বিজ্ঞাপন

টান পড়েছে জনশক্তি রফতানিতে, কমেছে রেমিট্যান্স

March 3, 2022 | 8:39 am

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির ধকল কাটিয়ে বছরের শুরুতে জনশক্তি রফতানিতে যে গতি দেখা গিয়েছিল গত মাসে তা অনেকটাই কমেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছে ৯২ হাজার ৫৬৯ জন কর্মী। তার আগের মাসে অর্থাৎ জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৬৯৮ জন। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনশক্তি রফতানির এ গতি স্বাভাবিক। কোনো মাসে অনেক বেশি যাবে আবার কোনো মাসে কমবে। তবে ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে ওই দেশগুলোতে কিছুটা কমবে বলে ধারণা করছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন ৯২ হাজার ৫৬৯ জন কর্মী। এরমধ্যে সৌদি আরবে গেছেন ৫৬ হাজার ১৫ জন কর্মী। আর দেশটিতে আগের মাসে কর্মী গেছে ৭১ হাজার ১৭২ জন। যা আগের মাসের চেয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫ হাজার ১৫৭ জন কর্মী কম গেছে। আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফেব্রুয়ারি গেছে ১৪ হাজার ৫৮৫ জন, দেশটিতে আগের মাসে গেল ১২ হাজার ৮৮৫ জন। এখানে অন্তত দুই হাজার কর্মী বেশি গেছে। ফেব্রুয়ারিতে কুয়েতে গেছেন ৫১৮ জন আর জানুয়ারিতে গেল ৭২১ জন। ওমান গেছেন ১২ হাজার ৭১৩ জন, আগের মাসে এ সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৫১৫ জন। কাতারে ফেব্রুয়ারিতে গেল ১হাজার ৪৩৪ জন আর জানুয়ারিতে গেছে ১ হাজার ৪৩১ জন। বাহারাইনে গেছে জানুয়ারিতে ১ জন কর্মী গেলেও ফেব্রুয়ারি একজনও যেতে পারেনি। অথচ এই দেশটি একসময় বাংলাদেশের জন্য অন্যতম শ্রমবাজার ছিল। ফেব্রুয়ারিতে লেবাননে গেছেন মাত্র ৩৮ জন কর্মী আর জানুয়ারিতে গেছে ২১ জন। জর্ডানে গেছে ১ হাজার ৫৪৯ জন আর আগের মাসে গেছে ১ হাজার ৪৭৮ জন। লিবিয়ায় জানুয়ারিতে ২ জন গেলেও ফেব্রুয়ারিতে একজন পাঠানো যায়নি। মালয়েশিয়ায় ৯ জন গেছে আর জানুয়ারিতে গেছে ১৩ জন। সিঙ্গাপুরে গেছে ২ হাজার ৮২৬ জন আর জানুয়ারিতে গেছে ৩ হাজার ৮৪১ জন। সাউথ কোরিয়ায় ২২০ জন তার আগের মাসে গেছে ১২৯ জন। লন্ডনে গেছে ২৬ জন তার আগের মাসে গেছে মাত্র ১৪ জন। ইতালিতে ১১৩ জন গেছেন আর জানুয়ারিতে গেছেন ১০২ জন। মরিশাস ১৮৬ জন আর জানুয়ারিতে গেছেন ৩১০ জন। ব্রুনাইতে জানুয়ারিতে একজনও যেতে না পারলেও ফেব্রুয়ারিতে গেছে ৬ কর্মী। আর ফেব্রুয়ারিতে ইরাকে গেছে দুই কর্মী। এছাড়া অন্যান্য দেশে গেছেন আরও ৮৯৯ জন কর্মী, যেখানে গত জানুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ৮২৭ জন। সব মিলিয়ে ফেব্রুয়ারিতে গেছেন ৯২ হাজার ৫৬৯ জন আর আগের মাসে গেছে ১ লাখ ৯ হাজার ৬৯৮ জন। তুলনা করলে দেখা যাবে জানুয়ারি মাসের চেয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে ১৭ হাজার ৬৯ জন কর্মী কম বিদেশে গেছেন।

অন্যদিকে ফেব্রুয়ারি মাসে জনশক্তি রফতানিতে নারী শ্রমিক গেছেন ১০ হাজার ৬১২ জন। যা জানুয়ারি মাসের চেয়ে ৩২২ জন কর্মী বেশি গেছেন। জানুয়ারি মাসে এ সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ২৯০ জন। নারী কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গেছেন সৌদি আরবে। সেখানে গত জানুয়ারিতে কাজ নিয়ে গেছেন ৬ হাজার ৪৯৯ জন আর ফেব্রুয়ারিতে গেছে ৬ হাজার ৮৫৮। জন সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন ১৭৭ জন, গত জানুয়ারি মাসে এ সংখ্যা ছিল ১৪৩ জন। কুয়েতে ৪ জন গেলেও গত ফেব্রুয়ারিতে গেছেন ৫ জন। ওমানে ফেব্রুয়ারিতে গেছে ১ হাজার ৮৩৭ জন আর জানুয়াতিতে গেছে ১ হাজার ৯৬০ জন। কাতারে ১৫৪ জন গেছে আর আগের মাসে গেছে ১৮০ জন। লেবাননে গত ফেব্রুয়ারিতে গিয়েছেন ২০ জন, তার আগের মাসে গেছে ১৬ জন। জর্ডান ফেব্রুয়ারিতে গেছে ১ হাজার ৫১৯ জন আর তার আগের মাসে গেছে ১ হাজার ৪৩৮ জন। মালয়েশিয়ায় গত ফেব্রুয়ারি গেছেন ১ জন আগের মাসে গেছেন ৪ জন। সিঙ্গাপুরে গেছে ২ জন আগের মাসে গেছে ৭ জন। এছাড়াও ইউকে গেছে ১ জন নারী। সব মিলিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে ১০ হাজার ৮৫৮ জন নারী কর্মী গেছেন।

এদিকে বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অপেক্ষায়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে কর্মী পাঠাতে কাজ শুরু করা হয়েছে। চলতি মার্চ মাস থেকেই দেশটিতে কর্মী পাঠানো শুরু করা যাবে। যদিও মালয়েশিয়াকে কেন্দ্র করে অবৈধ লেনদেন না করতে কর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়ে সম্প্রতি দেশের কয়েকটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন প্রকাশ ছাড়া তেমন কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়ে এখন পর্যন্ত দেওয়ার মতো নতুন কোনো তথ্য নেই। কারিগরি কাজ চলছে। কর্মী পাঠাতে কত টাকা খরচ হবে, কোন প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ হবে, কবে থেকে পাঠানো যাবে এমন কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

এদিকে ফেব্রুয়ারি মাসে উল্লেখযোগ্য হারে রেমিট্যান্স পাঠানোর হার কমেছে। জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স ছিল ১৭০ কোটি ডলার আর ফেব্রুয়ারি এসেছে ১৫০ কোটি ডলার। শতাংশের হিসেবে জানুয়ারির চেয়ে ফেব্রুয়ারিতে কমেছে ১২ দশমিক ২২ শতাংশ। আর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে রেমিট্যান্স প্রবাসীরা পাঠিয়েছে তার থেকেও ১৬ শতাংশ কম। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে সরকার ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ করে প্রণোদনা দিয়ে আসছে। সবশেষ চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আরও দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। তারপরেও রেমিট্যান্সে পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ জনশক্তি রফতানি শুরু করে। ওই বছর বিশ্বের সাত দেশে মোট ৬ হাজার ৮৭ জন কর্মী পাঠানোর মধ্য দিয়ে জনশক্তি রফতানির শুরু করে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ। ওই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত ১ হাজার ৯৮৯ জন কর্মী বাংলাদেশ থেকে নেয়। এরপরে কাতারে যেতে পারে ১ হাজার ২২১ জন কর্মী। কুয়েতে ৬৪৩ জন, বাহারাইনে ৩৩৫ জন, সৌদি আরবে ২১৭ জন, ওমান ১১৩ জন, লিবিয়াতে ১৭৩ জন এবং অন্যান্য দেশে ১ হাজার ৩৯৬ জন কর্মী গিয়েছিল। ওই বছর মাত্র ৩৫ কোটি টাকা প্রবাসী আয় এসেছিল, সেই শুরু। মাঝে জনশক্তি রফতানিতে নানা বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। গত দুই বছর করোনার কারণে সবচেয়ে কম সংখ্যক কর্মী পাঠানো গেছে। সে সংকট কাটিয়ে চলতি বছরে ব্যাপক সংখ্যক কর্মী পাঠিয়ে এই খাতে আশার আলো দেখা দিয়েছিল জনশক্তি রফতানিতে। যা আবার নিম্মমুখী।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআর/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন