বিজ্ঞাপন

জ্যাক মা’র সফর নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি

July 3, 2023 | 10:57 pm

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলীবাবার সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা সম্প্রতি আকস্মিক সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। গুলশানের একটি হোটেলে অবস্থান করেছিলেন কয়েক ঘন্টাও। তবে এসময় তিনি কার সঙ্গে কী বিষয়ে বৈঠক করেছেন সে সম্পর্কে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

ধারণা করা হচ্ছে— আলীবাবার বিনিয়োগ রয়েছে এমন দুই প্রতিষ্ঠান দারাজ ও বিকাশের সঙ্গে জ্যাক মা’র বৈঠক হয়ে থাকতে পারে। যদিও এই দুই প্রতিষ্ঠানের কেউ-ই তাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করছে না। সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকারের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক হওয়ার তথ্যও এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। সবমিলিয়ে এই সফরের মধ্য দিয়ে দেশে বড় কোনো বিনিয়োগ আসছে কি-না তা এখনও জানা যায়নি। সফরটি জ্যাক মা’র একান্তই ব্যক্তিগত সফর কিনা তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিশ্চিত হওয়া যায়নি দারাজ ও বিকাশের বাইরে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে জ্যাক মা নতুন বিনিয়োগ করছেন কিনা সেসম্পর্কেও।

জানা গেছে, বাংলাদেশে আলীবাবার বিনিয়োগ রয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজ ও মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বিকাশ-এ। এরমধ্যে দারাজের প্রায় পুরোটাই কিনে নিয়েছে আলীবাবা। কেবলমাত্র প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়নি। তবে বিকাশে আলীবাবার বিনিয়োগ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানা যায়নি।

জানতে চাইলে বিকাশের কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে তার (জ্যাক মা) কোনো বৈঠক হয়নি। বিকাশের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দারাজের একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘জ্যাক মা’র সঙ্গে দারাজের কোনো বৈঠক হয়নি। তার বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে সরকারের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা জেনে থাকতে পারেন। উনি চলে যাওয়ার পর আমরা জেনেছি, উনি বাংলাদেশে এসেছিলেন, রেনেসাঁ হোটেলে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘দারাজের শতভাগ শেয়ার এখন আলীবাবার। কেবলমাত্র দারাজের নাম পরিবর্তন হয়নি। দারাজের পুরো কার্যক্রমই আলীবাবা দেখছে। তবে জ্যাক মার সঙ্গে আলীবাবার এখন সেই অর্থে সম্পর্ক নেই। চীনে জ্যাক মা এখন অনেকটাই কোণঠাসা। উনি হয়ত কোনো ব্যবসা সম্প্রসারণে বাংলাদেশে এসে থাকতে পারেন। কারণ তিনি তার অর্থ এখন চীনের বাইরে বিনিয়োগ করছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার সারাবাংলাকে বলেন, ‘জ্যাক মা’র সফর সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না। উনি এসেছেন এটি জেনে আমরা বিষ্মিত হয়েছি।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে দারাজের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তবে এখনও দারাজের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের অন্য কোন সংগঠনেরও জ্যাক মা’র সফর সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ জানান, তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। জ্যাক মা’র সফর সম্পর্কে তার কিছু জানা নেই।

সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জ্যাক মা’র বৈঠক হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জ্যাক মা বাংলাদেশে এসেছেন কিনা এ বিষয়ে আমার জানা নেই। বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আমাদের সঙ্গে কোন বৈঠক হয়নি।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘জ্যাক মা’র সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর (জুনাইদ আহমেদ পলক) কোনো বৈঠক হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হলে সেটি আমাদের জানার কথা।’

জ্যাক মা’র সফর সম্পর্কে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সারাবাংলাকে বলেন, ‘তার সফর সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না। আমাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক বা যোগাযোগ হয়নি। তবে তার সফরকে আমরা খুবই ইতিবাচকভাবে দেখছি। বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ এখন সবার কাছে পছন্দের জায়গা। আইসিটি খাতের শীর্ষ ধনী একজন ব্যবসায়ী বাংলাদেশে ঘুরে গিয়েছেন। হয়ত ব্যবসায়িক দিক মাথায় রেখেই তিনি এসেছিলেন। এটি দেশের আইসিটি খাতের জন্যে ইতিবাচক খবর, কারণ বিকাশ ও দারাজে আলীবাবার বিনিয়োগ রয়েছে। হয়ত এ দুটি প্রতিষ্ঠানসহ আরও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ আসতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিনি কেন এসেছিলেন, কী কারণে এসেছিলেন, কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, সে সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। তবে আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি।’

জানা গেছে, গত ২৬ জন একটি চার্টার্ড বিমানে দুপুরের দিকে ঢাকা নামেন জ্যাক মা। অবস্থান করেন গুলশানের হোটেল রেনেসায়। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান রেনেসাঁ হোটেলের কর্মকর্তারা। কোনো কোনো সূত্র বলছে, পরদিন দুপুরে তিনি নেপালের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। তবে ইয়াহু নিউজ জানায়, গত ২৭ জুন নেপালের কাঠমান্ডুতে যাওয়ার আগে ঢাকায় সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি করেছেন ই-কর্মাস জায়ান্ট আলীবাবার সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

এদিকে, হোটেল রেনেসাঁয় পৌঁছালে জ্যাক মা’কে অভ্যর্থনা জানায় কর্তৃপক্ষ, সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। নেপালের সংবাদ মাধ্যম জানায়, জ্যাক মা ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুতে যান। সেখানেও তিনি অল্প সময়ের জন্য অবস্থান করেন। সঙ্গে ছিল পাঁচ চীনা, এক ডেনিশ ও এক মার্কিন নাগরিকসহ সাত ব্যবসায়ীর প্রতিনিধি দল। তাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল পাকিস্তান। নেপাল ও পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম জ্যাক মা’র ওই সফরকে প্রাইভেট ও ব্যবসায়িক বলেও উল্লেখ করেছে।

প্রসঙ্গত, প্রযুক্তি ও ই-কমার্স উদ্যোক্তা জ্যাক মা চীনের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি, মোট সম্পদের পরিমাণ তিন হাজার ৪৫০ কোটি ডলারের বেশি। তিনি বিশ্বের ৩৯তম ধনী ব্যক্তি। ২০২০ সালে চীনা নীতির সমালোচনার পর প্রকাশ্যে তার উপস্থিতি হ্রাস পায়।

সারাবাংলা/ইএইচটি/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন