বিজ্ঞাপন

রণজিৎ সরকার-এর গল্প ‘প্রকৃত ভালোবাসায়’

May 3, 2022 | 9:03 pm

প্রকৃত ভালোবাসে অন্ধ হয়ে গেছি। তোকে ছাড়া মনের আয়নায় আর কিছু দেখি না। তাকেই পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদ মনে হয়। চাঁদের আলোর মতো তার গুণ দেহে মনে ছড়িয়ে গেছে। ও যা বলে তাই শুনতে ও করতে বাধ্য হই। যেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে সেখানেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকি। কিছু মনে করি না। কারণ তাকে সত্যিকারের ভালোবাসি। তার কথা মতো চলতেই যেন ভালো লাগে। ওর কথার অবাধ্য হলে যদি অখুশি হয়, তাকে কোনভাবেই অখুশি হতে দেব না। তাকে আমি সব সময় সুখী দেখতে চাই। আজও দাঁড়িয়ে আছি। বলেছে আসতে লাগবে পাঁচ মিনিট। কিন্তু হয়ে গেল চল্লিশ মিনিট। অবশেষে পয়তাল্লিশ মিনিটের মাথায় এলো। এসেই মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ‘সজল, আমাকে প্রশ্ন করলে না। এত দেরি করলাম কেন?’

বিজ্ঞাপন

সজলও মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ‘প্রশ্ন করার কি আছে। আমি তো তীর্থের কাকের মতো বসে আছি, তোমাকে দেখার জন্য। তুমি যে আমার সামনে এসেছ। তাতেই তো আমি খুশি। তোমার হাসিখুশি মুখ দেখা মাত্র সব ক্লান্তি ভুলে যাই।’

‘সজল তুমি আসলেই ধৈর্যশীল ছেলে, তুমি একটা বটবৃক্ষ ভালো ছেলে।’

নিজের প্রশংসা শুনতে সবাই ভালো পছন্দ করে। তাও আবার যদি প্রিয়জন প্রশংসা করে তাহলে তো প্রশংসায় মুখ সুখের বেলুন হয়ে যায়। সজল মাথা নিচু করে বলল, ‘প্রীতি, এবার বলো কোথায় যাবে?’

বিজ্ঞাপন

‘আমরা রিকশায় ঘুরব।’

‘কোন দিকে যাব।’

‘দু চোখ যে দিকে যায়।’

বিজ্ঞাপন

‘তোমার দু চোখ হয়তো আশপাশে যাবে। কিন্তু আমার দু চোখ আমার পাশে বসা তোমার দিকে যাবে।’

‘বলো কী! তাহলে তুমি আমার প্রেমিক হিসাবে পাশে থাকবে না। নিরাপত্তাকর্মী হিসাবে বসে থাকবে। আমি তো তোমাকে প্রেমিক হিসাবে রিকশায় আমার ডান পাশে দেখতে চাই। সেটাই আমি চাই। তা না তুমি নিরাপত্তাকর্মী হিসাবে থাকবে।’

সজল খুব বুদ্ধি করে বলল, ‘প্রেমিক হিসাবে আমি সব সময় তোমার পাশে থাকতে চাই। কিন্তু জানো প্রীতি। এই ঢাকা শহর আমার কাছে অনিরাপদ মনে হয়। গণমাধ্যমের কারণে আমরা কত রকমের ঘটনা জানি। কখন কোন কারণে কে বিপদে পড়ে তা তো বলা যায় না। তাই আমি কখনো তোমার নিরাপত্তাকর্মী আবার কখনো প্রেমিক হিসাবে তোমার পাশে থাকতে চাই। নিজের জীবন দিয়ে হলেও তোমাকে রক্ষা করতে চাই।’

‘তোমার কথাটা খুব ভালো লাগল সজল। এই জন্যই তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়।’

বিজ্ঞাপন

‘আমরা কি রিকশায় উঠব নাকি এখানেইে দাঁড়িয়ে থাকব।’

‘রিকশা উঠব। কিন্তু বয়স্ক মানুষ রিকশাচালক। তাকে নেবে না। তাকে দেখলে বাবার কথা মনে হয়। আমরা যেহেতু অনেক দিক দিয়ে ঘুরব। তাই যুবক রিকশাচালককে নিতে হবে।’

‘আচ্ছা। বুঝতে পেরেছি। একটু অপেক্ষা করি।’

সজল আর প্রীতি যুবক রিকশাচালকের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কিন্তু অনেক সময় পার হয়ে যায়। যুবক রিকশাচালককে পায় না। ওরা দুজন হাত ধরে হাঁটা শুরু করল।

সামনেই একজন অন্ধ ভিক্ষুক পড়ল। বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপওয়ালা দশ টাকার একটা নোট বের করে দিয়ে সজল বলল, ‘চাচা, দোয়া করবেন।’

ভিক্ষুকটা দোয়া পড়তে লাগল। সজল বার বার মানবিক মনের পরিচয় দেয়, তা প্রীতি বার বার প্রমাণ পায়।

প্রীতি বলল, ‘সজল, যে টাকাটা দিয়েছ। সে টাকাতে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিল।’

‘হ্যাঁ। জানি তো।’

‘তাহলে চলো আগে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িতে যাই। তারপর আমরা অন্য কোথায় যাব।’

‘আসলে কী জানো। যতবার ৩২ নম্বর বাড়ি আসি। ততবার মনটা খারাপ হয়ে যায়। তবুও বার বার যেতে ইচ্ছা করে।’

‘আচ্ছা চলো।’

এর মধ্যে একটা রিকশা পেল। ওরা দুইজন ৩২ নম্বর বাড়ি গেল। ঘুরে ঘুরে দেখল। হঠাৎ সজল বলল, ‘প্রীতি, বঙ্গবন্ধুর নামে আমি কয়েকজন পথশিশুদের খাওয়াতে চাই।’

‘পথশিশু কোথায় পাবে?’

‘চলো। রবীন্দ্র সরোবরে।’

‘ঠিক বলেছ। ওখানে অনেক শিশুকে ফুল বিক্রি করতে দেখেছি।’

‘আচ্ছা চলো।’

ওরা ৩২ নম্বর থেকে রিকশা নিয়ে রওনা দিল। কিছু দূরে যাওয়ার পর প্রীতির এক বন্ধু পাশের রিকশায় দিয়ে যাচ্ছিল। প্রীতিকে দেখা মাত্র বলল, ‘প্রীতি কোথায় যাও।’

প্রীতি ডান হাত উঁচু করে বলল, ‘রবীন্দ্র সরোবরে।’

‘আচ্ছা যাও। পরে কথা হবে।’

‘ঠিক আছে।’

প্রীতির বান্ধবীর পরিচয় জানতে চাওয়ার আগেই প্রীতি বলল, ‘জানো সজল, আমরা ওই বান্ধবী নুপূরের খুব কষ্ট।’

‘কিসের?’

‘ওর স্বামীর চরিত্র খারাপ। তাই ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয়েছে। স্বামীর সাথে থাকার চেয়ে এখন অনেকটাই ভালো আছে।’

‘এই যে ঢাকা শহরে কত মানুষ। কত জনের কত রকমের মনোবেদনা আছে। যে যার কাছে প্রকাশ করে সেই তারটা কষ্টটা জানতে পারে।’

‘তা সত্যি বলেছ।’

এর মধ্যে রিকশাচালক বললেন, ‘আফা, আমার বেডিটা স্বামীর ভাত খাওয়া বাদ দিয়ে চলে এসেছে।’

প্রীতি জানার আগ্রহ নিয়ে বলল, ‘ভাত না খাওয়ার কারণ কী চাচা?’

‘আমার জামাই গামের্ন্টেস একটা বেডিরে বিয়ে করছে। খালি ঝগড়া করে। মারামারি করে। অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে চলে আইছে।’

সজল বলল, ‘চাচা আপনার মেয়েকে যদি চাকরি দেই। তাহলে সে চাকরি করবে।’

‘হ, করতে পারব।’

‘আপনার নম্বরটা দেন।’

চাচা মোবাইল ফোন নম্বরটা মুখে বল দিলেন। সজল নম্বরটা সেভ করে রাখলেন। রিকশা রবীন্দ্র সরোবরে চলে এলো। একজন ফুল বিক্রেতা মেয়েকে প্রীতি ডেকে ওর বন্ধুদের নিয়ে আসতে বলল। কিছু সময়ের মধ্যে অনেক শিশু এসে হাজির হলো। শিশুদের গুনে খাবার নিয়ে আসতে গেল সজল। আর প্রীতি শিশুদের সাথে নানা রকম গল্প শুরু করল। একটু পর সজল খাবার নিয়ে হাজির হলো। শিশুরা মনের আনন্দে তৃপ্তি করে খেলো। দৃশ্যটা দেখে ওদের মানবিক মন আনন্দে ভরে উঠল।

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন