বিজ্ঞাপন

সমীক্ষা ছাড়াই ২৪৬ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব!

September 13, 2021 | 11:28 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই ২৪৬ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। অথচ সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি অনুযায়ী ২৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের প্রকল্পে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বাধ্যতামূলক। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও একই রকমের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু নিয়ম না মেনেইে পরিকল্পনা কমিশনে ‘কিশোরগঞ্জ জেলায় হাওর মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র এবং গোপালগঞ্জ জেলার বিল মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গত ২৯ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এই সমীক্ষা পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর জারি করা হয় পিইসি সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সই করা ওই কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে— সভায় বিভাগের যুগ্ম-প্রধান বলেন, ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়নি। সরকারি খাতের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা আবশ্যক।’

যুগ্ম-প্রধান সভাকে জানান, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গঠন করা স্থান নির্বাচন সংক্রান্ত কমিটি কিশোরগঞ্জের কাটাবাড়িয়া অথবা শোলমারা বা মোরশতালের মধ্যে যেকোনো একটি জায়গায় হাওর মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র এবং গোপালগঞ্জের গোবরায় বিল মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সুপারিশ করেছে। স্থান নির্বাচন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লিখিত প্রকল্প এলাকা আরও সুনিদিষ্ট করে তুলে ধরা প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিস্তারিত আলোচনা শেষে পিইসি সভার সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির তৃতীয় পক্ষ অর্থ্যাৎ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ছাড়া সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে হবে। মৎস্য অধিদফতরের নেতৃত্বে এই সমীক্ষা হতে পারে।

প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রসঙ্গে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের বেশি হলেই যেকোনো প্রকল্পের ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অবশ্যই করতে হবে। এটি নিয়মে আছে। কেননা সমীক্ষা সঠিকভাবে না হলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে টাইম ওভার রান (বাস্তবায়নের সময় বেড়ে যাওয়া) এবং কস্ট ওভার রান (ব্যয় বেড়ে যাওয়া) হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’

‘কিশোরগঞ্জ জেলায় হাওর মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র এবং গোপালগঞ্জ জেলার বিল মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা গেছে, হাওর এবং বিল মৎস্য সম্পদের টেকসই উন্নয়নে গবেষণা পরিচালনার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। এছাড়া হাওর ও বিলের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, টেকসই আহরণ, রোগবালাই শনাক্তকরণ ও দমন, মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ, মূল্য সংযোজিত পণ্য উৎপাদন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ইত্যাদি নিয়ে সময়োপযোগী গবেষণা পরিচালনা করা হবে। এর মাধ্যমে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হবে। পাশাপাশি সম্প্রসারণ কর্মী, জেলে, মৎস্য চাষি ও উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কে অবহিত করার জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রদশর্নী সুবিধা তৈরি করা হবে।
পিইসি সভায় জানানো হয়, কিশোরগঞ্জ জেলায় হাওর মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র এবং গোপালগঞ্জ জেলায় বিল মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য ২০১৪ সালেও একবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণায়) প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর সাত বছর পেরিয়ে গেলেও সেটি নিয়ে কাজ হয়নি। কিন্তু এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে গবেষণা কেন্দ্র দু’টি স্থাপনের জন্য কাজ করছে মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞাপন

সভায় আরও জানানো হয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী প্রকল্প থেকে ভেসেল ও স্পিড বোট বাদ যাবে। এছাড়া প্রকল্পের বাস্তবায়ন পর্যায়ের জন্য অর্থ বিভাগের জনবল নির্ধারণ কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রকল্পের যানবাহন সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে।

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন