বিজ্ঞাপন

‘রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণ এখতিয়ার বহির্ভূত’

November 15, 2021 | 5:19 pm

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট

বনানীর রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণ মামলা না নিতে ‘পরামর্শ’কে বিচারকের এখতিয়ার বহির্ভূত বলে মন্তব্য করেছেন নারী অধিকারকর্মীরা। তারা বলছেন, ধর্ষণসহ নারীদের যৌন হয়রানির বিচারে বিদ্যমান আইন শতবর্ষের পুরনো আইনের আদলেই চলছে, যা প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। সে কারণেই নারীর প্রতি নিপীড়নমূলক আইন পরিবর্তনের দাবিতে এখনো রাজপথে নামতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৫ নভেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের লেডি জাস্টিস ভাস্কর্যের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। মানববন্ধনে নারী অধিকার নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে তারা সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা বাতিল, ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালুসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেন।

মানববন্ধন নারী সংহতির সদস্য রেক্সোনা সুমী বলেন, একটি রাষ্ট্রের উন্নতি নির্ভর করে নারীদের জীবনব্যবস্থার ওপর। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো আমাদের দেশের নারীরা ঊনমানুষ হয়ে আছে। এখনো নারীর প্রতি নিপীড়নমূলক আইন পরিবর্তন করার জন্য আমাদের রাস্তায় নামতে হয়। এটা লজ্জার।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমরা দেখছি, বিচার বিভাগ নানান জায়গায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। নাগরিকরা কোথায় যাবে? সাক্ষ্য আইনগুলোর ত্রুটিগুলো এখনো আছে। এগুলোর কারণে নিপীড়ন হচ্ছে।

মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণ মামলা না নেওয়ার ‘পরামর্শ’ বিচারকের এখতিয়ার বহির্ভূত বলে মানববন্ধনে মন্তব্য করেন ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান। তিনি বলেন, ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণ মামলা না নেওয়ার যে সুপারিশ পুলিশকে করেছেন, তিনি সেটি তার জুরিসডিকশনের বাইরে গিয়ে করেছেন। কীভাবে তিনি এ ধরনের কথা বলেন? ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তানি আমল কিংবা এই আমলেও এ ধরনের সময় বেঁধে দিয়ে অভিযোগ না নেওয়ার কথা আসেনি!

সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা বাতিলের দাবি জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ১৫৫(৪) ধারা বলছে— যদি বিবাদী পক্ষ দেখাতে পারেন যে ধর্ষণের অভিযোগকারীর চরিত্র ‘ভালো না’, তবে তা একটি ডিফেন্স হবে। হ্যাঁ, কয়েকশ বছর আগে মানুষের মানসিকতা এরকম ছিল। ওই মানসিকতার আদলে এই আইন হয়েছে। সেই সময়ের জন্য তা ঠিক ছিল। কিন্তু এখন কেন আমরা এত আগের আইনে পড়ে থাকব? অবশ্যই এটি বাতিল হওয়া উচিত।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, কোনো পুরুষ কোনো নারীর সঙ্গে জোর করে যৌন সম্পর্ক কিংবা কোনো যৌনমূলক আচরণ করতে পারবেন না— এটি বাংলাদেশের প্রচলিত যে আইনগুলো আছে, সেগুলোর ব্যাপারে হাইকোর্টের ব্যাখ্যা। এমনকি ওই নারী যদি আপন স্ত্রী-ও হয়, সেক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, আমরা কোনো সামন্তীয় দেশে বসবাস করছি না। আমরা গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রে বসবাস করছি। ফলে আমরা প্রতি মুহূর্তে আশা করি, সমান মর্যাদা ও সমান অধিকার নিয়ে আমরা বসবাস করব। কিন্তু আমরা দেখি, প্রতিমুহূর্তে আমরা দেখি— এখানে নারীকে অপমান করে, অবমাননা করে বক্তব্য রাখা হচ্ছে কিংবা আইন পাস করা হচ্ছে, রায় দেওয়া হচ্ছে।

আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার আসামিদের খালাস দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগে আমরা দেখেছি, আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাতকে বেখসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। কারণ, সেখানে নাকি কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সেই রেইনট্রি হোটেলে কোনো না কোনো প্রমাণ অবশ্যই ছিল। কেন তা পাওয়া যায়নি? এসব প্রমাণ বেমালুম লুট হয়ে যায়। অর্থ-সম্পদ-প্রভাব-ক্ষমতা এসব অপরাধীদের রক্ষা করছে।

বিজ্ঞাপন

মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে দিলশানা পারুল  বলেন, আমি কোনো দল-সংগঠন করি না। তারপরও এখানে এসেছি কিছু নাম শোনাব বলে। সেই নামগুলো কী কী? ইয়াসমিন, তনু, তানিয়া, আমাদের মারমা বোনেরা, চাকমা বোনেরা! আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি বোনের কথা মনে করতে চাই, যারা ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অপরাধের শিকার হয়। আমরা জানি না, আপনারা কতখানি এটা অনুভব করেন। মেয়ে হিসেবে আমরা কী নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে  যাচ্ছি, তা আমরা জানি। আমাদের বলা হয়— বেডরুমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না, রাস্তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। ইয়াসমিনের ঘটনা, তানিয়ার ঘটনাকে বলা হয় স্বাভাবিক ঘটনা। তনু একটি সাধারণ ঘটনা। আমাদের বলা হয়, এই নামগুলো উচ্চারণ করা যাবে না!

সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন