বিজ্ঞাপন

উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়িছাড়া ৩৮ জনের তালিকা দিল র‍্যাব

October 10, 2022 | 3:46 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় বাড়িছাড়া ১৯ জেলার ৩৮ তরুণের তালিকা প্রকাশ করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এরমধ্যে অনেকে বিদেশে রয়েছেন বলে জানেন পরিবারের সদস্যরা। তারা মাঝে-মধ্যে বাড়িতে টাকাও পাঠান।

বিজ্ঞাপন

তবে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুই দফায় নিরুদ্দেশ হওয়া ছয় তরুণসহ মোট ১২ জনকে আটকের পর র‌্যাব দাবি করছে, অন্তত ৫৫ জন কথিত হিজরতের নামে বাড়িছাড়া হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৩৮ জন পার্বত্য চট্টগ্রাম দুর্গম এলাকায় অবস্থান করছেন। তাদের অনেককে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

বাড়িছাড়া তরুণদের অর্থ সরবরাহকারী হাবিবুল্লাহসহ মোট পাঁচজনকে রোববার (৯ অক্টোবর) রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এসব তথ্য জানতে পেরেছে র‌্যাব।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়া শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা হতে আট তরুণ নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। নিখোঁজের বিষয়ে গত ২৫ আগস্ট কুমিল্লার কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন স্বজনরা। এরপর থেকেই র‌্যাবের গোয়েন্দা দল তাদের উদ্ধারে তদন্ত শুরু করে।

তদন্তকালে র‌্যাব জানতে পারে, উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা বাড়ি ছেড়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ৮ তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২) নামে এক তরুণ রাজধানীর কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে।

নিলয় থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৬ অক্টোবর নিখোঁদের মধ্যে চার তরুণসহ মোট সাত জনকে আটক করে র‌্যাব। আটকরা উগ্রবাদী সংগঠনটির সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরাণীগঞ্জ এলাকা থেকে কুমিল্লার শাহ মো. হাবিবুল্লাহ ওরফে হাবিব (৩২) ও নেয়ামত উল্লাহ (৪৩), ঢাকার মোহাম্মদপুরের মো. হোসাইন (২২), ঢাকার সূত্রাপুরের রাকিব হাসনাত ওরফে নিলয় (২৮) এবং নোয়াখালীর সাইফুল ইসলাম ওরফে রনি ওরফে জায়দ চৌধুরীকে (১৯) আটক করে র‌্যাব। উদ্ধার করা হয় ৫টি উগ্রবাদী বই, প্রায় তিনশ লিফলেট ও পাঁচটি ব্যাগ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কোমলমতি তরুণদের সংগঠনের সদস্যরা টার্গেট করে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন নিপীড়নের বিভিন্ন ভিডিও দেখিয়ে ও বিভিন্ন অপব্যাখ্যা দেওয়ার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করতো। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ তরুণদের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান দিতো। সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে উৎসাহী করে তুলতো।

উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আটক হোসাইন এক বছর আগে, সাইফুল দেড় মাস এবং রাকিব দুই মাস আগে নিখোঁজ হয়।

জানা যায় যে, নিখোঁজ হওয়া তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের পটুয়াখালী এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে রেখে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করতো। এছাড়াও আত্মগোপনে থাকার কৌশল হিসেবে তাদের রাজমিস্ত্রী, রং মিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন পেশার কারিগরী প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।

বিজ্ঞাপন

নিখোঁজ অর্ধশতাধিক, তালিকাভুক্ত ৩৮ জন:

আটকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা ৫০ এর বেশি। তবে র‌্যাব নিখোঁজ হওয়া ৩৮ তরুণের নাম ঠিকানা ও ফোন নম্বরসহ তালিকা দিয়েছে। যারা প্রায় দেড় মাস থেকে দুই বছরের অধিক সময় ধরে নিরুদ্দেশ বা নিখোঁজ। এদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার জানেন যে, তারা চাকরির জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন এবং নিয়মিত পরিবারকে অর্থ দিতেন।

দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় স্বশস্ত্র প্রশিক্ষণ:

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, প্রাথমিকভাবে সংগঠনের আটক সদস্যদের মাধ্যমে আমরা ৩৮ জনের তথ্য পেয়েছি, যাদের নাম ও ঠিকানা পাওয়া গেছে; ক্ষেত্র বিশেষে নাম ও ঠিকানায় কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে।

তাদের অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলে। সেখানে তারা বিভিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত এ তথ্যগুলো দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন বাহিনীকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সম্মিলিত অভিযান চলমান রয়েছে।

উগ্রবাদের অর্থায়ন করছে গ্রেফতার হাবিবুল্লাহ:

আটক হাবিবুল্লাহ কুমিল্লায় কুবা মসজিদে নামাজ পড়াতেন। এছাড়াও তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন, তিনি ২০২০ সালে নেয়ামত উল্লাহর মাধ্যমে “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) সংগঠনটিতে যুক্ত হন। তিনি সংগঠনটির অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী। তার নেতৃত্বে কুমিল্লা অঞ্চলে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হতো। তিনি সংগঠনের জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করতেন ও উগ্রবাদী কার্যক্রমে অর্থ সরবরাহ করতেন।

তিনি পার্বত্য অঞ্চলের নাইক্ষ্যংছড়িতে তিনি প্রায় দুই বছর ধরে একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন। তিনি পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্র সংগ্রহ করে তার মাদ্রাসায় রাখতেন। ১৫-২০ জন সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণে প্রেরণ করেছেন বলে জানায়।

আটক নেয়ামত উল্লাহ কুমিল্লার একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি ব্যক্তির মাধ্যমে সংগঠনে যুক্ত হয়। তিনি সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রমে যুক্ত থাকার পাশাপাশি নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বেও জড়িত ছিলেন। বাড়ি ছেড়ে যাওয়া সদস্যদের তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে আশ্রয় দিতেন বলে জানায়।

আটক হোসাইন পেশায় একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান এবং রং মিস্ত্রী। তিনি স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হন। দীর্ঘ এক বছর যাবত সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।

আটক রাকিব কুরিয়ার সার্ভিসে ডেলিভারি বয়ের কাজ করতেন। তিনি আটক হোসাইনের মাধ্যমে সংগঠনে জড়িত হন। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি প্রায় দুই মাস আগে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন।

আটক সাইফুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। তিনি গত আগস্ট মাসে নোয়াখালী থেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুব্ধ হয়ে নিরুদ্দেশ হন। নোয়াখালীর এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদী এই সংগঠনে জড়ান।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, আটক হাবিবুল্লাহ বিভিন্ন নামে বেনামে মাদ্রাসা মসজিদের জন্য চাঁদা সংগ্রহ করে “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) জন্য অর্থায়ন করতেন। আমরা এখনো প্রাথমিক স্তরে কাজ করছি। সংগঠনের কে বা কারা নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম থেকে বেরিয়ে এই সংগঠনে জড়াচ্ছে।

নিখোঁজদের কেউ দেশ ছেড়েছে, তারা কীভাবেই টাকা পাঠাতেন পরিবারে? জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ৩৮ জনের কাউকে এখনো আটক করতে পারিনি। দুই দফায় পাঁচ তরুণসহ আটক ১২ জন এই তালিকার বাইরে। তাদের ৩৮ জনের কাউকে আটক করা গেলে বোঝা যাবে কেউ দেশ ত্যাগ করেছে কি না। নিখোঁজদের কেউ কেউ পরিবারে টাকা দিচ্ছেন, পরিবার জানে তারা বিদেশে। তবে তারা দেশে থেকেই অল্প কিছু টাকা পরিবারে পাঠাচ্ছেন। তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা।

কমান্ডার মঈন বলেন, এটা অবশ্যই এলার্মিং যে নিরুদ্দেশ হয়ে ঘর ছাড়া। আমরা চেষ্টা করছি জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের জনগণ কখনোই জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি। আমরাও কাজ করে যাচ্ছি।

সারাবাংলা/ইউজে/এনইউ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন