বিজ্ঞাপন

প্রবীণ পুরুষের চেয়ে নারীদের অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের হার বেশি

October 1, 2021 | 11:03 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে প্রবীণ (ষাটোর্ধ্ব) পুরুষদের ৩৭ শতাংশ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। কিন্তু প্রবীণ নারীদের অসংক্রামক রোগের আক্রান্তের হার পুরুষদের তুলনায় এক দশমিক ৪৬ গুণ বেশি। বর্তমানে প্রবীণ নারীদের ৪৫ শতাংশ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। এছাড়াও প্রবীণদের ৫ জনের মাঝে ৪ জনই উচ্চ-রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশ) এবং বিষণ্ণতার মতো অসংক্রামক রোগে ভুগছেন বলে জানা গেছে এক গবেষণায়। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এই গবেষণা ফলাফল জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার ( ১ অক্টোবর)  ‘আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনলাইন ওয়েবিনারে প্রবীণদের ওপর পরিচালিত গবেষণার ফলাফলে এ চিত্র উঠে আসে বলে জানানো হয়েছে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

‘লিডিং ইয়ুথ টু দ্যা ওয়াইজ ফর ডিজিটাল ইকুইটি অ্যান্ড কেয়ার’ শীর্ষক এই ওয়েবিনারের মূল আয়োজক ছিল ‘দ্য গ্লোবাল হেলথ নেটওয়ার্ক এশিয়া’ এবং  ‘ক্লিনিক্যাল রিসার্চ প্লাটফর্ম বাংলাদেশ’।

ওয়েবিনারে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানী ও ইনিশিয়েটিভ ফর নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস এর প্রধান ড. আলিয়া নাহিদ।

বিজ্ঞাপন

ওয়েবিনারে জানানো হয়, দেশজুড়ে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে প্রবীণদের প্রতি ২ জনের একজন দুই বা তার অধিক অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। এছাড়া প্রবীণ পুরুষদের তুলনায় (৩৭ শতাংশ) প্রবীণ নারীদের (৫৪ শতাংশ) অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের হার অনেক বেশি।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বিগত ছয়মাসে প্রবীণ ব্যক্তিরা প্রতি তিনজনের একজন ( ৩৫ শতাংশ) কাছের ওষুধের দোকানের বিক্রেতার কাছে গেছেন চিকিৎসা সেবার জন্য। ৩৬ শতাংশ গিয়েছেন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আর ১৭ শতাংশ সেবা নিয়েছেন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রবীণদের সর্বশেষ ছয়মাসের স্বাস্থ্যসেবার গড় খরচ ছিল ২ হাজার ৪২৯ টাকা। এই প্রবীণদের ৩০ শতাংশ এখনও নিজেরা আয় করেন যা থেকে তারা চিকিৎসার খরচ চালান। যারা নিজেরা আয় করেন না তাদের মধ্যে প্রতি পাঁচ জনের চার জন চিকিৎসা খরচের জন্য সন্তানদের আয় কিংবা নিজস্ব সঞ্চয়ের ওপর নির্ভরশীল।

বিজ্ঞাপন

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী প্রবীণ ব্যক্তিদের মধ্যে ৩২ শতাংশ সরকারি সামাজিক সুরক্ষার ভাতা (বয়স্ক/বিধবা) পেয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন— উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণাপত্রে।

ওয়েবিনারে গবেষক ও জনস্বাস্থ্যবিদরা অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সেবাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সংশ্লিষ্ট গবেষণা জোরদার করার সুপারিশ করেন।

গবেষণা বিষয়ে জানিয়ে গবেষণা দলের প্রধান ড. আলিয়া নাহিদ বলেন, আমরা দেশব্যাপী দুই হাজার সাতশো পঁচানব্বই জন প্রবীণ ব্যক্তির কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে একাধিক অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের একটা চিত্র পাই যা বেশ উদ্বেগজনক।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৭.৪৮ শতাংশ প্রবীণ ছিল যা ২০৪১ সালে দ্বিগুণ হয়ে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। সেজন্য প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাকে তাদের দোরগোড়ায় নেওয়া উচিত এবং সামাজিক সুরক্ষার পাশাপাশি প্রবীণদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হবে।

প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবাকে জোরদার করার জন্য নতুন উদ্ভাবনী ব্যবস্থার মাধ্যমে যুবকদেরকে প্রবীণদের সেবায় সম্পৃক্ত করার উপর জোর দেন ড. আলিয়া নাহিদ।

ওয়েবিনারে একটি ভিডিও বার্তায় আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ প্রবীণদের মধ্যে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, অসংক্রামক রোগ, এবং যেসব রোগ প্রবীণদের মাঝে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে সেসব মোকাবেলা করার জন্য আমাদের আরও গবেষণা, এবং সহযোগিতামূলক কাজ করতে হবে।

ওয়েবিনারে প্রবীণদের সেবাকে আরও কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে কিছু সুপারিশমালা তুলে ধরেন যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো-ইপিডিমিওলজি ও গ্লোবালএইজিং এর অধ্যাপক ড. ব্লোসম স্টেফান। তিনি প্রবীণদের সেবা আরও উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা প্রমাণভিত্তিক জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রবীণ সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে অংশীদারিত্ব তৈরি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার জন্য সুপারিশ করেন।

ওয়েবিনারে নিম্ম ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবাকে আরও কিভাবে উন্নত করা যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ, নেপাল ও যুক্তরাজ্য থেকে গবেষক, চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্যানেল আলোচনায় তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।

এই প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন।

স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর কার্যক্রম এবং এই সেবাকে আরও কিভাবে সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছানো যায় তা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করছে বলে জানান অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) ও রেসপাইরেটরি মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন কোভিড-১৯ মহামারী সময়ে একাধিক অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত প্রবীণদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছিল সে বিষয়টি উল্লেখ করেন।

প্যানেল আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন নেপাল পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. লোচানা শ্রেষ্ঠা, নেপালের পাটান একাডেমির ইমার্জেন্সী মেডিসিনের প্রভাষক ডা. সুনীল অধিকারী, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল হেলথ নেটওয়ার্কের ডিরেক্টর অধ্যাপক ট্রুডি লাং।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন নেপালের পাটান একাডেমির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক রাজেশ নাথ গোঙ্গল, বিএসএমএমইউ’র প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো জাহিদ হোসেন ও নেপাল পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ডা. মহেশ মাস্কি ।

ওয়েবিনারে অসংক্রামক রোগের গবেষণা ও সমাধানে সাউথ-সাউথ সহযোগিতার ভিত্তিতে গঠিত ‘গ্লোবাল ইনোভেশন হাব ফর মাল্টিমর্বিডিটি’ নামে একটি বৈশ্বিক প্লাটফর্মের উদ্বোধন করেন আইসিডিডিআর,বি-র হেলথ সিস্টেমস এ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজ ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর অধ্যাপক ড্যানিয়েল ডি. রিডপ্যাথ।

উল্লেখ্য, ‘গ্লোবাল ইনোভেশন হাব ফর মাল্টিমর্বিডিটি’ শীর্ষক প্লাটফর্মটি বাংলাদেশের আইসিডিডিআর,বি এবং বিএসএমএমইউ ছাড়াও যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেপালের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন ও পাটান একাডেমি অব হেলথ সায়েন্সের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ওয়েবিনারটি সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড্যানিয়েল ডি. রিডপ্যাথ। ওয়েবিনারটিতে দেশ ও বিদেশের গবেষক, চিকিৎসক, শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিক, টেলি-স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, যুব সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা প্রবীণ ব্যক্তিদের মাল্টিমর্বিডিটি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি অন্যান্য সেক্টরকেও সম্পৃক্ত করার জন্য সুপারিশ করেন।

সারাবাংলা/এসবি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন