বিজ্ঞাপন

নাম-ধর্ম পাল্টে ‘ধর্ষকের’ বাঁচার চেষ্টা, পুলিশের কৌশলে ধরা

January 26, 2023 | 6:42 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নাম এবং ধর্মীয় পরিচয় পাল্টে কিশোরীকে ধর্ষণের শাস্তি এড়ানোর চেষ্টায় থাকা এক যুবককে গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানা পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ছাতিপট্টি এলাকায় একটি স্বর্ণের দোকান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গ্রেফতার সুপন চন্দ্র দেবনাথ (২৫) কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট থানার হেসাখাল গ্রামের রাধা কৃষ্ণ দেবনাথের ছেলে।

খুলশী থানা পুলিশ জানায়, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুযায়ী গ্রেফতার যুবকের নাম সুপন হলেও ধর্ষণের মামলা ও বিচারের নথিপত্রে এবং সাজা পরোয়ানায় তার নাম ‘মো. সবুজ (২২)’ লেখা আছে। এতে তার বাবার নাম মো.আক্কাস, মায়ের নাম শেফালী বেগম উল্লেখ আছে। বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলায় এবং বর্তমান ঠিকানা চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার লালখান বাজার টাংকির পাহাড় এলাকার সোহেলের ভাড়াঘর উল্লেখ আছে।

বিজ্ঞাপন

২০২০ সালের ২৯ জুন নগরীর লালখান বাজারে ১৪ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে ‘মো. সবুজের’ বিরুদ্ধে খুলশী থানায় মামলা দায়ের করেন আক্রান্তের মা। ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন। আসামি পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতারের জন্য খুলশী থানায় সাজা পরোয়ানা জারি করেন।

খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে জানান, ধর্ষণের অভিযোগ পেয়েই আসামি সবুজকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সবুজকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আসামি ছয় মাস জেলে থাকার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে পালিয়ে যান।

ওসি বলেন, ‘সাজা পরোয়ানায় আসামির নাম লেখা আছে সবুজ এবং ঠিকানা ফেনী ও লালখান বাজারে। আমরা সেই নাম-ঠিকানা অনুযায়ী কয়েকবার অভিযান চালাই। তবে বর্ণিত ঠিকানায় এই নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। তখন আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামির অবস্থান শনাক্ত করি। মামলার বাদীকে নিয়ে কুমিল্লায় সেই অবস্থানে গিয়ে অভিযান করে তাকে গ্রেফতার করি। বাদী নিজে তাকে শনাক্ত করেন।’

বিজ্ঞাপন

কয়েকবার অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারে ব্যর্থ হওয়ার পর পুলিশ তদন্তে জানতে পারে সুপন চন্দ্র দেবনাথের নাম-ঠিকানা ও ধর্মীয় পরিচয় পাল্টে ‘মো. সবুজ’ হিসেবে পরিচিত হওয়ার কথা। এমনকি কারাগার থেকে বের হওয়ার পরও সে আরেকবার নাম পাল্টায় বলে জানান ওসি।

তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সারাবাংলাকে ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী সুপন চন্দ্র দেবনাথের বাবার নাম রাধাকৃষ্ণ দেবনাথ ও মায়ের নাম কানন বালা দেবনাথ। বাড়ি কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল গ্রামে।

তিনি বলেন, ‘সুপন পেশায় একজন স্বর্ণের গহনা তৈরির কারিগর। নোয়াখালী শহরে একটি কারখানায় কাজ করতেন। বছরখানেক আগে মা-বাবার ওপর অভিমান করে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসে। লালখান বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকলেও সেভাবে তার নাম-পরিচয় কেউ জানতো না। ধর্ষণের ঘটনায় যখন তাকে গ্রেফতার করা হয়, সে ভুয়া নাম-ঠিকানা ও ধর্মীয় পরিচয় পুলিশকে দিয়েছিল। সে হিসেবেই মামলা ও অভিযোগপত্র দাখিল হয় এবং রায়ের পর সাজা পরোয়ানা জারি হয়।’

কারাগার থেকে বেরিয়ে সুপন তার নাম আবারও পাল্টে ‘নারায়ণ’ পরিচয় দিয়ে কুমিল্লা শহরের ছাতিপট্টি এলাকায় জনৈক ‘সাধন বাবুর জুয়েলারি’ দোকানে কাজ নিয়েছিল বলে ওসি জানান।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, গ্রেফতার সুপনকে তার নাম-ঠিকানা ও ধর্মীয় পরিচয় পাল্টানোর বিষয়ে পুলিশ প্রতিবেদনসহ বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে সাজামূলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন