বিজ্ঞাপন

সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের বিচারে বিশেষ ট্রাইবুনালের দাবি

October 20, 2021 | 7:02 pm

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট

দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজ। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘ব্যর্থ’ আখ্যা দিয়ে তাকে অপসারণ, রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করাসহ সর্বমোট ৭ দফা দাবি জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তারা এসব দাবি জানান।

‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ শীর্ষক ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার।

তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সরকার যেভাবে করছে, প্রয়োজনে সেভাবে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে এসব হামলায় জড়িতদের সঠিক বিচার করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

ইমরান এইচ সরকার বলেন, আজকে আমরা এমন একটি বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছি, আমাদের পূর্বসূরিরা যারা মহান মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তারাও হয়তো এই অবস্থার কথা কল্পনা করতে পারেনি। এমন এক অবস্থায় এসে পৌঁছেছি আমরা, যেন এখন হিন্দুরা তাদের পূজা উদযাপন করলেও রাষ্ট্র, সরকার বা ধর্মে যারা সংখ্যাগুরু, তাদের বক্তব্য এমন যে, মনে হচ্ছে কয়দিন পরে তারা বলবে— তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে!

তিনি বলেন, এর আগে আমরা দেখেছি, সংখ্যালঘুদের উৎসবগুলো অন্তত নির্বিঘ্ন করার চেষ্টা করা হতো। আমার মনে হয়, এবার যে হামলা হয়েছে, স্বাধীনতার পর এভাবে ঘোষণা দিয়ে এতবড় হামলা হয়নি। এক নোয়াখালীতেই তিনদিন হামলা হয়েছে। তাদের ঠেকাবার যেন কেউ নেই! আমাদের যেন কোনো সরকার নেই, রাষ্ট্র নেই, যেন কোনো প্রশাসন নেই!

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছি। হত্যাকাণ্ড হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, দোকানপাট লুট হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে ঘরবাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে। আজ হিন্দুরা বলছে, এ দেশ কি আমাদের? এ দেশে কি আমরা বসবাস করতে পারবো? এই প্রশ্নের উত্তর আপনাদের সবাইকে দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সমাবেশে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু বলেন, একাত্তর সালে মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য। আজকের এই বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেনি। আওয়ামী লীগ সরকার কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। আজকে ১৩ বছর ধরে জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যখন যা খুশি করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে৷ কোথাও কোনো জবাবদিহি নেই।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে উত্থাপন করা ৭ দফা দাবিগুলো হলো—

১. সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সাথে জড়িত এবং মদদদাতাদের গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে

২. অব্যাহত সাম্প্রদায়িক হামলার দায় আওয়ামী সরকার ও পুলিশ প্রশাসনকে নিতে হবে। নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অপসারণ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

৩. সভা- সমাবেশ এবং ইউটিউব-ফেসবুকে সাম্প্রদায়ি বিদ্বেষ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. বহুধারার শিক্ষাপদ্ধতি বাতিল করে মাতৃভাষায় এক ধারার, বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা পদ্ধতি চালু করতে হবে।

৫. দেশের প্রতিটি স্কুলে শিল্পকলা বিষয়ক একাধিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ রহিত করতে হবে। বিভেদ, বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টিকারী লেখা ও উপাদান পাঠ্যপুস্তক থেকে তুলে নিতে হবে। গণতন্ত্র, মানবমর্যাদা ও সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষা পাঠক্রম পুনর্বিন্যস্ত করতে হবে। সেইসঙ্গে ইউনিয়ন পর্যায়ে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

৬. রামু, নাসিরনগর, সাতক্ষীরা, অভয়নগর, শাল্লাসহ পূর্বের সব সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার করতে হবে। সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা তদন্তে ‘গণতদন্ত কমিটি গঠন করে তার সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।

৭. ধর্মকে রাজনীতি ও ক্ষমতার হাতিয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে সব দলকে

৮. সংবিধান সংশোধন করে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ বাতিল করে ধর্মনিরপেক্ষতা’ পুনঃস্থাপন করতে হবে। একই সংগে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।

অনুষ্ঠিত নাগরিক বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক এ এন রাশেদা, `নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ` আন্দোলনের নেতা আকরামুল হক, আইনজীবী ও লেখক ইমতিয়াজ মাহমুদসহ অনেকে।

সারাবাংলা//আরআইআর/ এসএসএ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন