বিজ্ঞাপন

দেশের এক তৃতীয়াংশ কন্যাশিশুর বিয়ে ১৫ বছরের মধ্যে

June 22, 2023 | 11:00 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক জরিপে দেখা গেছে দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ (৭২ শতাংশ) কন্যাশিশুর বিয়ে হচ্ছে ১৫ বছরের মধ্যে। এই জরিপে অভিভাবকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৩-১৫ বছর বয়সী কন্যাশিশুরা সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ের শিকার হয়, যা মোট বাল্যবিয়ের ৭২ শতাংশ। অন্যদিকে বাল্য বিয়ের শিকার ৫৭ শতাংশ কন্যাশিশুর বিয়ে ১২-১৫ বছরের মধ্যে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জরিপে ৮ বিভাগের ৩৭ টি জেলা এবং সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ২০৬০ জনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ‘বাল্যবিয়ের কারণ ও সামাজিক অভিঘাত’— বিষয়ক সমীক্ষার তথ্য প্রকাশ করা হয়। সমীক্ষার তথ্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী ও আইনজীবী ফাতেমা খাতুন।

মহিলা পরিষদ থেকে জানানো হয়, প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে তারা দেখেছেন নিম্নবিত্ত পরিবারে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে দেওয়া হয়। তবে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতেও বাল্যবিয়ের হার প্রায় এক চতুর্থাংশ, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাও এ ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলেছেন। বাল্যবিয়ে দেওয়া অভিভাবকদের মধ্যে প্রায় ৩১% (২৬০ জন) নিরক্ষর, ৪১% (৩৪৭ জন) অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন, ২৬% (২১৭জন) স্বল্প শিক্ষিত এবং শিক্ষিত ৪% (৩৩ জন)।

বিজ্ঞাপন

জরিপে প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা গেছে, ৫৬% অভিভাবক বাল্যবিয়ের আইন সম্পর্কে অবগত হয়েও আইন অমান্য করে নানাভাবে তাদের কন্যাশিশুর বিয়ে দিয়েছেন। এ বিয়েগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ অর্থাৎ ৫৮% বিয়েই রেজিস্ট্রি ছাড়া সম্পন্ন করা হয়েছে এবং বিয়ের সময় কাজীকে জন্মসনদ প্রদান করার কথা থাকলেও শতকরা ৫৪% অভিভাবক কাজীকে তার মেয়ের জন্মসনদ প্রদান করেনি। জরিপকালে ৩৬% ম্যারেজ রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন সমাজে বাল্য বিয়ের হার মাত্র ১০%। মাত্র ৩% ম্যারেজ রেজিস্ট্রার বলেছেন দেশে বাল্য বিয়ের হার ৫০%। যা সমাজের বাস্তব চিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করে মহিলা পরিষদ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব মো. আব্দুল আজিজ বলেন, ‘অনেক আইন থাকলেও বাস্তব অবস্থার কারণে তা প্রয়োগ করা যায় না। গ্রামে অত্যন্ত দরিদ্রদের মধ্যে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেশি। বংশানুক্রমে কাজীর ছেলে কাজী হয়, এটি বন্ধ করা গেলে বাল্যবিয়ে বন্ধে সুফল আসত। কাজীরা তাদের সুযোগ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে। এজন্য প্রশাসনকে জোরালো ভূমিকা পালনে জনপ্রতিনিধিদের তৎপর হতে হবে। কিশোরী ক্লাবগুলোর মাধ্যমে বাল্যবিয়ে বন্ধে কিশোরীদের সচেতন করতে হবে।’

তিনি বাল্যবিয়ে বন্ধে কিশোর-কিশোরী, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ও সচেতনমূলক কর্মসূচী গ্রহনের আহ্বান জানান।

বিজ্ঞাপন

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘বাল্যবিয়ের প্রবণতায় জেলাভিত্তিক কোন পার্থক্য আছে কিনা এটা মূল রিপোর্টে আনা যেতে পারে, পালিয়ে বিয়ে করায় বাল্যবিয়ে বাড়ছে– এটাকে জনপ্রতিনিধিদের অজুহাত হিসেবে দেখানো বন্ধ করতে হবে। বাল্যবিয়ে দিলে কন্যা উপবৃত্তি পাবে না এমন শর্ত আরোপ করা যেতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে কিশোরী ক্লাব মনিটরিং করতে হবে। বাল্যবিয়ে বন্ধে তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি দূর করতে সরকারি সংস্থাকে উদ্যোগ নিতে হবে ‘

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সমীক্ষার প্রেক্ষাপট আলোচনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম।

স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘বাল্যবিয়ে নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে আছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বহুমুখী পদক্ষেপ থাকা স্বত্তেও কেন বাল্যবিয়ে বাড়ছে এবং বাল্যবিয়ের কারণে তৈরি হওয়া অভিঘাতগুলোকে সমাজ কীভাবে দেখছে তা পর্যালোচনার জন্য আজকের সভার আয়োজন।’

সমীক্ষার প্রেক্ষাপট আলোচনায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, “নারীর মানবাধিকার নিয়ে কাজ করতে গেলে নানা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে আসে। এর প্রেক্ষিতে সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। করোনাকালে ‘বাল্যবিয়ের কারণ ও সামাজিক অভিঘাত’- বিষয়ক সমীক্ষার জন্য মাঠ পর্যায়ে নারীর সহিংসতার অবস্থানের দিকটি জেলায় ও তৃণমূলে থাকা সংগঠনের পাঠ্যচক্রের সদস্যরা তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে তুলে এনেছে ।”

বিজ্ঞাপন

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদা রেহানা বেগম বলেন, ‘তৃণমূলের সাধারণ নারীরা তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছে। চার দশকের কাজের আলোকে দেখা গেছে নারীর প্রতি সহিংসতায় বাল্যবিয়ে মূল কারণ।’

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বড় বাধা। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কিশোরীরা ভূমিকা পালন করছে যা অত্যন্ত সীমিত। শিক্ষার মান উন্নত করার সাথে সাথে শিক্ষাকে পণ্য হওয়া থেকে মুক্ত করে একটি মানবিক শিক্ষা কিশোর-কিশোরীদের দিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব মো. আব্দুল আজিজ, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, অ্যাম্বাসী অব সুইডেন, বাংলাদেশ এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার রেহানা খান। সম্মানীত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইজিডির প্রাকটিস অ্যান্ড হেড অব জেন্ডার অ্যান্ড সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশন ক্লাস্টার এর সিনিয়র ফেলো; কেয়ার বাংলাদেশ-এর উইমেন এন্ড গার্লস এমপাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রামের অ্যাক্টিং ডিরেক্টর রওনক জাহান, এবং জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাসিমা আক্তার জলিসহ অনেকে।

সারাবাংলা/আরএফ/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন