বিজ্ঞাপন

কর্মকর্তাদের এক হাত নিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব

September 18, 2022 | 5:43 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), পরিকল্পনা কমিশন এবং আইএমইডির কর্মকর্তাদের এক হাত নিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মানুষ হারাম খেলে, চুরি করলে দেশের উন্নতি হবে না। মানুষের চরিত্র ঠিক করতে হবে সবার আগে। চুক্তির শর্ত না বুঝে ইআরডির কর্মকর্তরা চুক্তিতে সই করেন। এতে পরবর্তীতে গলার ফাঁস হয়ে যায়। কিছু করার থাকে না। মামলা করলে দেখা যাবে যারা সই করেছেন তাদের জেলে ঢুকতে হবে। এদিকে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা ঠিক মতো ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) না পড়েই প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করেন। এতে পরবর্তীতে ব্যয় ও সময় বাড়াতে হয়। প্রকল্পের ব্যয় বেশি ধরা হয়। এটা এক ধরনের ডাকাতি। এগুলো বন্ধ করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সুশাসন নিশ্চিত করতে বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থপনা শীর্ষক সেমিনারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত বিভিন্ন কর্মকর্তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন তিনি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ।

খন্দকার আনোয়াারুল আরও বলেন, ‘প্রকল্প প্রস্তাবে কখনো যাতে ডিপিএম (সরাসরি ক্রয়) বা একক ক্রয় ব্যবস্থা না থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে ওটিএম বা ওপেন টেন্ডার মেথড কথটি উল্লেখ থাকতে হবে। এছাড়া মধ্য মেয়াদি বাজেট কাঠামোর নির্ধারিত সিলিংয়ের বাইরে কোনো প্রকল্পের পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির) সভাই করা উচিত নয়। সচিবরা যদি মিথ্যা প্রত্যয়নপত দেয়, তাহলে সেটিও ফেরত দেওয়া উচিত। মেট্রোলের প্রকল্পে এক কিলোমিটার করতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার মতো খরচ ধরা হয়েছে। অথচ ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করতেও এরকমই টাকা লাগবে। পরিকল্পনা কমিশন অনেক বড় প্রকল্পে কিছুই করেনি। যেমন- মেট্রোরেল, থার্ড টার্মিনাল এবং রূপপুর পারমবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কিছুই করা হয়নি। এক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প যদি ২ হাজার কোটি টাকা ধরা হয় তাহলে এটা ডাকাতি ছাড়া কিছুই নয়। কুকুরকে কেউ অকুকুর বা গরুকে কেউ অগরু বলে না। কিন্তু মানুষের যখন মানবিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যায় তখন তাকে অমানুষ বলা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রকল্পের গাড়ি দিতে হয়। এটা কেন দিতে হবে? আন অফিসিয়ালি কে কয়টা গাড়ি ব্যবহার করেন তার হিসাব দিতে বলেছি। আমরা যদি উল্টা-পাল্টা বা অপচয় করি তাহলে পরকালে ১৭ কোটি মানুষের পায়ে পড়তে হবে। সরকারি ১ টাকাও অপচয় করলে তার জবাবদিহিত করতে হবে।’

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘ঋণ আমাদের নিতে হবে। তবে তা কি কাজে লাগছে সেটি দেখতে হবে। ঋণ ব্যবস্থা ঠিক না হলে নাইজেরিয়া, শ্রীলংকার মতো অবস্থা হতে পারে। বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে কেনাকাটায় শতর্ক থাকতে হবে। প্রকল্প নেওয়ার চাপ আসবে। অনেক সময় আর্থ-সামাজিক কারণে কিছু কিছু প্রকল্প দিতেও হয়। এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। যেমন মাশরুম চাষ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৩৪ বছর ধরে চলা এরকম একটি প্রকল্পের ফল যাচাই না করেই আর একটি প্রকল্প কেন নিতে হবে। সেখানে কৃষিমন্ত্রী প্রভাবশালী বলে হয়ত শেষ পর্যন্ত দিতে হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

এ সময় পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘উন্নয়ন করতে গেলে ঋণের কোনো বিকলপ নেই। আমাদের সক্ষমতা আছে, তাই বিদেশি ঋণ নিতে হবে। তবে তা নিতে হবে বুঝে-শুনে হিসাব করে। ঋণ নিয়ে উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার করতে হবে। আমাদের নেকড়ে নেকড়ে বলে ভয় পেলে চলবে না। তবে যাচাই-বাছাই করেই ঋণ নিতে হবে। প্রকল্প প্রস্তাবের ভেতরে আমাদের ঢুকতে হবে। ভেঙে চুরে ভেতরে ঢুকে দেখতে হবে গাড়ি ঘোড়াসহ কী কী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যেকোনো প্রস্তাব আসলে আপনারা সাই ফিল করবেন না। ওমুক সচিব কি বলবেন, ওমুক মন্ত্রী কি বলবেন। এসব বাদ দিয়ে সুন্দর ভাষায় লিখে প্রকল্প ফেরত দিতে হবে।’

পরিকল্পনা মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইকোনমিক ক্যাডারগুলিয়ে ফেলা ঠিক হয়নি। পরিকল্পনা কমিশনের জন্য আলাদা বিশেষায়িত জ্ঞানের প্রয়োজন। বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেজে/এনএস

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন