বিজ্ঞাপন

রোদ পেয়েই ঘর ছেড়েছে মানুষ, সৈকতে-পার্কে তুমুল ভিড়

May 4, 2022 | 6:48 pm

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দমকা হাওয়া, বজ্রপাতসহ বৃষ্টির পর রোদের দেখা পেয়েই ঘর ছেড়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মানুষ। গত দুই বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জন্য বিনোদনকেন্দ্রে গিয়ে ইদুল ফিতরের আনন্দে মেতে উঠতে পারেননি কেউ। এবার ইদের দিন থেকে বৃষ্টিপাত বাগড়া দিয়েছিল বিনোদনকেন্দ্রে যেতে। তবে বিরূপ আবহাওয়া শান্ত হতেই আর মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৪ এপ্রিল) দুপুর থেকেই লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, কনকর্ড ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, স্বাধীনতা পার্ক, শিশু পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্র। তুমুল ভিড় হয়েছে সমুদ্র সৈকত ও চিড়িয়াখানায়। আনন্দ উদযাপনে মুখরিত ফয়’স লেক সংলগ্ন ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ড।

ইদুল ফিতরের সকালটা ছিল প্রখর রোদ আর ভ্যাপসা গরমের। বেলা গড়াতেই দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি নামে চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের এলাকায়। এতে ভ্যাপসা গরম কেটে গেলেও মানুষ ঘরে আটকে যায়। তবে বিকেলের দিকে বৃষ্টি থেমে যায়। তখন বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমে।

বিজ্ঞাপন

ইদুল ফিতরের পরদিন বুধবার সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ, সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। থেমে থেমে বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ে। তবে দুপুর ১টার দিকে বৃষ্টি থেমে আকাশে উঁকি দেয় রোদ। এতেই ঘর ছাড়ে মানুষ। শুধু চট্টগ্রাম শহর নয়, আশপাশের উপজেলা-জেলা থেকেও গাড়িতে করে দলে দলে মানুষ আসতে থাকে পতেঙ্গা সৈকতসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে।

তবে সকালে বৃষ্টির মধ্যেও ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ডে বাঁধভাঙা উল্লাসে মাতেন তরুণ-তরুণীরা। সাউন্ডবক্সে গানের তালে তালে নাচ, হইহুল্লোড়। পানিতে দাপাদাপি, উৎসবে মাতোয়ারা সবাই। করোনার কারণে দুই বছরের অপ্রাপ্তি এবার উসুল করে নিয়েছেন নানা বয়সী, নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। অন্যদিকে ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কে বৃষ্টি থামার পর থেকে শুরু হয় ভিড়। এদের অধিকাংশই এসেছেন বাইরের জেলা থেকে। কেউ কেউ উঠেছেন ফয়’স লেকের ভেতরের রিসোর্টে। আর কেউ টিকেট কেটে পার্কে ঘুরে চলে গেছেন অন্য কোনো বিনোদনকেন্দ্রে।

বিজ্ঞাপন

কনকর্ড ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কের ডেপুটি ম্যানেজার (মার্কেটিং) বিশ্বজিৎ ঘোষ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ (বুধবার) সকাল ১০টা থেকে দর্শনার্থীরা পার্কে প্রবেশ শুরু করেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে কিছুটা সমস্যা হয়। ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ডে লোকজন যথারীতি হয়। বৃষ্টি থামার পর দুপুর ১টার পর থেকে দলে দলে লোকজন আসতে শুরু করেছেন। বিকেল পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করেছেন। আরও আসছেন। গতকাল (মঙ্গলবার) ইদের দিন বৃষ্টির মধ্যেও হাজারের বেশি দর্শনার্থী এসেছেন। সবাই যেন আনন্দ উপভোগ করে ফয়’স লেক থেকে ফিরতে পারেন, সেজন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’

প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকছে ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক। এই পার্কের পাশেই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। দুপুর থেকে সেখানে নানা বয়সী, নানা শ্রেণিপেশার মানুষের ঢল নেমেছে। ৫০ টাকায় টিকিট কেটে মানুষ দলে দলে ঢুকছেন বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীকূলের আস্তানায়। ভিড় এতটাই বেশি, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে প্রবেশের সময় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যথেষ্ঠ বেগ পেতে হচ্ছে।

ঢাকা থেকে ইদ করতে চট্টগ্রাম নগরীর কালা মিয়া বাজারে ভাইয়ের বাসায় আসেন গ্রাফিক্স ডিজাইনার রফিকুল ইসলাম। তিনি বুধবার দুপুরে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

চিড়িয়াখানা থেকে বের হয়ে রফিকুল সারাবাংলাকে বলেন, ’১৫ মিনিট লাইনে থেকে তারপর টিকিট পেয়েছি। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ঢাকার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর। ঢাকারটা আয়তনে বড়, কিন্তু চট্টগ্রামেরটা পাহাড়ঘেরা সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে। ঢাকার চিড়িয়াখানার রাস্তাগুলো ইটের, চট্টগ্রামেরটা টাইলসের। এই চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলোও সতেজ। মনে হচ্ছে, খুব যত্ন করা হয়। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এসে আমার খুব ভালো লাগছে। আমার একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে। সেখানে আমি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কথা বলব।’

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে মানুষ দুই বছর ইদের সময় চিড়িয়াখানায় আসতে পারেনি। এবার মনে হচ্ছে দুই বছরেরটা একবারে পুষিয়ে নিচ্ছেন। গতকাল (মঙ্গলবার) শুধু বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাড়ে ১২ হাজার দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করেছেন। আজ (বুধবার) সকালে বৃষ্টি থাকায় দর্শনার্থী কম ছিল। রোদ ওঠার পর দুপুর ১টা থেকে লোকজন আসতে শুরু করে। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করেছেন। বৃষ্টি না থাকলে ১৭-১৮ হাজার দর্শনার্থী আসত।’

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতও লোকে লোকারণ্য। মোটরসাইকেল চালিয়ে, প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস এমনকি মিনিবাস ভাড়া করেও দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসেছেন সাগরের সঙ্গে মিতালি গড়তে। এই বিপুল জনসমাগম সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে। সৈকতের সংলগ্ন সড়কে বসানো হয়েছে একাধিক চেকপোস্ট। বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বড় গাড়ির কারণে যেন যানজট তৈরি না হয়, সেই বিষয়টিও সামলাচ্ছে পুলিশ। আবার জনসমাগমের মধ্যে ছিনতাই, পকেট কাটা, ইভ টিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পোশাকি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা টিমও টহল দিচ্ছে। সৈকতে নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছে র‌্যাবের টিমও।

পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ (বুধবার) আমাদের হিসেবে লাখখানেক মানুষ হয়েছে পতেঙ্গা সৈকতে। দুপুর ২টার পর থেকে সমাগম বেড়েছে। ওয়াকওয়েতে এবার আমরা কোনো দোকানপাট বসতে দিইনি। সেজন্য লোকজন নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সন্দেহজনক কিশোর-তরুণ দেখলে আমরা তল্লাশি করছি। গতকাল ইদের দিনেও প্রচুর লোক সমাগম হয়েছিল। তবে আজ একেবারে জনসমুদ্র হয়ে গেছে।’

ছবি: শ্যামল নন্দী

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন