বিজ্ঞাপন

নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথে ফের শক্তি দেখাল আ.লীগ

July 12, 2023 | 10:45 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঘনিয়ে আসছে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। রাজধানীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিও সমাবেশ করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সমাবেশের দিন ফের সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দিল টানা মেয়াদে থাকা আওয়ামী লীগ।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির এক দফার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে অনড় থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। দলটির নেতারা বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ীই আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ধারাবাবাহিক উন্নয়ন-অর্জনের অগ্রযাত্রা যেকোনো মূল্যে তারা ধরে রাখবে। তবে অতীতের মতো এবারও যদি কেউ রাজপথে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করে তা শক্ত হাতে প্রতিরোধ করা হবে।

বুধবার (১২ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে এমন অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন দলটির নেতারা। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য, অপরাজনীতি ও অব্যাহত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে’ মহানগর আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

এদিন দুপুর ১টার পর থেকে রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা এসে সমাবেশস্থলে যোগ দেন। অপরদিকে, প্রায় একই সময় ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চেয়ে একদফা দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে টানা মেয়াদে ক্ষমতার বাইরের দলটি।

আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে নাক গলানো বিদেশি বন্ধুদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি বন্ধুদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা চান সুষ্ঠু, অবাধ, ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন; আমাদেরও লক্ষ্য ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন। কিন্তু এই ফ্রি ফেয়ার ইলেকশনকে যারা বাধা দিতে আসবে আমরা তাদের প্রতিহত করব।’ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন পর্যন্ত খেলা চলবে। মাঠ ছাড়বেন না। যখনই ডাক দেব, তখনই আপনারা মাঠে চলে আসবেন।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। শৃঙ্খলা থাকতে হবে। এত নেতা আমার দরকার নেই। একটা মিটিংয়ে এত বক্তাও আমার দরকার নেই। নিয়ম করে নেবেন, এই মিটিংয়ে এরা বলবে, ওই মিটিংয়ে ওরা বলবে। একটা মিটিংয়ে সব নেতাকে বক্তৃতা দিতে দেওয়া ঠিক না। এতে সামনের লোক ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে চলে যাবে; এটা হয় না।’

বিজ্ঞাপন

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেকে কষ্ট করে এসেছেন। দূর-দুরান্ত থেকে আমরা আনতে পারিনি। আমাদের হাতে সময় ছিল না। ঢাকা এবং আশপাশের নেতাকর্মীরা মূলত ২৪ ঘণ্টার নোটিশে এখানে এসেছেন। তারপরও উপস্থিতি দেখলেন? এরই নাম আওয়ামী লীগ। খেলা হবে, আওয়ামী লীগ যখন খেলতে নামবে তখন কোনো অপশক্তি সামনে দাঁড়াতে পারবে না।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদেরও দফা একটা, শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই হবে। শেখ হাসিনাই সেখানে নেতৃত্ব দেবেন। তাদের এক দফা, আমাদেরও এক দফা- সংবিধান সম্মত নির্বাচন। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘এই শান্তি সমাবেশ লাখ লাখ লোকের সমাবেশে পরিণত হয়েছে। ওরা (বিএনপি) এক কিলোমিটার দূরে যে সমাবেশ করছে ওদের চেহারা বাংলার জনগণ জানে। ওদের প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়া এই রাষ্ট্রকে একটি বিশৃঙ্খল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। তার পরম্পরায় যারা বিএনপি নামক দলটির দায়িত্ব গ্রহণ করেছে তাদের ইতিহাসও একইরকম।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, এক দফা কিসের দফা? মূলত তাদের এই দেশের উন্নয়ন ওদের সহ্য হয় না। এই দেশের অগ্রগতি সহ্য হয় না। এই দেশের মানুষ খেয়ে-পড়ে উন্নত বাংলাদেশ দেখুক, এটি ওদের সহ্য হয় না। কারণ, ওদের জন্মই হয়েছিল স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য। কাজেই ওরা নির্বাচন বর্জন করবে। ওরা নির্বাচন প্রতিহতের চেষ্টা করেছিল ২০১৪ সালে। ওই সময় তারা সারাদেশে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, রেললাইন উপড়ে ফেলেছে, জীবন্ত মানুষকে আগুনে পুড়ে মেরেছে। ওরা মানুষ হত্যাকারীর দল। ওরা আবার নেমেছে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে প্রতিহত করার জন্য।’

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নানক আরও বলেন, ‘আজকে আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, যে হাতে আগুন দেবে, সে হাত ভেঙে দেওয়া হবে। যে হাতে বোমা নিক্ষেপ করবে, সে হাত পুড়িয়ে দেওয়া হবে। সেই জানান দেওয়ার জন্যই আমরা এখানে ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তি সমাবেশ করছি।’

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাইরে নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। স্বাধীনতা বিরোধীদের এই দেশ থেকে বিতাড়িত করা ছাড়া শান্তি আসবে না।’

সমাবেশে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি আজ পাগলা কুকুরের মতো হয়ে গেছে। তারা যে সমাবেশ করছে সেই সমাবেশের উদ্দেশ্যে কি? দেশে একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি করা। সেই সমাবেশের উদ্দেশ্য গণ্ডগোল পাকিয়ে ফের মানুষের উপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা। দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে একটি বিশেষ ধরনের হামিদ কারজাই মার্কা সরকার কায়েম করা হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য।’

তিনি বলেন, ‘ওরা এক দফার আন্দোলন মাঝে-মধ্যেই ঘোষণা করে। ২০১৩ সালে বেগম জিয়া এক দফা ঘোষণা করেছিল। সরকারের পতন ছাড়া নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন হওয়ার পর আবার ২০১৪ সালে এক দফা ঘোষণা করেছিল। সরকারকে বিদায় নিতে হবে। সরকার বিদায় নেয়নি। ২০১৫ সালে খালেদা জিয়া ফের এক দফা ঘোষণা করেছিল সরকারকে টেনে হিঁচড়ে নামানোর জন্য। সরকারকে নামাতে পারে নাই। সরকার পাঁচ বছর টিকেছে। আর গত নির্বাচনের পর ফের এক দফা ঘোষণা করেছিল। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবে। সেই এক দফাও মাঠে মাারা গেছে।’

গত ডিসেম্বরেও এক দফা ঘোষণা করেছিল জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এক দফার আন্দোলনও বেলুনের মতো ফুটে গেছিল। বেলুন ফুটে যাওয়ার মত বিএনপির এক দফাও ফুটে গেছে। এইবারও ফুটে যাবে, আর এই দফা কোনোদিন বাস্তবায়ন হবে না। বিএনপির এক দফা হচ্ছে সাপের চামড়া (খোলস) বদলানোর মতো।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, আব্দুর রহমান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা।

সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য দেন- ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশস্থলে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন