বিজ্ঞাপন

বিশ্বকাপের দল পরিচিতি: পোল্যান্ড

November 13, 2022 | 4:33 pm

মো. সাইফুল আলম তালুকদার

কাতার বিশ্বকাপের ‘গ্রুপ সি’তে আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো আর সৌদি আরবের সঙ্গে একই গ্রুপে আছে পোল্যান্ড। ফিফার র‍্যাংকিংয়ে পোল্যান্ডের অবস্থান ২৬ নম্বর। এদিক গ্রুপের বাকি দল সৌদি আরব, মেক্সিকো এবং আর্জেন্টিনা‌র র‍্যাংকিং যথাক্রমে ৫১, ১৩ এবং ৬।‌‌ ২০২২ বিশ্বকাপসহ পোল্যান্ড বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে নবমবারের মতো।

বিজ্ঞাপন

পোলিশ কোচ, চেসলাও মিচনিউইচ এবারের বিশ্বকাপে তার দলের সম্ভাবনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মজা করে বলছিলেন,‌ কাতারে বারবোরকা (মাইনার্স ডে, ৪ঠা ডিসেম্বর) এবং সেন্ট নিকোলাস ডে (৬ই ডিসেম্বর) কাটানো উপযুক্ত হবে। এটা আমাদের লক্ষ্য কারণ এর মানে হবে যে আমরা গ্রুপ থেকে বের হয়ে গেছি!

সাধারণত অতীতের ব্যর্থতা থেকে শেখার বিষয়ে অনেক আলোচনা হয় কিন্তু এবার জনসাধারণের মধ্যে সাধারণ স্লোগান হচ্ছে: ‘কাজ, কথা নয়।’ অর্থাৎ পোলিশ দল বিশ্বকাপে কোনোভাবেই হালকা মেজাজে আসছে না। তাদের কিংবদন্তি খেলোয়াড় রবার্ট লেভান্ডোস্কিকে আসন্ন বিদায় উপলক্ষে নিশ্চয়ই বড় কিছু উপহার দিয়ে বিদায় দিতে চাইবে।

বিগত বিশ্বকাপে পোল্যান্ডের পারফর্মেন্স—

বিজ্ঞাপন

১৯৭৪ এবং ১৯৮২ বিশ্বকাপে তারা ৩য় হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে ২০০২, ২০০৬ এবং ২০১৮ বিশ্বকাপের ১ম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছিল। এর মাঝে ইউরো-২০১৬তে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছিল।‌‌‌‌

বিগত ৮টি বিশ্বকাপে পোল্যান্ড ৩৪টি ম্যাচ খেলেছে। যেখানে ১৬টি ম্যাচে জয়লাভ করেছে, ৫টিতে ড্র এবং ১৩টিতে হেরেছে। গোল করেছে ৪৬টি এবং গোল হজম করেছে ৪৫টি।

কোচ চেসলাও মিচনিউচ—

বিজ্ঞাপন

পোলিশ এফএ গত বছর ক্রিসমাস শক দিয়েছিল যখন তাদের আগের কোচ পাওলো সুসা ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি ফ্ল্যামেঙ্গোতে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। নতুন কোচের জন্য দীর্ঘ অনুসন্ধানের পরে, ফ্যাবিও ক্যানাভারো এবং আন্দ্রে শেভচেঙ্কোদের বাদ দিয়ে চেসলাও মিচনিউইচকে নির্বাচিত করা হয়েছিল।

এই সিদ্ধান্তে সবাই অবাক হয়েছিল কারণ চেসলাও তখন তার ক্লাব দল লেগিয়া ওয়ারশতে অস্বস্তিদায়ক একটি মৌসুম কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু চেসলাও ঠিকই তার যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন পোল্যান্ডকে সুইডেনের বিপক্ষে ২-০ গোলে প্লে অফ ম্যাচ জয় লাভে সহায়তা করে বিশ্বকাপের মূল পর্বের টিকিট নিশ্চিত করার মাধ্যমে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল প্লে অফ ম্যাচের এই জয় দিয়ে পোলিশরা সুইডিশদের বিরুদ্ধে ৪৫ বছরের জয় খরা‌ দূর করেছিল। সেই সাথে তার আমলেই ২০১০ সালের পরে পোল্যান্ড বেলজিয়ামের কাছে ন্যাশনস লিগে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারে।

দর্শক, খেলোয়াড় সবাই চাইছেন দলের সেরা খেলোয়াড় রবার্ট লেভান্ডোস্কি‌ এবং তাদের কোচকে ভালো কিছু পুরস্কার দেবার। কোচের মেয়াদ নিঃসন্দেহে বাড়ানো হবে যদি তিনি দলকে দ্বিতীয় রাউন্ডে নিয়ে যেতে পারেন। লেভান্ডোফস্কি‌ নতুন ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে ১৭টি ম্যাচে ইতিমধ্যে ১৮টি গোল করেছেন, কিন্তু নতুন এই কোচের অধীনে জাতীয় দলের হয়ে ৬টি ম্যাচে এ পর্যন্ত মাত্র ২টি গোল করেছেন। তাই কোচকে খুঁজে বের করতে হবে কি করে কাতার বিশ্বকাপে কিভাবে জায়গা করে নিল তার সেরা খেলোয়াড়ের কাছ থেকে আরও বেশি গোল আদায় করে নিতে পারেন।

পোল্যান্ড ২০২২ বিশ্বকাপে যেভাবে জায়গা করে নিল—

বিজ্ঞাপন

ইউরোপীয় অঞ্চলে ইংল্যান্ডের ৬ পয়েন্ট পিছনে থেকে গ্রুপ ‘আই’তে তারা দ্বিতীয় স্থান লাভ করে।‌‌ পরবর্তীতে প্লে অফে সুইডেনকে হারায় ২-০ গোলে। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে তারা কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছে। কারণ গ্রুপ ‘আই’তে ইংল্যান্ড ছাড়া আর কেউ পোল্যান্ডের চেয়ে শক্তিশালী ছিল না। আবার সুইডেনের বিপক্ষে জয়ের পর রাশিয়ার বিপক্ষেও তাদের দ্বিতীয় প্লে অফ খেলতে হয়নি রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায়।

বিশ্বকাপ প্রস্তুতি যেমন হয়েছে—

শীতকালে বিশ্বকাপ হওয়ার কারণে ইউরোপীয় দেশগুলোকে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার খুব একটা প্রয়োজন পড়েনি। কারণ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত নেশনস লিগে প্রায় প্রতিটি দলকেই ৬টি করে ম্যাচ খেলতে হয়েছে।

পোল্যান্ডও তার ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু দুর্ভাগ্য এখানে তাদের খেলতে হয়েছে ওয়েলস, নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়ামের মতো দেশগুলোর সাথে। ৬টি ম্যাচে কেবলমাত্র ২টি ম্যাচে জয় পেয়েছে ওয়েলসের সাথে।‌‌ ১টি ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের সাথে ড্র করতে পেরেছিল নেদারল্যান্ডসের মাটিতে। বাকি ৩টি ম্যাচে পরাজিত হয়েছে, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১-৬ গোলে পরাজয়ের কালিমা জুটেছিল বেলজিয়ামের সঙ্গে। ৬টি ম্যাচে তারা গোল করতে পেরেছিল মাত্র ৫টি আর হজম করেছিল ১২টি। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে তারা একটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে চিলির সঙ্গে ১৬ই নভেম্বর।

পোল্যান্ডের বিশ্বকাপ সময়সূচি—

প্রায় সম শক্তির মেক্সিকোর সঙ্গে ২২শে নভেম্বর পোল্যান্ড খেলবে তাদের গ্রুপের প্রথম ম্যাচটি। এরপর ২৬শে নভেম্বর খেলবে দুর্বল সৌদি আরবের বিরুদ্ধে। শক্তিশালী আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে হবে শেষ ম্যাচটি ১ ডিসেম্বর।

দলের ফর্মেশন কেমন হতে পারে—

তারা ৩-৫-২ পদ্ধতিতে খেলতে পারে। ৩ জন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের সাথে থাকবে ২ জন উইং-ব্যাক। এটি একটি হাইব্রিড ফর্মেশন হবে। পোল্যান্ড আক্রমণ করলে ৪ জনের রক্ষণভাগ দলকে পাহারা দেবেন আর বিপক্ষের প্রতি আক্রমণের সময় রক্ষণ কাজের সাহায্যে করবেন ৫ জন ডিফেন্ডার। দলের কোচ চেসলাও মিচনিউইচক অনূর্ধ্ব-২১ দলে তিন বছর কাজ করার সময় সময় এই পদ্ধতিটি ভালভাবে ব্যবহার করেছিলেন।

মূল তারকা—

দলের সেরা খেলোয়াড় রবার্ট লেভানডফস্কি বায়ার্ন মিউনিখে অসাধারণ ৮টি মৌসুম কাটানোর পর এ বছর যোগ দিয়েছেন বার্সেলোনায়। জার্মানি থেকে স্পেনে আসার পরেও তিনি কিন্তু তার গোল তৃষ্ণা মিটিয়ে যাচ্ছেন। ক্যাম্প ন্যু’তে তার নতুন দলে যোগদান করার অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘আমি এমন একটি শিশুর মতো অনুভব করছি যে নতুন খেলনা ভর্তি একটি দোকানে প্রবেশ করেছি।’ তার একটা পরিবর্তন দরকার ছিল কিন্তু একটা ব্যাপার স্থির আছে, তার গোল করার ক্ষমতা। আর সেই ধারাবাহিকতা নিশ্চয়ই এই বিশ্বকাপে টেনে নিয়ে যেতে চাইবেন। বুন্দেস লিগায়‌ বায়ার্ন মিউনিখ ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে ৩৮৪টি ম্যাচে ৩১২টি গোল করলেও তিনি কিন্তু এখনো পর্যন্ত বিশ্বকাপে গোল করতে পারেননি।

যাদের দিকে চোখ রাখতে হবে—

ইতালির নেপোলিতে খেলা মিডফিল্ডার, পিওতর জিলিনস্কি এ পর্যন্ত ইতালিয়ান লিগে তিনটি ক্লাবের হয়ে ৩১২টি ম্যাচ খেলেছেন। ২৮ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়ের মূল কাজ হবে মিডফিল্ড থেকে বলের যোগান দেওয়া। ২৮ বছরের স্ট্রাইকার আরকাদিউস মিলিক খেলছেন ইতালির জুভেন্টাসে। এখন পর্যন্ত শীর্ষ ক্লাবগুলোতে ২২০টি ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৯১টি। আয়াক্সের হয়ে ৯৩টি খেলায় ৩৮টি গোল করেছিলেন।

তরুণ তারকা—

ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ২৫ বছর বয়সের ম্যাটি ক্যাশ রাইট ব্যাক এবং রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলতে পারেন। তিনি বর্তমানে অ্যাস্টন ভিলাতে খেলছেন এবং ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৭৮টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন তাদের হয়ে। নিরীহ সুদর্শন কিন্তু শক্তিশালী, দ্রুত এবং দক্ষ, ক্যারল সুইডারস্কি রবার্ট লেভান্ডোফস্কির জন্য একটি গোলস্কোরিং স্ট্রাইক পার্টনার হিসাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবেন। তিনি ৯টি বাছাইপর্বের খেলায় ৫টি গোল করেন এবং তারপর নেশনস লিগে ওয়েলসের বিরুদ্ধে জয়ী হতেও সাহায্য করেন। ২৫ বছরের এই স্ট্রাইকার এ বছরের জানুয়ারিতে মেজর লিগ সকারের শার্লট এফসি যোগদান করলেও বিশ্বকাপে ভালো করলে শীঘ্রই আবার ইউরোপে ফিরে আসতে পারেন৷

পোল্যান্ডের‌ বিশ্বকাপের ২৬ সদস্যদের দল—

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, পোল্যান্ড পরপর চারটি বড় টুর্নামেন্টের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে, তবুও তারা গোল্ডেন জেনারেশন ট্যাগ ছাড়ায় রয়ে গেছে।

এই দলে ২ জন গোলরক্ষক ছাড়াও আরও ৫ জন খেলোয়াড় রয়েছে যাদের বয়স ৩০ পেরিয়ে গেছে এবং আগামী বিশ্বকাপে দেখার সম্ভাবনা কম, যাদের মধ্যে ৩৪ বছর ৩৪ বছর বয়সী লেভান্ডোফস্কি অন্যতম। ‌

গোলরক্ষক: ওইচেক সেজেসনি (জুভেন্টাস), বার্টলোমিয় ড্রাগোস্কি (স্পেজিয়া), লুকাস স্কোরুপস্কি (বোলোগনা)।

ডিফেন্ডার: জান বেডনারেক (অ্যাস্টন ভিলা), কামিল গ্লিক (বেনেভেন্তো), রবার্ট গামনি (এফসি অগসবার্গ), আর্তুর জেডরজেজিক (লেজিয়া ওয়ারশ), জ্যাকুব কিভিওর (স্পেজিয়া), মাতেউস উইটেস্কা (ক্লারমন্ট), বার্তোস বেরেসজিনস্কি (সাম্পডোরিয়া), ম্যাটি ক্যাশ (অ্যাস্টন ভিলা), নিকোলা জালেউস্কি (এএস রোমা)।

মিডফিল্ডার: ক্রিস্টিয়ান বিয়েলিক (বার্মিংহাম সিটি), প্রজেমিস্লাভ ফ্রাঙ্কোস্কি (লেন্স), কামিল গ্রোসিকি (পোগন সেজেসিন), গ্রজেগর্জ ক্রাইসোয়াক (আল-শাবাব), জ্যাকুব কামিনস্কি (ভিএফএল ওল্ফসবার্গ), মিশাল স্কোরাস (লেচ পজেনান), সেবাস্তিয়ান সিজাইমানস্কি (ফেইনুর্ড), পিওতর জিলিনস্কি (নেপোলি), সিজাইমন জুরকোস্কি (ফিওরেন্টিনা), ডামিয়ান সিজাইমানস্কি (এইকে এথেন্স)।

ফরোয়ার্ড: রবার্ট লেভানডভস্কি (এফসি বার্সেলোনা), আরকাদিউস মিলিক (জুভেন্টাস), ক্রজিসটফ পিয়াটেক (সালারনিটানা), ক্যারল সুইডারস্কি (শার্লট এফসি)।

বর্তমান বিশ্বকাপে পোল্যান্ড দলের আমার সেরা একাদশ—

গোলরক্ষক: ওইচেক সেজেসনি

ডিফেন্ডার: বার্তোস বেরেসজিনস্কি, জান বেডনারেক,‌‌ জ্যাকুব কিভিওর

উইংব্যাক: ম্যাটি ক্যাশ, নিকোলা জালেউস্কি

ডিফেন্সি মিডফিল্ডার:‌‌ ক্রিস্টিয়ান বিয়েলিক

মিডফিল্ডার: সেবাস্তিয়ান সিজাইমানস্কি, পিওতর জিলিনস্কি

ফরোয়ার্ড: রবার্ট লেভানডভস্কি এবং আরকাদিউস মিলিক।

দলের বর্তমান অবস্থা—

গোলরক্ষক সেজেসনি অটোমেটিক চয়েজ, কিন্তু বর্তমানে কিছুটা ইনজুরির সমস্যায় ভুগছেন ফলে ক্লাব দল জুভেন্টাসেও তার ম্যাচ সংখ্যা কমে গিয়েছে। তবে দলের বাকি দুইজন গোলরক্ষক ও ভালো, সেজেসনির অনুপস্থিতিতে গোল সামলাতে পারবেন যদিও তাদের জাতীয় দলে অভিজ্ঞতা খুব কম‌।

পোল্যান্ডের শেষ বিশ্বকাপে বেডনারেক গোল করেছিলেন এবং অভিজ্ঞ কামিল গ্লিকের সাথে ডিফেন্সের শেষ লাইন হিসাবে একটি দুর্দান্ত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার আশা করছে তাদের দল। ‌‌

ক্রাইসোয়াক মিডফিল্ড থেকে রক্ষণভাগকে সুরক্ষা দেবেন। আর আক্রমনাত্মক মিড-ফিল্ডার জিলিনস্কি নিচ থেকে খেলা তৈরি করবেন এবং লেভান্ডোফস্কিকে গোলের যোগান দেবেন। জিলিয়ানস্কি বিগত কয়েক মৌসুম যাবৎ নেপোলির শীর্ষস্থানীয় পারফর্মারদের একজন।

দলের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা—

বরাবরের মতো অনেক কিছু নির্ভর করে রবার্ট লেভান্ডোফস্কির ওপর। যিনি যেকোনো ডিফেন্সের বিরুদ্ধে গোল করতে পারেন। তাদের দলের মূল শক্তি হচ্ছে স্ট্রাইকাররা। লেভান্ডফস্কিকে যোগ্য সঙ্গ দিতে আরকাদিউস মিলিক, ক্রজিসটফ পিয়াটেক এবং করোল সুইডারস্কিরা পুরো দমে তৈরি আছেন।

আশার কথা হচ্ছে ফর্মে থাকা কিংবদন্তি স্ট্রাইকার লেভাকে সহায়তা করার জন্য মিডফিল্ডে ফেইনুর্ডের সেবাস্তিয়ান সিজাইমানস্কি এবং নেপোলির পিওতর জিলিনস্কিরা আছেন। কে জানে এবার যদি তারা জান প্রাণ দিয়ে খেলে তাহলে, নকআউট পর্বের জন্য যোগ্যতা অর্জন করার ইচ্ছা পূরণ হতে পারে।

তবে পোলিশদের জন্য সর্বশেষ তিন বিশ্বকাপের ইতিহাস খুব একটা অনুপ্রেরণাদায়ী নয়। শেষ তিনটি বিশ্বকাপেই তারা প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছে যদিও তারা প্রতিটি টুর্নামেন্টেই ন্যূনতম একটি করে ম্যাচ জিতেছিল।

আর তাদের ডিফেন্সও খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। গত বিশ্বকাপে ডিফেন্সে নিয়মিত খেলেছেন বেডনারেক এবং‌ গ্লিক। কিন্তু এবার বেডনারেক তার ক্লাব দল অ্যাস্টন ভিলার সাইড বেঞ্চে চলে গিয়েছেন আর গ্লিক খেলছেন ইতালির দ্বিতীয় বিভাগে। বাকি যেসব প্রতিশ্রুতি সেই ডিফেন্ডার আছেন তাদের অভিজ্ঞতা জাতীয় দলে খুবই কম। ‌

ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডেও এই মুহূর্তে দুর্বলতা আছে কারণ তাদের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়‌ ক্রাইসোয়াক ফর্ম হারিয়ে চলে গেছেন কাতারি লিগে।‌‌ অন্যদিকে তার বদলি হিসেবে যিনি খেলবেন,‌‌ বিয়েলিক, তিনি খেলছেন ইংল্যান্ডের প্রথম বিভাগে (প্রিমিয়ার লিগে নয়) এবং জাতীয় দল হয়ে ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ৫টি। ‌

বিশ্বকাপে তারা কতদূর যেতে পারে—

গ্রুপ ‘সি’তে পোল্যান্ডের মূল লড়াই হবে মেক্সিকোর সাথে। র‍্যাংকিংয়ে মেক্সিকোর চেয়ে ১৩ ধাপ পিছিয়ে থাকলেও, একটি অনলাইন জরিপে প্রায় ২৯ হাজার দর্শকদের মধ্যে ৪৪.১৭% বলেছেন এই দুই দলের লড়াইয়ে পোল্যান্ড জিতবে। ৩৬.৩৮% বলেছেন মেক্সিকো জিতবে আর ১৯.৪৯% বলেছেন ড্র হবে।

আমারও মনে হয় মেক্সিকোর সঙ্গে লড়াইয়ে পোল্যান্ডের জেতার সম্ভাবনা বেশি। বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব শেষ হবার পর মেক্সিকো প্রায় ১০টি প্রীতি ম্যাচ খেললেও তার একটি ম্যাচও ইউরোপীয় কোন প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে খেলেনি। আর ঐ সমস্ত ম্যাচে কোন উল্লেখযোগ্য শক্তিশালী দলের সঙ্গেও জয় পায়নি।

তাই গ্রুপ সি থেকে পোল্যান্ড যদি দ্বিতীয় রাউন্ডে উত্তীর্ণ হতেও পারে, তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ হয়ে যেতে পারে দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্স বা ডেনমার্কের মত দলের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

আমার দেখা সেরা-১৪ খেলোয়াড়—

এবার দেখা যাক, আমার গঠিত তাদের সেরা একাদশের খেলোয়াড়রা কে কেমন ছিল? এই দলের ৫জন খেলোয়াড় এখনো বর্তমান জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন।

গোল রক্ষক: ওইচেক সেজেসনি (ম্যাচ: ৬৬; বয়স: ৩২ বছর এবং বর্তমান জাতীয় দলে খেলছেন। তিনি এ পর্যন্ত ক্লাব পর্যায়ে ৩৬৯টি ম্যাচ খেলেছেন, যার মধ্যে ১৩২টি খেলেছেন আর্সেনালের হয়ে এবং বর্তমান দল জুভেন্টাসে‌ খেলেছেন ১৪০টি ম্যাচ)

রক্ষণভাগ:

রাইটব্যাক: লুকাস পিশজেক (ম্যাচ: ৬৬, গোল: ৩; জার্মান বুন্দেসলিগায় খেলা ৩৩২টি ম্যাচের ২৬৪টি ম্যাচ খেলেছেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে)

সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: কামিল গ্লিক‌ (ম্যাচ: ৯৮ & গোল: ৬; ৩৪ বছর বয়সে এখনো জাতীয় দলে খেলছেন। এখন পর্যন্ত ইতালিয়ান এবং ফ্রেঞ্চ লীগে ৩৬৪টি ক্লাব ম্যাচ খেলেছেন, যার মধ্যে ১২৮টি খেলেছেন এ.এস. মোনাকোর হয়ে)

জ্যাসেক বাক (ম্যাচ: ৯৬, গোল: ৩; ক্লাবে ৩৬৩টি ম্যাচ খেলেছেন পোল্যান্ড, ফ্রান্স এবং অস্ট্রিয়ান লীগে – ফ্রেঞ্চ লীগে ১১৪টি ম্যাচ খেলেছেন অলিম্পিক লিঁও এবং ৮৫টি খেলেছেন আর.সি. লেন্সের হয়ে)।

লেফটব্যাক: মিকাল জিওলাকাও (ম্যাচ: ১০২, গোল: ৩; ৪৫৯টি ক্লাব ম্যাচের ৯৮টি খেলেছেন বেলজিয়ামের আন্ডারলেখ্ট ক্লাবে)

মধ্যমাঠ:

ডিফেন্সিভ মিড: গ্রজেগর্জ ক্রাইসোয়াক (ম্যাচ:‌ ৯৩, গোল: ৫; বয়স: ৩২ বছর। বর্তমান জাতীয় দলের সদস্য। এখন পর্যন্ত ক্লাবে ৩৫৪টি ম্যাচ খেলেছেন – সর্বোচ্চ ৮০টি ম্যাচ খেলেছেন রাশিয়ার লোকোমোটিভ মস্কোর হয়ে)

অ্যাটাকিংমিড: জ্যাকুব ব্লাসজিকোভস্কি (ম্যাচ:‌ ১২৮, গোল: ২১; জার্মান এবং ইতালিয়ান লীগের ৩৩৯টি ম্যাচ খেলেছেন তার মধ্যে ১৯৭টি ম্যাচ খেলেছেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে)।

পিওতর জিলিনস্কি (ম্যাচ:‌ ৭৪, গোল: ৯; বয়স মাত্র ২৮ বছর এবং বর্তমান জাতীয় দলে খেলছেন। বাম পায়ের এই খেলোয়াড়টি ইতালিয়ান সিরিয়ে-এতে এখন পর্যন্ত ৩০৬টি ম্যাচ খেলেছেন যার মধ্যে ২২৪টি খেলেছেন নেপোলির হয়ে এবং গোল করেছেন‌ ৩২টি)।

জ্যাসেক ক্রিসনোওয়েক (ম্যাচ:‌ ৯৬, গোল: ১৫; জার্মান বুন্দেসলিগায় ২৭৪ টি ম্যাচ খেলেছেন বেয়ার লেভারকুসেন এবং ওল্ফসবার্গ ক্লাবের হয়ে)।

স্ট্রাইকার:- রবার্ট লেভানডভস্কি (ম্যাচ:‌ ১৩৪, গোল: ৭৬; ৩৪ বছর বয়সে এখনো জাতীয় দলে খেলছেন। এখন পর্যন্ত টপ ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোতে ৪৪৯টি ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৩৫৩টি।‌ বর্তমান বার্সেলোনা দলে যোগদান করার আগে খেলেছেন জার্মানির বরুসিয়া ডর্টমুন্ড এবং বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে)।

আরকাদিউস মিলিক (ম্যাচ:‌ ৬৩, গোল: ১৬; তিনিও বর্তমান জাতীয় দলে আছেন এবং বয়স মাত্র ২৮ বছর। বর্তমানে ইতালির জুভেন্টাসে খেলছেন। এখন পর্যন্ত ক্লাব পর্যায়ে ২১৪টি ম্যাচ খেলেছেন যার মধ্যে আয়াক্সের হয়ে ৯৩টি খেলায় ৩৮টি গোল করেছিলেন)।

অতিরিক্ত: ডিফেন্ডার- টমাস ওয়াল্ডোক (ম্যাচ:‌ ৭৪, গোল: ২; তিনি মাত্র‌ ৩১ বছর বয়সে জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছিলেন। ‌জার্মান ক্লাব বোচাম এবং সালকে-০৪ ক্লাবে খেলেছিলেন ২৭৪টি ম্যাচ)।

উইঙ্গার- ইউজেবিউস স্মোলারেক (ম্যাচ:‌ ৪৭, গোল: ১৯; জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছিলেন ২৯ বছর বয়সে। তিনি ডাচ, জার্মান, স্প্যানিশ এবং ইংলিশ লীগে ১৯৫টি ম্যাচ খেলেছিলেন, যার মধ্যে ৮১টি খেলেছিলেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে)

অ্যাটাকিং মিড- ম্যাসিয়েজ জোরাউস্কি (ম্যাচ:‌ ৪৭২, গোল: ১৭; তিনি ক্লাব পর্যায় ৪০৫টি ম্যাচ খেলেছেন, তার মধ্যে ২০৮টি খেলেছেন উইসলা ক্রাকো এবং সেলটিকের হয়ে – আর এ ২টি ক্লাবের হয়ে গোল করেছেন ১২৩টি)।

সারাবাংলা/এসআইটি/এসএস

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন