে। যে সকল শিক্ষার্থীদের কোভিড-১৯ এর লক্ষণ থাকবে তাদের বাড়িতে কোয়ারেনটাইন/আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। কোয়ারেনটাইন/আইসোলেশন থাকাকালীন তাদের শুশ্রুষার জন্য নির্দেশনা এই অরিয়েন্টেশনে থাকতে হবে। যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লক্ষণ পাওয়া যাবে অথবা তাদের পরিবারের কারও এরকম লক্ষণ থাকবে অথবা কোভিড-১৯ শনাক্ত হবে। তাদেরকে অনুপস্থিত গণ্য না করে ১৪ দিন বড়িতে থাকার অনুমতি দিতে হবে।

জ. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য কর্মচারীদের মধ্যে সংক্রমণ পর্যবেক্ষণ এবং দৈনিক রিপোর্ট করতে হবে। নির্বাচিত কিছু স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য কর্মচারীদের নমুনা পরীক্ষা এবং সার্ভেইলেন্সের প্রোটোকল তৈরি এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। যেসব জেলায় ল্যাব আছে সেসব জেলার স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই সার্ভিল্যান্সের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। যেসব জেলায় সংক্রমণের হার বেশী (শনাক্তের হার ≥২০% বা কেসের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা (আগের সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে ৩০% বেশি সংখ্যক কেস) সেসব জেলাতে আরও নিবিড় সার্ভেইলেন্স রাখতে হবে।

ঝ. বিধিনিষেধ সুষ্ঠুভাবে পালন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে মনিটরিং টিম গঠন করে দৈনিক মনিটরিং করতে হবে।

এর আগে, ২ সেপ্টেম্বর দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্তের হার কমে আসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে মত দেয় কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

সারাবাংলা/এসবি/একেএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন