বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুপ্রেমী জাতীয় চারনেতার আত্মত্যাগ

November 3, 2021 | 6:18 pm

অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ

জাতির জীবনে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় ৩রা নভেম্বর। প্রতি বছরই এ দিনটি আসে। আমরা স্মরণ করি, শোক প্রকাশ করি ১৫ই আগস্ট, ১৯৭৫-এ খুনী মোশতাক ও জিয়াউর রহমান চক্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর তার ঘনিষ্ঠ চার সহকর্মী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জমানকে জেলে পাঠানো হয়। একই বছরে ৩রা নভেম্বর আবারো একদল বর্বর সেনা সদস্য বিশ্বাসঘাতক, খুনী খন্দকার মোশতাকের নির্দেশে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে এই জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে গুলি করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার পর কে ভেবেছিল এমন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী গোষ্ঠি এই বীভৎসতায় মেতে উঠবে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে আসার পর এই গোষ্ঠী তাকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মহানুভবতার সুযোগ নিয়ে বিরাট একটি পাকিস্তানপন্থী পরাজিত শক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য সবরকমের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। এক পর্যায়ে সেই সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করে এবং এটি নিয়ে একটি প্রতিক্রিয়াশীল স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি নানারকম মুখরোচক গল্প কাহিনী গুজব আকারে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়াতে থাকে। সেনাবাহিনীতে যারা নেতৃত্বে ছিলেন তাদের মধ্যেও নানা চাওয়া পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ ছিল। পত্রিকাগুলোও কি এক অজানা কারণে বঙ্গবন্ধু সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য নানা অপপ্রচার শুরু করলো। সন্ধ্যা হলেই ‘গণকণ্ঠ’ নামে একটি পত্রিকা মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ নিয়ে হাজির হত। কেমন যেন এক ধরণের অস্থিরতা বিরাজমান ছিল। রক্ষীবাহিনী নিয়ে বিভিন্ন রকমের গল্প লেখা হতো। গুজব রটানো হতো। অর্থাৎ যে ধ্যান ধারনা নিয়ে ১৯৫২ থেকে সালের ভাষা আন্দোলনের পর ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। সেখান থেকে জাতিকে বিচ্যুত করার জন্য পরাজিত রাজাকার-আলবদর গোষ্ঠি দেশিয় চরদের নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। এখনো বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে যখন সবকিছু ঠিকঠাক চলে তখনো সেই ৭১-পরবর্তী ঘটনাগুলো সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে। কারণ এখনো সেই তৎপর ‘জয় বাংলার’ অর্জনকে ব্যহত করার। মনে হয় সব কিছু ঠিকঠাক আছে। কিন্তু মোস্তাক, তাহেরউদ্দীন ঠাকুর, জিয়াউর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেমের বিশ্বাসঘাতকতার ধারার কিন্তু মৃত্যু হয় নি। জয় বাংলার আলোটি জ্বালিয়ে রাখার জন্য সবসময় সচেষ্ট থাকতে হবে। প্রশাসনে, রাজনীতিতে এই বিশ্বাসঘাতকদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে। জাতীয় চার নেতাও হয়তো বুঝেননি কি গভীর ষড়যন্ত্র বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে চলেছিল।

পুরোনো ঢাকার জিন্দাবাহারের বাসায় থাকাকালীন সময়ে সেই উনসত্তুরে গণ-আন্দোলনের সময় ছাদে উঠে আন্দোলনের ব্যপকতা অবলোকন করার সুযোগ হয়েছিল। আগুনের কালো ধোঁয়া দেখলেই মনে মনে খুশী হতাম ভেবে যে আন্দোলন বেগবান হচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ছাদে উঠে কালো ধোঁয়া দেখে এক ধরনের প্রশ্নও জেগেছিল। এখন কালো ধোঁয়া কেন? পরে শুনেছি স্বরাষ্টমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর বাড়ী ঘেরাও ও তোপখানায় ইউএসআইএস ঘেরাও কর্মসূচীতে পুলিশী এ্যাকশনের ফলেই ভাংচুর আগুন। দুঃখের বিষয় বামপন্থী অনেক সংগঠনও সেই সময় আওয়ামী লীগের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তাদের সঙ্গে এক পর্যায়ে মৌলবাদী শক্তিও যোগ দেয় এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল অর্জনকে ব্যর্থ করার জন্য এক অপপ্রয়াস চালায়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর অনেক নেতৃস্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দকে সামরিক সরকার টার্গেট করেছিল। অনেকে ঝুঁকি নিয়েও প্রতিবাদ করেছিলেন। জাতীয় এই চার নেতা পালিয়ে যেতে পারতেন। হয়তবা বঙ্গবন্ধুর এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে তারা এতটাই হতবিহ্বল হয়ে গিয়েছিলেন যে সেই চেষ্টাই করেননি। যারা নয় মাস মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তারা কি করে পালিয়ে যাবেন?

আর ঐ মুক্তিযুদ্ধ বিরুদ্ধ শক্তি এতটাই বেপোরোয়া ছিলেন যে বঙ্গবন্ধুর এই চার ঘনিষ্ঠজনকে কোনোভাবে সরিয়ে দিতে পারলেই যেন তাদের ষোলোকলা পূরণ হয়। এখন প্রায়শই মনে হয় কেন তারা পালিয়ে গেলেন না বা আত্মগোপন করলেন না। বেঁচে থাকলে হয়তো বা বাংলাদেশ আরো আগেই আজকের এই বাংলাদেশের মতো সমৃদ্ধ হতো। তাদের হত্যাকাণ্ড পরিপূর্ণ বিচার এখনো হয়নি। আংশিক হয়েছে মাত্র। তা ও বঙ্গবন্ধুরকন্যা শেখ হাসিনার কারনেই তা সম্ভবপর হয়েছে। এখন আমাদের গবেষকদের, ইতিহাসবিদদের আরো করণীয় আছে যে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে মদদদাতা কারা ছিল। আমার মতে তারা এখনো ঘাপটি মেরে আছে। তাদের অনুসারীরা ব্যবসা, বানিজ্য মিডিয়া সব জায়গাতেই অত্যন্ত তৎপর আছে। তাদের গতিবিধি সম্পর্কে কড়া নজর রাখা, সর্তক থাকা আমাদের সকলের কর্তব্য। বছরের সবসময় মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক আলোচনা, সেমিনার লেখালেখি চালিয়ে যাওয়া উচিত।

বিজ্ঞাপন

এই ঘৃণ্য কাজ যেন আর বঙ্গবন্ধুর বাংলায় সংগঠিত না হয় তার জন্য আমাদের সকলের অতন্দ্র প্রহরীর মত থাকা উচিৎ। বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতার আদর্শে দেশ পরিচালিত হবে এবং এভাবেই পরবর্তী প্রজন্মকে প্রস্তুত রাখতে হবে।

লেখক: ট্রেজারার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন
প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন