বিজ্ঞাপন

বান্ধবীর বাসায় বাবুলের ‘যাতায়াতের’ তথ্য দিলেন প্রহরী

July 17, 2023 | 7:57 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার বান্ধবী হিসেবে আলোচিত কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারীর বাসার প্রহরী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যে তিনি জানিয়েছেন, ওই নারীর বাসায় বাবুল আক্তারের যাতায়াত ছিল। তিনি দেখেছেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৭ জুলাই) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে তিনি সাক্ষ্য দেন। এ সময় মামলার আসামি বাবুল আক্তার আদালতে হাজির ছিলেন।

সাক্ষী সরোয়ার আলম (৪৩) কক্সবাজার সদরের বাহারছড়ার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সাক্ষ্যে তিনি জানান, ২০০০ সালে তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র কক্সবাজার কার্যালয়ে প্রহরী হিসেবে যোগ দেন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি ইউএনএইচসিআর কার্যালয়ে স্যানিটারি মিস্ত্রি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

একই কার্যালয়ের আওতায় থেকে তিনি ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কক্সবাজার শহরে সংসদ সদস্য আশেকউল্লাহ রফিকের মালিকানাধীন ভবনে প্রহরীর দায়িত্ব পালন করেন, যে ভবনের চারতলায় ইউএনএইচসিআর’র ওই নারী কর্মকর্তা থাকতেন।

বিজ্ঞাপন

সাক্ষ্যে সরোয়ার আলম বলেন, ‘২০১৩ কি ২০১৪ সালে, আমাকে একদিন ম্যাডাম এসে বলেন, আমার একজন বন্ধু আসবে। আমি জিজ্ঞেস করি, কি নাম? তখন ম্যাডাম আমাকে বলেন, এসপি বাবুল আক্তার। বিকেল ৫টা কি সাড়ে পাঁচটার দিকে উনি আমাকে বলেন। আর সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাবুল আক্তার আসেন।’

সরোয়ার বলতে থাকেন, ‘তিনি এসে দরজায় (গেইটে) টোকা দিলেন। আমি দেয়ালের ওপর দিয়ে দেখলাম, একজন লোক। গেইট খুলে জিজ্ঞেস করলাম, কার কাছে যাবেন? তিনি ম্যাডামের কাছে যাবেন জানালেন। আমি বলি, এখন যেতে পারবেন না। উনি ওপরে উঠে যেতে চাইলে আমি ম্যাডামের পারমিশন নেওয়ার জন্য উনাকে বাধা দিই। তখন উনি বললেন, আপনি আমাকে চেনেন? আমি এসপি বাবুল আক্তার।’

সরোয়ার আলম আরও বলেন, ‘পরে আমি উনাকে বলি ম্যাডামকে কল দেওয়ার। কল দেয়ার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে ম্যাডাম নিচে নেমে আসেন। তারপর উনারা একটি কালো রঙের নোহা গাড়ি (মাইক্রোবাস) করে বেরিয়ে যান। রাত ১০টায় আমি ডিউটি শেষে বেরিয়ে যায়।’

বিজ্ঞাপন

এর পর আর বাবুল আক্তারের সঙ্গে কোনোদিন দেখা হয়নি জানিয়ে সরোয়ার বলেন, ‘দুই দিন পর নাইট ডিউটির সময় অন্য গার্ডরা আমাকে বলেন, এখানে বাবুল আক্তার আসেন। আমাকে তারা বিষয়টি খেয়াল রাখতে বলে।’

আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার আগে পুলিশের কাছেও জবানবন্দি দিয়ে সরোয়ার একই কথা বলেছিলেন বলে সাক্ষ্যে জানান। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সরোয়ার আলমকে জেরা শুরু করেন আসামি বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন। তবে জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় আদালত মামলার কার্যক্রম মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মহানগর পিপি আব্দুর রশীদ জানিয়েছেন।

একই মামলায় গত ১১ জুন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন বাবুলের বাসার গৃহসহকারী মনোয়ারা বেগম বাপ্পী ওরফে ফাতেমা ও বাবুলের বান্ধবী আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারীর বাসার ‍গৃহসহকারি পম্পি বড়ুয়া। উভয়ের সাক্ষ্যে বান্ধবীর সঙ্গে বাবুলের অনৈতিক সম্পর্ক, এ নিয়ে মিতুর সঙ্গে বাবুলের ঝগড়াসহ বিভিন্ন তথ্য উঠে আসে।

মিতু’র বাবা মোশাররফ হোসেন আদালতে সাক্ষ্যে বলেছিলেন, বান্ধবীর সঙ্গে পরকীয়ার বিষয় তাদের জানিয়ে দেওয়ায় বাবুল আক্তার মিতুর ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সাতজনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। ১০ অক্টোবর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। চলতি বছরের ১৩ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ৯ এপ্রিল থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী হিসেবে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্য দেন।

অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি করা হয়েছে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারকে। অভিযোগপত্রে আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া। আসামিদের মধ্যে শুধু মুসা পলাতক আছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন