বিজ্ঞাপন

দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলর পাবেন ২ কোটি, এমপিরা পাবেন ৪ কোটি টাকা

May 16, 2023 | 7:22 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আগামী অর্থবছর থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব কাউন্সিলর ও এই এলাকার অন্তর্ভুক্ত সাত সংসদ সদস্যের অনুকূলে উন্নয়ন বাবদ দ্বিগুণ বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৬ মে) ডিএসসিসি নগর ভবনের মেয়র হানিফ মিলনায়তনে ‘উন্নত ঢাকার উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ৩ বছর’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র এ ঘোষণা দেন।

মেয়র বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজস্ব বাজেটও বাড়ছে। বর্তমানে কাউন্সিলরদের বরাদ্দ এক কোটি টাকা থেকে দুই কোটি করা হবে আর সংসদ সদস্যদের বরাদ্দ দুই কোটি টাকা থেকে চার কোটি টাকা হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ৩ বছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সার্বিক উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন মেয়র ফজলে নূর তাপস।

বিজ্ঞাপন

মেয়র বলেন, “নির্বাচনের আগে ঢাকা মহানগরীকে একটি বাসযোগ্য, আধুনিক ও মর্যাদাপূর্ণ শহর হিসেবে গড়ে তুলতে আমি ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা ও উন্নত ঢাকার রূপরেখা ঘোষণা করেছিলাম। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ‘সুন্দর ঢাকা’ বিনির্মাণে বিগত ৩ বছরে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে বহু উদ্যোগ। এ ছাড়া ‘সুন্দর ঢাকা’ গড়ে তোলার অগ্রযাত্রায় গ্রহণ করা হয়েছে সুদূরপ্রসারী ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা। আমরা ঢাকাকে রাসায়নিক গুদাম নয়, ঐতিহ্যের নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। করোনার দুই বছর বাদ দিলে আমরা সময় পেয়েছি এক বছর। এর মধ্যেই আমরা যথেষ্ট কাজ করেছি।”

মেয়র দাবি করেন জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন, খাল-নর্দমা- বক্স কালভার্ট থেকে বর্জ্য ও পলি অপসারণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আধুনিকায়ন, আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুদ্ধার এবং খাল সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টির মতো কার্যক্রমের সুফল নগরবাসী এরইমধ্যে পাওয়া আরম্ভ করেছে।

শেখ ফজলে নুর তাপস বলেন, ‘আপনারা জানেন, ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর শাখা-প্রশাখাসহ ১১টি অচল খাল, বর্জ্যে জমাটবদ্ধ ৫টি বক্স কালভার্ট ও প্রায় ২০০ কিমি দৈর্ঘ্যের নর্দমার মালিকানা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দায়িত্বভার গ্রহণের পরদিন থেকে আমরা এ সব খাল, বক্স কালভার্ট ও নর্দমা হতে বর্জ্য অপসারণ, সীমানা নির্ধারণ ও দখলমুক্তি কার্যক্রম শুরু করি। এ সব জলাশয় থেকে ২০২১ সালে ৮ লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন, ২০২২ সালে ৪ লক্ষ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০২৩ সালে (এপ্রিল মাস পর্যন্ত) ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য ও পলি অপসারণ করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

মেয়র বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকা তলিয়ে যেত। জলনিমগ্ন হয়ে পড়ত নগরীর প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা। কিন্তু দায়িত্বভার গ্রহণের পর জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই। জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজস্ব অর্থায়নে ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিগত ৩ বছরে আমরা ১৩৬টি স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করি। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে ঢাকা শহর এখন আর ডুবে যায় না। ধানমন্ডি-২৭, পলাশী মোড়, আজিমপুর মোড়, শান্তিনগর, রাজারবাগ, বাংলাদেশ সচিবালয়, মতিঝিল এলাকা বিশেষত নটরডেম কলেজের সামনের অংশ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের সামনের রাস্তা, সূত্রাপুর শিল্পাঞ্চল এখন আর কোমর পানিতে ডুবে যায় না।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন শ্যামপুর, মান্ডা, জিরানী ও কালুনগর— এই চার খালের বর্জ্য ও পলি অপসারণ এবং খাল সংস্কার করে নান্দনিক পরিবেশ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৮৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া এই চারটি খালের নকশা, অঙ্কন ও জরিপ কাজ চলমান রয়েছে। একইসঙ্গে এ সব খাল থেকে বর্জ্য অপসারণ ও ভূমি উন্নয়নের লক্ষ্যে দরপত্র কার্যক্রম শেষ হয়েছে।

মেয়র বলেন, ‘কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ থেকে রায়েরবাজার পর্যন্ত প্রায় সাত কিমি দৈর্ঘ্য জুড়ে বিস্তৃত বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল। তদারকির অভাবে এই চ্যানেলের প্রায় পুরোটাই ভূমিদস্যুদের কব্জায় চলে গিয়েছিল। ভূমিদস্যুদের থাবায় ম্যাটাডোর বলপেন ও পান্না ব্যাটারির মতো বহু বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক বহুতল ভবন নির্মাণের ফলে এই চ্যানেল অনেকটা সরু নালায় পরিণত হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চ্যানেলের বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়াও ডিপিপি প্রণয়নের লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ এবং চ্যানেলের মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে সামগ্রিক কর্মকাণ্ড জোর কদমে এগিয়ে চলেছে।’

বিগত ৩ বছরে আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন দাবি করে মেয়র বলেন, ‘আমাদের সামগ্রিক কার্যক্রমের ফলে বিগত ৩ বছর সময়ে ১০০ শতাংশ উন্মুক্ত বর্জ্য ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ বর্জ্য সরাসরি অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিগত ৩ বছরে ৩৬টি ওয়ার্ডে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণের ফলে বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৮-তে উন্নীত হয়েছে। অথচ আমার দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল মাত্র ২২। এছাড়াও বাকি ওয়ার্ডগুলোতেও অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণের সুবিশাল কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। দক্ষিণ সিটির অন্তর্ভুক্ত ৭৫টি ওয়ার্ডে প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারী নিবন্ধনের মাধ্যমে সব বাসা-বাড়ি ও স্থাপনা হতে দৈনিক ভিত্তিতে বর্জ্য সংগ্রহ নিশ্চিত করেছি। বর্তমানে দৈনন্দিন ভিত্তিতে রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে সব রাস্তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাসিকভিত্তিতে দুইবার সব উন্মুক্ত নর্দমা পরিষ্কার করা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র জানান, তারা কিউলেক্স মশা শতভাগ নির্মূলে সক্ষম হয়েছেন তাই ঢাকাবাসী নির্বিঘ্নে ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ পড়তে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া রোজার মধ্যে তারাবি নামাজও নির্বিঘ্নে শেষ করেছেন। কেউ মশা নিয়ে অভিযোগও করেনি।

এ ছাড়াও মেয়র বলেন, ‘এ সময় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দুই লাখ রিকশা নিবন্ধন দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা অপসারণ বা অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা যুক্ত করতে কমিটি তৈরি করা হয়েছে যারা এটি নিয়ে কাজ করবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘ছাদবাগান কোনো সমাধান নয়। অধিকাংশ মশা হয় এখানে। আমরা উদ্ধারকৃত খাল ও আদি বুড়িগঙ্গার দুই পাড়ে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিচ্ছি। আমরা দক্ষিণ সিটি এলাকায় দুই লাখ গাছ লাগিয়েছি। উন্নয়ন কাজের জন্য বাধ্য হয়ে কিছু গাছ কাটা পড়ছে। তবে বিনিময়ে একটির জায়গায় তিনটি গাছ লাগানো হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ কাউন্সিলরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/আরএফ/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন