বিজ্ঞাপন

সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ভুল তথ্যের প্রভাব দেখেন ৮৬% মানুষ

March 1, 2022 | 12:27 am

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ভুল তথ্য সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে উসকে দেয় বলে মনে করেন দেশের ৮৬ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ মনে করেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ভুল তথ্যের কোনো প্রভাব নেই। আর বাকি ২ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, এ ধরনের ঘটনায় ভুল তথ্যের প্রভাব থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে ভুল তথ্য ও অপতথ্য এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ওপর এর প্রভাব বিষয়ক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান আর্টিকেল নাইনটিন এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ ও কার্যক্রম সম্পর্কে জানাতে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে গবেষণা কার্যক্রমের ফলাফল তুলে ধরার পাশাপাশি এর প্রভাব ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ফারুক ফয়সাল, প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট সাবরিনা মুমতাজ ও প্রোগ্রাম অফিসার আনোয়ার রোজেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সাবরিনা মুমতাজ বলেন, মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য, ভুল তথ্য ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে সহিংসতা ঘটার যে শঙ্কা, সেটি নিরসনে কাজ করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রকল্পের চারটি মূল উদ্দেশ্য হলো— গবেষণা (তথ্য সংগ্রহ), তথ্যের সত্যতা যাচাই সংক্রান্ত টুল কিট গড়ে তোলা, দেশের পাঁচটি এলাকায় কমিউনিটি রেডিও’র মাধ্যমে স্থানীয়দের নিয়ে টকশো আয়োজন ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তরুণ সমাজকে কেন্দ্র করে অনলাইন ক্যাম্পেইন চালানো, যেন তারা বুঝে না বুঝেই অনলাইনে পোস্ট করা তথ্য বিশ্বাস ও শেয়ার না করে।

বিজ্ঞাপন

আর্টিকেল নাইনটিনের উদ্যোগে ও তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি পরিচালনা করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মিথিলা ফারজানা। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ৫০ জন মানুষের ওপর গবেষণাটি চালানো হয়। এছাড়াও জরিপে ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন (এফজিডি) ও দু’টি কেস স্টাডি পর্যবেক্ষণ করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও কক্সবাজারের রামুর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনাকে কেস স্টাডি হিসেবে নেওয়া হয় এই গবেষণায়।

অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে মিথিলা ফারজানা বলেন, ইন্টারনেটে প্রকাশিত তথ্য সত্য না মিথ্যা তা ৭৯ দশমিক ১০ শতাংশ মানুষ যাচাই করতে পারেন না। ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ সবসময় এসব তথ্য যাচাই করেন। বাকি ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ মানুষ কখনো এসব তথ্য যাচাই করেন, কখনো করেন না। আবার এসব তথ্য বিশ্বাস করেন ৭ শতাংশ মানুষ। ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ কখনো বিশ্বাস করেন, কখনো অবিশ্বাস করেন। আর ৬৭ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ এসব তথ্য একেবারেই বিশ্বাস করেন না।

জরিপের তথ্য তুলে ধরে আরও জানানো হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে খবর পড়ার ও দেখার মাধ্যম মনে করেন ৭৬ দশমিক ৭০ শতাংশ মানুষ, মনে করেন না ১৪ শতাংশ মানুষ, বাকি ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ মানুষ কখনো কখনো এই মাধ্যমকে সংবাদের উৎস হিসেবে মনে করেন। এছাড়া জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, গ্রামের মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা দেখে তা-ই বিশ্বাস করেন। ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী গ্রামের মানুষ সম্পর্কে এমন ধারণা পোষণ করেন না। আর বাকি ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, গ্রামের মানুষ কখনো কখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বিশ্বাস করেন।

বিজ্ঞাপন

মূল প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণ অনুযায়ী সংবাদ, তথ্য ও অপতথ্যের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অপতথ্য এড়ানোর সুযোগ থাকলেও ধর্ম সংক্রান্ত অপতথ্য সাধারণত বিশ্বাস করা হয়। বাংলাদেশে অপতথ্যের মূল ভিত্তি রাজনীতি ও ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়, যেখানে ধর্ম সংক্রান্ত তথ্য অনেকসময় মৌলবাদীদের মধ্যে সহিংস চিন্তা জাগ্রত করতে পারে।

গবেষণা কার্যক্রমে আরও উঠে এসেছে, সাধারণ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বিকল্প সংবাদমাধ্যম মনে করেন। এতে ছড়িয়ে পড়া তথ্য ভুল নাকি অপতথ্য তা, বুঝে ওঠা যায় না। তারা এটিও ভাবছেন, কিছু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত খবর ছড়ানোর সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়ায়। সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ভুল তথ্যের বিশাল নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এর সমাধান হিসেবে তারা মিডিয়া লিটারেসি প্রোগ্রামের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।

গবেষণার ফলাফল ও মূল তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলো হলো—

১. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাড়ানোর জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে;
২. দেশজুড়ে মিডিয়া লিটারেসি প্রোগ্রাম পরিচালনা করতে হবে;
৩. তথ্যের সত্যতা যাচাই বিষয়ে স্থানীয় নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে;
৪. যেকোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে;
৫. সঠিক তথ্যের প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে; এবং
৬. সরকারকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন