বিজ্ঞাপন

১১ বছরেও শেষ হয়নি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের নির্মাণ কাজ

May 9, 2023 | 9:57 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ধীর গতি বিরাজ করছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনে। প্রায় ১১ বছর পার হলেও এই প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৬৩ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪২ শতাংশ। সেই সঙ্গে বেড়েছে ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই। সর্বশেষ নির্ধারিত সময় আগামী জুনেও কাজ শেষ করা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

বিজ্ঞাপন

‘কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন’ প্রকল্পে বিরাজ করছে এমন চিত্র। এ নিয়ে গত ৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভা। সেখানে নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। সভায় প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে জানায়, করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে না উঠতেই ডলার সংকটের কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দরপত্র দিয়েও ঠিকাদার পাওয়া যায়নি। এর ফলে অতিরিক্ত সময় যাচ্ছে।

‘কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১২ সালের ৬ মার্চ একনেকে অনুমোদিত হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৭৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রথমবার ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত  মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপর দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব ২০১৮ সালের ২১ জুন একনেকে অনুমোদন পায়। প্রথম সংশোধীত প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬১১ কোটি ৮ লাখ টাকা। এরপর অনুমোদিত মেয়াদ ধরা হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই প্রকল্পের আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয়ের প্রস্তাব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অনুমোদন দেন। মেয়াদ ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এতেও শেষ হয়নি কাজ। এ পর্যায়ে ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর একনেকে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধিত ব্যয় ধথরা হয় ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।

পিআইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান, গত বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত ২২৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ আর্থিক অগ্রগতি মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৪২ শতাংশ। তবে ভৌত কাজের অগ্রগতি ৬৩ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের আরএডিপিতে (সংশোধিত এডিপি) এ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ৩৭৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

সভায় জানানো হয়, চলতি বছরের জুনে এ প্রকল্পটি সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত। গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পিআইসি সভায় হাসপাতালের আউট পেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট (ওপিডি) এবং মেডিসিন (পুরুষ ও মহিলা) বিভাগ ও শিশু বিবাগ স্বল্প পরিসরে চলতি বছরের এপ্রিলে চালু করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংযোগ, পানি সরবরাহ ও নিস্কাশন এবং পয়নিস্কাশন ব্যবস্থা শেষ না হওয়ায় সীমিত আকারে হাসপাতাল ভবন চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।’

কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে ইলেট্রিক্যাল, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিস্কাশন কাজ মার্চের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হয়নি। এসব কাজ শেষ করতে পারায় সভাপতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। চলতি বছরের জুনে অবশিষ্ট কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশ দেন।’

বিজ্ঞাপন

প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে হাসপাতাল ভবন হস্তান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক বিল প্রকল্প থেকে নির্বাহ করা সম্ভব হবে না। চলতি বছরের জুনে বৈদ্যুতিক বিল গণপূর্ত বিভাগ ও স্বাস্থ্য অধিদফদরের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্প থেকে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। চলতি বছরের জুলাইয়ে রাজস্ব বাজেট থেকে বৈদ্যুতিক বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের আরডিপিপির প্যাকেজ নং ৬.৬ এর গ, ক্রমিক ৩ থেকে ১০ পর্যন্ত ইজিপির মাধ্যমে পরপর দুইবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও মানসম্মত যন্ত্রপাতি না পাওয়ায় পুনরায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক না থাকায় হাসপাতালের জন্য জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা যাচ্ছে না। দ্রুত হাসপাতালের পরিচালক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন:

সারাবাংলা/জেজে/এমও

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন