বিজ্ঞাপন

জাদুঘর থেকে জিয়ার নাম সরাতে ‘আন্দোলন চান’ নওফেল

May 4, 2022 | 4:52 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রয়াত সামরিক শাসক ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নামে চট্টগ্রামের ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের’ নাম পরিবর্তনের দাবিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগকে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিন বছর আগে তিনি এই প্রস্তাব মন্ত্রিসভার বৈঠকে তুলেছিলেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে সাড়া না পেয়ে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগকে মাঠে নামার অনুরোধ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে আবদুল্লাহ কনভেনশন সেন্টারে ইদ পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৯১৩ সালে চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় তৎকালীন বৃটিশ শাসকরা দৃষ্টিনন্দন ভবনটি নির্মাণ করে, যা পরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ হিসেবে রাষ্ট্রীয় অতিথিদের জন্য ব্যবহৃত হতো।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সফরে এসে সার্কিট হাউজের চার নম্বর কক্ষে উঠেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ভোরের দিকে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন। ওই বছরের ৩ জুন সার্কিট হাউজকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য সরকারি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

বিজ্ঞাপন

এরপর ১৯৯১ সালে জিয়াউর রহমান স্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে। ১৯৯৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সেই জাদুঘরের উদ্বোধন করা হয়। জাদুঘরে জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের নমুনা, ব্যক্তিগত সামগ্রী এবং কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে আনা স্বাধীনতা ঘোষণার ট্রান্সমিটারটি সংরক্ষিত আছে।

জিয়াউর রহমানকে ‘খুনি’ উল্লেখ করে ইদ পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘যার নামে এই জাদুঘর করা হয়েছে, সেই জিয়াউর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে জড়িত। খুনি জিয়ার নামে কোনো জাদুঘর থাকতে পারে না। এটার প্রতিবাদ করতে হবে। যে স্থাপনাটিকে জাদুঘর করা হয়েছে সেখানে জিয়াউর রহমানের স্মৃতি বলতে তিনি মারা গেছেন শুধু। এই স্থাপনা একটি পুরাকীর্তি। জিয়াউর রহমান সেখানে মারা গেছেন বলে এটা তার নামে হতে পারে না। বিএনপি নেতারা কখনও সেখানে যান না, বেগম খালেদা জিয়াও কখনো সেখানে যাননি।’

বিজ্ঞাপন

স্বেচ্ছাসেবক লীগকে প্রতিবাদ শুরুর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা দাবি তোলেন, গণস্বাক্ষর নেন যে- একজন খুনির নামে কোনো জাদুঘর থাকতে পারে না, এই জাদুঘরের নাম পরিবর্তন করেন। গণস্বাক্ষর নেন, সেই স্বাক্ষর আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেব। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনো কারণে সেটা করছে না। বর্তমানে যিনি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী মহোদয় আছেন, তিনি অনেক পজেটিভ। স্বেচ্ছাসেবক লীগবে বলব, আপনারা উনার কাছে গিয়ে মানুষের দাবি তুলে ধরুন, জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম পাল্টে যেন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর করা হয়।’

‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘরটির’ অবস্থান উপমন্ত্রী নওফেলের নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হয়ে উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাবার পর ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নওফেল মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের’ নাম পাল্টে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর করার প্রস্তাব করেছিলেন। এরপর ছাত্রলীগ কয়েকবার এ দাবিতে কর্মসূচিও পালন করেছে।

নওফেলের পিতা চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীও জীবিত থাকার সময় জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নামে ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডার সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও একই দাবি জানিয়েছেন জাতীয় সংসদে। একইভাবে চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধারাও বিভিন্নসময় আপত্তি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, নগরীর কালুরঘাটে স্থাপিত ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ থেকে যে ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান এবং পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন, সেই ট্রান্সমিটারটি কালুরঘাট থেকে সরিয়ে জাদুঘরে নিয়ে রাখা হয়। একই সঙ্গে স্বাধীনতার ঘোষণায় ব্যবহৃত মাইক্রোফোন, টেবিল, চেয়ার, রেডিও কনসোলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কালুরঘাট থেকে সরিয়ে জাদুঘরে রাখা হয়।

বিজ্ঞাপন

এসব সরঞ্জাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে ফিরিয়ে নিয়ে সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছেন বেতার কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

গত বছরের ২৮ অক্টোবরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ সার্কিট হাউজকে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর বানানোর বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই।

এসব আলোচনা-দাবির মধ্যেই বিএনপি কয়েক দফা জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম পরিবর্তনের ‘প্রক্রিয়ার’ প্রতিবাদে মিছিল-সমাবেশ করেছে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন