বিজ্ঞাপন

স্বজনরাই বাধ্য করে আত্মহত্যা করতে

February 17, 2023 | 5:39 pm

আজহার মাহমুদ

আত্মহত্যা, যা বর্তমানে খুবই সহজ একটি বিষয়। সহজ করে বলতে গেলে নিজের জীবনকে নিজে শেষ করে দেওয়াকেই আত্মহত্যা বলে। এই আত্মহত্য নিয়ে নানা ব্যাখ্যা আমাদের সমাজে আছে। কিন্তু আত্মহত্যা কখনও আপনার লজ্জা ঢাকতে পারবে না। আপনি যদি মনে করেন আপনি আত্মহত্যা করে আপনার সব লজ্জা-কলঙ্ক থেকে রেহাই পাবেন সেটা ভুল। আপনার আত্মহত্যার মাধ্যমে আপনি নিজেকেই নিজে হারিয়ে দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সত্যি বলতে আমরা জীবনের ছোট ছোট বিষয়গুলোর জন্য বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। আমি আত্মহত্যার কথা যখন বলছি তখন এর মূল কারণটাও বলি। একজন মানুষের কাছে আত্মহত্যার প্রবণতা তখনই আসে যখন তার মনে হয়, তার কাছে আর কোনো পথ নেই। কিন্তু এটাই আমাদের সবচে বড় ভুল। আমরা হয়তো জানিনা, কোনো সমস্যার স্থায়ী সমাধান আত্মহত্যা নয়। আমরা যখন বিষন্ন বোধ করি তখন বর্তমান মুহূর্তের খুব সংকীর্ণ প্রেক্ষাপটে আমরা জীবনটাকে দেখি। এক সপ্তাহ বা এক মাস পর হয়ত সবকিছু সম্পূর্ণ অন্যরকম দেখাবে। যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয়, আপনি একটা জরিপ চালান। দেখবেন যারা একসময় আত্মহত্যার কথা ভেবেছিল তাদের মধ্যে বেশির ভাগ আজ বেঁচে আছে বলে খুশি। তারা বলেছেন, তারা জীবন শেষ করে দিতে চায়নি -শুধু যন্ত্রণাটা দূর করতে চেয়েছিলাম।

আমরা যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দেখি সেটা হচ্ছে পরীক্ষায় ফেল করে আত্মহত্যা করা। প্রতিবছরই কোনো না কোনো পরীক্ষায় এরকম অনেক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। কেউ জিপিএ ৫ পায়নি তাই, আবার কেউ ফেল করেছে তাই। আর এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী আমাদের স্বজনরা। আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মা, প্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধব থেকে শুরু করে কাছের মানুষগুলোই যখন এসব বিষয়ে নেতিবাচকতা ছড়ায়, আত্মহত্যার জন্য প্ররোচনা দেয় তখন একজন তরুণ-তরুণী এই ধরনের খারাপ সিদ্বান্ত নিতে বাধ্য হয়। বাবা-মায়ের অতিরিক্ত বকাবকি করার কারণে অনেক সন্তান এই পথ বেছে নিয়েছে, যা ইতোপূর্বে আমরা সংবাদ মাধ্যমে পড়েছি।

অথচ বাবা-মা’রাই পারে সন্তানকে এমন সময় সাহস দিতে। কিন্তু প্রতিবেশীদের সামনে লজ্জিত হওয়ার ক্ষোভটা তারা নিজের সন্তানের উপর প্রয়োগ করে। আত্মীয়-স্বজনরা যখন টিপ্পনী কাটে তখন অনেকেরই মনে হবে যে এভাবে বেঁচে থাকার চাইতে মরে যাওয়া ভালো। কারণ ওই সময়টুকু সহ্য করার ক্ষমতা অনেক ছেলে-মেয়েদেরই নাই। বিশেষ করে স্বজনদের কটু কথা এবং টিপ্পনী খাওয়ার মতো নোংরা বিষয়গুলো অনেকেই সহ্য করতে পাওে না।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু এটাই অনেক সময় একটা ছোট বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। কারণ আমরা সাধারণ এই ভুলগুলো করি এসএসসি এবং এইচএসসির রেজাল্টে। অথচ আমরা একসময় এই অধ্যায় শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবো, নিজেদের প্রতিভা বিকশিত করবো। কোনো একটা ক্ষেত্রে সফলও হবো। একসময় মানুষের কাছে জনপ্রিয়ও হয়ে যাবো। অথচ তার আগেই এমন ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আত্মহত্যা করে ফেলে অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ। আমরা যদি একটু নিজস্ব চিন্তা-ভাবনাকে কাজে লাগাই তাহলেও এই ভাবনাটা কারও আসবে না।

সত্যি বলতে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকলে এমনটা কেউ করবে না। আমরাতো নিজের সাথেই নিজে কথা বলি না। নিজেও কখনও নিজের জীবনকে শেষ করে দিতে বলে না। ভেতর থেকে একটা না না শব্দ ভেসে আসে। এখনকার ছেলে-মেয়েরা মুখস্থবিদ্যার মতো আত্মহত্যাকে সমাধানের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে। তারা জানেও না আজকের বিখ্যাত সকল ব্যক্তিরাই তাদের জীবনে সবচে বেশিবার হেরে গিয়েছেন। হেরেছেন জীবনের সাথে, হেরেছেন সফলতার সাথেও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অধরা জয়টা ধরেছেন। কারণ তাদের নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস ছিলো। লড়াই করে গিয়েছেন প্রতিনিয়ত।

আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথাই বলি। তিনি দু’বার বিএ ও এমএ ডিগ্রি পরীক্ষায় ফেল করে তৃতীয় বার পরীক্ষা দিয়ে ‘থার্ড ডিভিশনে পাস করেন। আমরা যদি চীনের ব্যবসায়ী জ্যাক মার জীবনী দেখি তাহলে দেখবেন তিনি তার জীবনে ১৭ বার ফেল করেছেন। অথচ আজ তিনি একজন সফল ধনী ব্যবসায়ী। যদি তিনি সফল হতে পারেন তবে আপনি আমি কেন পারবো না? প্রশ্নটা নিয়ে আশা করি ভাববেন।

বিজ্ঞাপন

আমি জানি না অন্যান্য ধর্মে কি আছে না আছে, তবে ইসলাম ধর্মে পরিষ্কারভাবে বলা আছে আত্মহত্যা করা মহা পাপ। আর জেনে শুনে পাপ কেউ করে না। হ্যাঁ, আপনি অপমানিত, লজ্জিত। আজ আপনি সবার কাছে ছোট হয়েছেন। কিন্তু সময় বলে একটা কথা রয়েছে। সেই সময়কে আপনি একটু সময় দিন। আর নিজেকেও একটু সময় দিন। তারপর সেই সফলতার পেছনে ছুটেন। যার জন্য আপনি সেদিন লজ্জিত, অপমানিত হয়েছিলেন। আমি মনে করি মানুষ পারে না এমন কিছুই নাই। তাই নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস রাখতে হবে সবার আগে। মনে রাখতে হবে জীবনটা আপনারে একার নয়। আপনার সাথে জড়িয়ে আছে অনেক কিছু। আপনার পরিবার আপনার বন্ধু, আপনার ভালোবাসার মানুষটাও। আত্মহত্যা করলে তাদের কাছেও আপনি হেরে যাবেন। তাই তাদের কাছে অনত্মত নিজেকে তুলে ধরার সুযোগটি নিন। আর বিশ্বাস এবং সাহস রাখলে সব সম্ভব। একবার নয় দুবার নয়, একশবার ফেল করুন। তবুও সফলতার পেছনে ছুটেন।

কারণ সফলতার স্বাদটা যে আপনার নিতেই হবে। আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে যারা জীবনে ফেল করে তারাই বেশি সফলতা পায়। আর সে সফলতার স্বাদটা অন্যসব সফলতার চাইতে বেশি মিঠা। তাই সফলতার পেছনে ছুটেন। আত্মহত্যা নয় সফলতাই হোক আমাদের লক্ষ্য, এটাই যেন প্রতিজ্ঞা হয় আমাদের।

লেখক: প্রাবন্ধিক এবং কলাম লেখক

বিজ্ঞাপন
প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন